০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ও ঋণসীমা থাকছে না

- রোজার আগ পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা - ফ্যামিলি কার্ডে ১ কোটি পরিবার ১০ কেজি করে চাল পাবে
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি বিষয়ে পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। এ সময় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন : পিআইডি -

রোজাকে সামনে রেখে সাময়িকভাবে বড় বড় আমদানিকারক বা কোম্পানির ক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ও ঋণসীমা উঠিয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুর। তিনি বলেন, এটা শুধু রোজাকে সামনে রেখে সাময়িক সময়ের জন্য করা হবে। শুধু ছোলা, চিনি, গম, ভোজ্যতেলসহ চার/পাঁচটি পণ্যের জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, অন্য কোনো পণ্যের জন্য নয়। এ বিষয়ে আগামী রোববার ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হবে। এ ছাড়া আগামীতে ফ্যামিলি কার্ডে এক কোটি পরিবারকে এখন থেকে ১০ কেজি চাল দেয়া হবে। বর্তমানে পাঁচ কেজি চাল দেয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মূল্যস্ফীতি ও পণ্যের মূল্য নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তবে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি। গর্ভনর বলেন, এখন ডলারের কোনো সঙ্কট নেই, যে কেউ এলসি খুলে পণ্য আমদানি করতে পারবে।
সভা শেষে গভর্নর সাংবাদিকদের জানান , সাপ্লাই চেইন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। আমরা প্রতিটা নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে আলোচনা করেছি। সরকার বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের ডিউটি জিরো করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরো কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমাদের এলসির মার্জিন তো আগেই উঠিয়ে দিয়েছিলাম। এখন আমরা আগামী রোববার একটি সার্কুলার ইস্যু করব যে, নিত্যপণ্যের ওপর যেন কোনো মার্জিন না দেয়া হয়। আমরা উঠিয়ে দিয়েছিলাম বলতে ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করব, যাতে নিত্যপণ্যের ওপর আগামী রোজা পর্যন্ত যেন এলসি মার্জিন চার্জ না করে। এটা একটা উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত, এটা আমরা করব।
তিনি বলেন, আরেকটা জিনিস হলো আমাদের বড় বড় আমদানিকারক আছেন, যারা অনেক পণ্য আমদানি করেন। তাদের সিঙ্গেল বরোয়ার লিমিট (ঋণসীমা) একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা এড়ানো উচিত নয়, যা ব্যাংকের জন্য রিস্ক হয়ে যায়। এ জন্য ব্যাংকের ক্যাপিটারি বাড়ানো উচিত, সেটিই আমরা চেষ্টা করব। সেটি ব্যাংকিং খাত সংস্কারের মাধ্যমে করা হবে। তবে সাময়িকভাবে আগামী রোজাকে সামনে রেখে ব্যাংকের একক ঋণসীমা যেন কোনোভাবে সমস্যা না করে সে জন্য আমরা সাময়িকভাবে দুই-তিন মাসের জন্য উঠিয়ে দেবো। এটা সাময়িক সিদ্ধান্ত শুধু নিত্যপণ্যের জন্য। অন্য কিছুর ক্ষেত্রে জন্য এটা প্রযোজ্য হবে না।
আহসান এইচ মুনসুর বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাংকের একক ঋণ সীমা আগামীতে কোনোভাবে ভায়োলেট হতে দেবো না। যাতে ব্যাংকগুলো কোনো একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির ওপর না বাড়ায়। যেটা সাময়িকভাবে আমি মডিফাইড করছি। ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এটা করা হবে।
কোন কোন কোম্পানির জন্য আমদানিতে ঋণসীমা উঠিয়ে দেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা এ ধরনের পণ্য (নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য) আমদানি করবে তারা শুধু; অন্য কেউ নয়। আমাদের পাঁচ/ছয়টি বড় কোম্পানি আছে তারাই মূলত বাজারে পণ্য সরবরাহ ও নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন চিনি, ভোজ্যতেল ও গম তারাই এগুলো সরবরাহ করে। যে কেউই আমদানি করতে পারবে, এতে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে যাতে ন্যাচারাল মনোপলি না করতে পারে।
গভর্নর বলেন, ধরেন আমি আপনি পণ্য আনলে এক থেকে ১০ হাজার টন পণ্য আনব; কিন্তু তারা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টন পণ্য আনবে। তারা যে দামে কিনবে আপনারা সে দামে কিনতে পারবেন না। কারণ তাদের নিজস্বই ৩২টি জাহাজ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা পণ্য আমদানিতে ভাড়ার সুবিধা পাবে।
সাপ্লাইচেইন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চিনি, গম, ভোজ্যতেল এই পণ্যগুলো সাধারণত বড় বড় কোম্পানি আমদানি করে। আমরা প্রাইজ লেভেল কমাতে চাই না। এটা করলে ডিপ্রেশনে পড়ে যাবে যারা উৎপাদন করে তারা। আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জের কোনো সমস্যা নেই। যে কেউ এলসি খুলতে পারবে। প্রাইজ লেভেল কমানো যাবে না, পৃথিবীর কোনো দেশেই সেটি করে না। তবে আমরা মূল্যস্ফীতি কমিয়ে প্রাইজ কমিয়ে আনা চেষ্টা করব। এটা করতে দুই-তিন বছর লেগেই যায়।
তিনি আরো জানান, চালের দাম আগামীতে কমার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এ জন্য মনিটরি পলিসি টাইট করেছি। এখন আর ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮ শতাংশ হারে ঋণ নিয়ে ১২ শতাংশ হারে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারছে না। তাদের এখন ১০ শতাংশ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে তাদের কস্ট অব ফান্ড বেড়ে গেছে। এতে করে মূল্যস্ফীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
অর্থ সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে ভোজ্যতেল, তেল, পেঁয়াজ ও আলুর ওপর অনেক কর কমানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি যখন বাড়তি থাকে তখন গরিব জনগণকে সহায়তা দেয়ার জন্য আমরা ভর্তুকি মূল্যে জিনিসিপত্র দেয়ার জন্য ফ্যামিলি কার্ডের পরিমাণ অনেক বাড়িয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement