০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বগুড়ার শেরপুরে করতোয়া নদী যেন বর্জ্যরে ভাগাড়

-


বগুড়ার শেরপুর উপজেলা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া একমাত্র নদী করতোয়া। কিন্তু ময়লা আবর্জনার স্তূপে নদীটি এখন মৃতপ্রায়। বর্ষাকালে নদীতে পানি প্রবাহমান থাকলেও বছরের অধিকাংশ সময় এ নদী থাকে শুষ্ক, পানিহীন। নদীর কোনো কোনো অংশে বর্জ্যরে কারণে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। পানির দূষণ পৌঁছেছে বিপজ্জনক স্তরে। করতোয়া নদীর দূষণ রোধে এতে ময়লা ও আবর্জনাসহ যেকোনো ধরনের বর্জ্য না ফেলার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কেউ।
সরেজমিন দেখা যায়, শেরপুর পৌরসভার বিভিন্ন বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে শেরপুরের করতোয়া নদীতে। শহরের সব ময়লা-আবর্জনা গাড়িতে করে নিয়ে ফেলা হয় এ নদীতে। যার ফলে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তূপ করতোয়া নদীর মাঝ বরাবর গিয়ে পৌঁছেছে। ভাগাড়ের কারণে নদীর দুই পাশে বসবাসকারী ওইসব এলাকার মানুষজন দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। নদীর দু’পাশে আবাদি জমি ভরাট করে নিয়মিত গড়ে উঠছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও খাবার হোটেল।
শেরপুর পৌরসভার দক্ষিণ পূর্ব পাশে করতোয়া নদীতেই সবচেয়ে বেশি বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বছরজুড়ে সেখানে রাতদিন বর্জ্য ফেলা হলেও দেখার কেউ নেই। বর্ষা মৌসুমে বর্জ্যগুলো স্রোতে ভেসে যায়। কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় শেরপুর হাটখোলার পূর্বপাশের, রণবীরবালা ঘাটপার ব্রিজের উত্তরে ও দক্ষিণ প্রান্তে বর্জ্যরে স্তূপ পাহাড়ে পরিণত হয়েছে।

শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব শেরপুর পৌরসভার। এ জন্য করতোয়া নদীতে বর্জ্য না ফেলার বিষয়টি তদারকির জন্য আদালত পৌর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে তারা উদাসীন।
নদীর দখল ও দূষণ রোধে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ না থাকায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। তাতে বগুড়া জেলা প্রশাসক, পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ২১ জনকে বিবাদি করা হয়। শুনানি শেষে আদালত একই বছর করতোয়া নদীকে অবৈধ দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। একই সাথে ওই নদীতে সব ধরনের বর্জ্য ফেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৌরসভাকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশনার প্রতি কারো ভ্রƒক্ষেপ নেই।
শেরপুরের সবচেয়ে বড় বাজার সকাল বাজার ও হাটখোলায় ড্রেনের মাধ্যমে জবাই করা গরু ছাগলের রক্ত, চর্বি, হাড় ও গোশশের টুকরা, হাঁস-মুরগি ও কবুতরের পালক এবং নাড়িভুঁড়ির পাশাপাশি মরা হাঁস-মুরগিও নদীতে ফেলা হচ্ছে। এমনকি মাদরাসা গেট ঘাটপার ব্রিজের আশপাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে সেতুর গার্ডারে মরিচা পড়তে শুরু করেছে। এ কারণে গার্ডারগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেতুর নিচ দিয়ে নদীর প্রশস্ত সীমারেখা বোঝা গেলেও নদীতে পানির প্রবাহ এখন জীর্ণ নালার মতো। আর নদীর বুকে অনেক জায়গায় দেখা যায় চাষাবাদও হচ্ছে।

মৎস্য অধিদফতর ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ দেশের বেশ কয়েকটি নদী নিয়ে একটি সমীক্ষা করে। এরমধ্যে করতোয়া নদীও রয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে করতোয়া নদীর পানিতে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মাত্রার ভারী ধাতু রয়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে, বর্জ্য পরিশোধন না করে নদীতে ফেলা। একইভাবে নদীর একাধিক অংশে পৌরসভার নালা সংযুক্ত। সেখান দিয়ে বিষাক্ত ও দূষিত বর্জ্য পড়ছে। হাটবাজার ও শহর এলাকার গৃহস্থ বর্জ্য ফেলার সবচেয়ে বড় ভাগাড়ও এই নদী। এ ছাড়া কৃষিকাজে ব্যবহৃত হওয়া মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকও সেচের পানির সাথে ধুয়ে নদীতে যাচ্ছে।
সচেতন মহলের দাবি, নদী বাঁচাতে, পরিবেশ বাঁচাতে ‘সরকারিভাবে অনেক প্রকল্প গ্রহণ ব্যবস্থা নেয়া হোক। শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: সাজিদ সিদ্দিক লিংকন বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনার পচা দুর্গন্ধে যেমন পরিবেশ দূষিত হয়, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে।’
অটোবাইকচালক মো: বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্ট্যান্ডের পাশেই নদীতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। যাত্রীদের জন্য অপেক্ষার সময় দুর্গন্ধে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। অপেক্ষার সময় যাত্রীরাও রাগ প্রকাশ করেন। দেরি হলে অনেকে নেমে যান। শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিক খান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। শেরপুরে একটি আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা যৌথভাবে আলাপ-আলোচনা চলছে। দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement