চট্টগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের হামলা, আটক ৮২
- চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানাধীন হাজারী গলিতে এক ব্যবসায়ীকে মারধর ও জিম্মির ঘটনা ঘটে। তাকে উদ্ধার করতে যাওয়া যৌথ বাহিনীর ওপর এসিড, ভারী ইট-পাটকেলসহ ভাঙা কাচের বোতল ছুড়ে মারা হয় বলে জানিয়েছে যৌথ বাহিনী। এ হামলায় সেনাবাহিনীর পাঁচ জন সদস্য ও ৯ পুলিশসহ ১৪ জন আহত হয়েছে। ঘটনার পর সন্দেহভাজন ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সচেতন সমাজ মনে করছে- ধারাবাহিক অপতৎপরতার মাধ্যমে সনাতনী কার্ড ব্যবহার করে সঙ্ঘাতের উসকানি দেয়া হচ্ছে। বুধবার দুপুরে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে পুরো ঘটনা তুলে ধরেন কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ।
লিখিত বক্তব্যে কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ওসমান আলী নামের এক ব্যক্তির ইসকনবিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর টেরীবাজার এলাকার হাজারী লেনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬০০ জন দুষ্কৃতকারী হাজারী লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যদের ছয়টি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছায়। বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মব জাস্টিস রোধে যৌথ বাহিনী ওসমান আলী ও তার ভাইকে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করে।’
উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়ে আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও একপর্যায়ে উগ্র বিশৃঙ্খলাকারীরা আরো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে জানিয়ে কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা এ সময় যৌথ বাহিনীর ওপর অতর্কিত জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত এসিড নিয়ে হামলা চালায় এবং ভারী ইট-পাটকেলসহ ভাঙা কাচের বোতল ছুড়তে শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর পাঁচজন সদস্যসহ ৯ পুলিশ সদস্য আহত হন। সেনাবাহিনীর পাঁচজন সদস্যকে বর্তমানে চট্টগ্রামে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইন্ডশিল্ড ভেঙে ফেলে।’
উদ্ধার অভিযানের পর দুর্বৃত্ত শনাক্ত করতে যৌথ বাহিনীর ১০টি টহল দল রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাজারী লেনে গেলে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতকারীরা পুনরায় যৌথ বাহিনীর ওপর এসিড সদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করে বলে জানান কর্নেল ফেরদৌস।
তিনি আরো বলেন, ‘এ সময় যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে। বর্তমানে বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করতে প্রক্রিয়া চলছে। আটক ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদসহ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
হামলায় ইসকন সমর্থকরা জড়িত বলছে পুলিশ
হাজারী গলিতে ধর্মীয় সংগঠনকে নিয়ে দেয়া ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় ইসকন সমর্থকদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলছে পুলিশ। তবে পুলিশের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রবর্তক ইসকন শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী বলেছেন, ইসকন সদস্যদের জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।
এ দিকে এ ঘটনায় ৫৮২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে, যেখানে আটক ৮২ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। একই সাথে এ ঘটনায় রাজনৈতিক মদদ রয়েছে কি না সেটিও পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায় নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন ।
হামলায় পুলিশের ৯ জন আহত হওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘ইসকনকে নিয়ে দেয়া একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ওসমান আলী নামে এক ব্যক্তিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এমন তথ্য ৯৯৯-এ পেয়ে আমাদের কোতোয়ালি থানা পুলিশ রেসপন্স করে। তারা সেখানে গেলে অবরুদ্ধ ওসমান নামের ব্যক্তিকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতির অবনতি হলে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ এবং সেনাসদস্যসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হন। ছিনিয়ে নিতে বাধা দেয়ায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল ও এসিড নিক্ষেপ করলে আমাদের ৯ জন সদস্য আহত হন। যার মধ্যে একজন এসিড দগ্ধ হয়েছেন।’
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটকের সংখ্যা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে আটক করা হলেও যাচাই-বাছাই করে আমরা ৮২ জনকে আটক দেখিয়েছি। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ইসকন সমর্থক। কয়েকজন মুসলিম থাকতে পারে। এটিও যাচাই-বাছাই চলছে।’
গ্রেফতার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি জানান, ‘‘ঘটনার সাথে যারা জড়িত ছিল তারা ‘জয় শ্রীরাম’ বলে স্লোগান দিয়েছে। আর ফেসবুকে যে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা করা হয়েছে সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছি, ইসকন সমর্থকরাই জড়িত রয়েছে।’’ উপরোক্ত কথা বলেন সিএমপির এই কর্মকর্তা।
ঘটনার সাথে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কোনো রাজনৈতিক মদদ রয়েছে কি না সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। শান্ত নগরীকে যারা বিশৃঙ্খল করতে চায়, তাদের বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান। সুতরাং এই রকম একটি অস্থিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে যেন নাশকতা বা লুটতরাজ করতে না পারে সেই কার্যক্রম আমাদের আগেও ছিল এখনো রয়েছে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা