ছাত্র হত্যাসহ ডজনখানেক মামলার আসামি তাজু-আজিজ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সাভার
- আমিনুল ইসলাম
- ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৪
১৫ বছর সাভার-হেমায়েতপুর দাপিয়ে বেড়িয়েছে যুবলীগ নেতা তাজুল ইসলাম তাজু। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, হত্যাচেষ্টাসহ ডজনখানেক মামলার আসামি সে। জেলেও গিয়েছে একাধিকবার। সেই তাজু এখন বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চালাচ্ছে দৌরাত্ম্য। গ্রেফতার না হয়ে উল্টো নিয়ন্ত্রণ করছে এলাকার চাঁদাবাজি, ডিস-ইন্টারনেট ব্যবসা, জমি দখলসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তার নামে। একইভাবে ভোলপাল্টে বেষম্যবিরোধী আন্দোলনে দুইজন ছাত্র হত্যা মামলার আসামি কৃষকলীগ নেতা আজিজুর রহমান আজিজের বিরুদ্ধেও বিএনপির নাম করে অপকর্ম চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগিরা বলছেন, ছাত্র হত্যার বিচার চেয়ে করা মামলার আসামি আজিজসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের পরিচয় বদলে রাতারাতি বিএনপির শেল্টারে চলে গেছে। কেউ কেউ থানা পুলিশের ছত্রছায়ায় ঘুরছে। এটা খুবই পীড়াদায়ক।
সাভার তেঁতুলঝোড়া ৬নং ওয়ার্ডের যুবলীগ কর্মী তাজুল ইসলাম তাজু ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সাভার থানা শাখার কার্যকরী কমিটির সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ।
বিগত অপরাধের মামলা তো রয়েছেই, সাম্প্রতিক ছাত্র হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি হলেও ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে। হত্যা, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে ছয়টি মামলার এজহারনামীয় আসামি তাজু। গত কয়েক বছর সাভার উপজেলার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকতের একান্ত সহযোগী ও অর্থের জোগানদাতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের ভোল্ট পাল্টে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে ভাই বিএনপির নামধারী নেতা মো: জহিরের মদদে নৈরাজ্য ও নানা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৫-০৬ সালে অস্ত্র ও মাদকসহ যৌথবাহিনীর হাতে আটকের পর দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হয় তাজুকে। এ ছাড়াও ২০১৪ সালে অন্য একটি মাদক মামলায় পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে ছিল সে।
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এলাকার বিভিন্ন শাখা রাস্তা আটকে এবং দোকান থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে তাজুল ইসলাম। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়া আন্তত ২০-২৫ জনকে পিটিয়ে আহত করেছে সে। এ ছাড়াও ভাই জহির ও সামসুলের সহযোগিতায় এলাকার ডিস, ব্রডব্যান্ড, ট্রাক, ঠিকাদারি ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবসা নিজের দখলে নিয়েছে। সরকার পতনের পরও বেপরোয়া তাজুল গত ১৮ আগস্ট এলাকার ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করে। এ অভিযোগে সাভার মডেল থানায় তাজুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন আল আমিন নামে একজন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট সকালে সাভারের রানা প্লাজার সামনে বেসরকারি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন হত্যা মামলার (সাভার মডেল থানার মামলা নং-৪, তারিখ ১৯-৯-২০২৪) ১৫৬নং আসামি তাজুল। এই সাজ্জাদকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে আসামিরা। ভুক্তভোগী সাজ্জাদের বাবার দাবি, সাজ্জাদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত তাজু। অথচ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না।
অন্য দিকে হত্যা, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসা, জমিদখল, হত্যাচেষ্টা কিংবা প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে থানা ও আদালতে ১২টি মামলা থাকলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে জাতীয় শ্রমিক লীগের সাভার থানা শাখার কার্যকরী কমিটির সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে দুই শিক্ষার্থী মিঠু ও সাজ্জাদ হত্যা মামলার আসামি আজিজ। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে হত্যাচেষ্টা, নারী নির্যাতন, প্রতারণা ও মাদক ব্যবসার অনেক অভিযোগ।
ছাত্র হত্যা মামলার বাদি একজন বাবা শাহজাহান ইসলাম বলেন, সংবাদ পাচ্ছি মামলার অধিকাংশ আসামিই এখনো পলাতক। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে করা মামলার আসামি আজিজসহ বেশ কয়েকজন এখন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাম বদলে রাতারাতি বিএনপির শেল্টারে চলে গেছেন। কেউ কেউ থানা পুলিশের ছত্রছায়ায় ঘুরছেন। এটা খুবই পীড়াদায়ক। আমি ছেলে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আসামি পালাতে পারে কিন্তু রাজনৈতিক ভোল পাল্টে বিএনপি-পুলিশের শেল্টারে এলাকাতেই ঘুরবে এটা মানা যায় না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার থানার ওসি মো: জুয়েল মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামিসহ কোনো আসামিকেই ছাড় দেয়া হবে না। প্রত্যেকটা আসামিকে গ্রেফতারের জন্য আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা