শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসে ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিল ও স্বতন্ত্র পরিচয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছেন অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো: নাঈম হাওলাদার।
এ সময় লিখিত বিবৃতি মারফত নাঈম হাওলাদার বলেন, গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের আমন্ত্রণে আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাদের দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ‘স্বতন্ত্র পরিচয়’ নিশ্চিতের উপযুক্ত আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী সাত কলেজের ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করবেন। তবে অধিভুক্তি বাতিল হলেও সাত কলেজকে ফের পেছনে ফেরানো হবে না। বরং শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করা হবে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এ পরিচয় তৈরি করা সম্ভব, সেটা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি ও একটি বিশেষজ্ঞ টিম নির্ধারণ করবে। এ জন্য তিনি আমাদের থেকে সময় চেয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি সাত কলেজের সবগুলো ক্যাম্পাস পরিদর্শন করবেন। মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করার বিষয়েও তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
আমরা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের আশ্বাসে সন্তুষ্ট। তাই চলমান আন্দোলন-কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এখন থেকে সাত কলেজের দাবি নিয়ে আমাদের মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মসূচি নেই। আমরা শুরু থেকে রাস্তা অবরোধ কিংবা বিক্ষোভ-সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের চেয়ে আলোচনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু একটাপর্যায়ে আমরা কোনো ধরনের আশ্বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে আন্দোলন শুরু করেছি। এখন আমাদের মনে হয়েছে, উপদেষ্টার আশ্বাসের পর আর আন্দোলনের প্রয়োজন নেই, আলোচনার দরজা উন্মুক্ত হয়েছে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায় করতে পারব। এ সময়ের মধ্যে সাত কলেজের স্বাভাবিক ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলবে। শুধু তাই নয়, সাত কলেজের জন্য নতুন কাঠামো তৈরি হওয়া ও পরিচালনা কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের পরীক্ষা নেয়া, ফল প্রকাশ করা এবং সনদ দেয়ার মতো নিয়মিত কার্যক্রমগুলো সম্পাদন করবে। যাতে করে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের পরিচয় সঙ্কট তৈরি না হয়। এ ছাড়া ২০১৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেরার পর যেসব সঙ্কট তৈরি হয়েছিল, সবগুলো সামনে রেখে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাতে করে সে ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না হয়।
এ সময়ের মধ্যে যদি ফলাফল বিপর্যয়ের মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে বিশেষ ব্যবস্থায় খাতা পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ও যেন এ বিষয়টি তাদের পর্যবেক্ষণে রাখে, সে দাবি আমরা জানাচ্ছি। তবে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করলেও স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আন্দোলন সাময়িক স্থগিত মানে এই নয় যে আমরা আন্দোলন থেকে একেবারে সরে এসেছি। উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের থেকে সময় চেয়েছেন। তার সম্মানে এবং দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে উপদেষ্টা মহোদয়ের আশ্বাসের পরও যদি আমরা কোনো কার্যকর সমাধান না পাই বা শিক্ষার্থীদের সাথে যদি নতুন কোনো ধরনের ভিন্ন কোনো প্রহসন শুরু হয়, তাহলে আমরা আবার রাজপথে নেমে আসব। রাজপথেই তখন উদ্ভূত পরিস্থিতির ফয়সালা হবে।
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের কাছে সময় চেয়েছেন আমরা তাকে সে সময়টুকু দিতে চাই। আমরা সব মহলের প্রচেষ্টায় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস পেয়ে এখন নীরব রয়েছি। আর এর মধ্যে সাত কলেজের যে অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে সেগুলো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমন্বয় করে সমাধান করতে হবে।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল ও স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবিতে গত ২১ অক্টোবর এবং ২৩ অক্টোবর সাইন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে ২ দফায় ২৪ ঘণ্টা করে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে গ্রাফিতি অঙ্কন ও শিক্ষার্থী সমাবেশসহ তিন দিনের আলটিমেটাম বেঁধে দেন তারা। আলটিমেটাম দ্বিতীয় দিনে এসে ২৮ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এর মাঝে ২৪ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সাত কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনকল্পে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে, যেটি শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে। এ দিকে গত ২ নভেম্বর টানা দুই দিনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করেছেন অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। উক্ত দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা