৬৭ শতাংশ বিক্রির চাপে ঘুরে দাঁড়ানো পুঁজিবাজারের পতন
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৫
বেশ কয়েক দিন ধরে দেশের পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা স্বস্তি ফিরে আসছিল। চার দিনের লেনদেনে সূচক ৩৬০ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছিল ডিএসই। বেশির ভাগেরও বেশি কোম্পানি দর বৃদ্ধির স্রোতে ছিল। গতকালও প্রথম ভাগে সূচকের গতিপথ আশান্বিত ছিল। কিন্তু শেষ দিকে এসে ৬৭ শতাংশ কোম্পানির বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় মূল্য সূচক থেকে পয়েন্ট হারানো শুরু হয়। দর পতনের শিকার হয় ৪৫.৪৭ শতাংশ কোম্পানি। টাকার লেনদেন ও শেয়ার বেচাকেনা আগের দিনের তুলনায় কমে যায়। বিক্রির চাপে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ০.৩৪ শতাংশ। মূলত শেষ দিকে একশ্রেণীর বিনিয়োগকারী বিক্রির চাপ বাড়ানোয় এই দরপতন হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল সারাদিন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলেও দিনশেষে নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে বাজার শেষ হয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ায় লেনদেনের এক ঘণ্টার মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। কিন্তু দুপুর ১২টার পর হঠাৎ করেই একশ্রেণীর বিনিয়োগকারীর শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। এতে দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। ফলে এক দিনের দাম কমার তালিকা বড় হয়, অন্য দিকে প্রধান মূল্যসূচক কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনশেষে ডিএসইর দু’টি সূচক পতনে চলে আসে। ডিএসইক্স ৮.৫৪ পয়েন্ট কমে এখন পাঁচ বাজার ১৯০.৮৫ পয়েন্টে ও ডিএসই-৩০ সূচক ১০.৬১ পয়েন্ট কমে এখন এক হাজার ৯১৫.৪৩ পয়েন্ট নেমে এসেছে। আর শরিয়াহ সূচক ২.২৪ পয়েন্ট ফিরে পেয়ে এখন এক হাজার ১৪৭.১৫ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। বাজার মূল্য পরিবর্তনের ভিত্তিতে ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৭৮টির বা ৪৪.৭২ শতাংশের, কমেছে ১৮১টির (৪৫.৪৭ শতাংশের) এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৯টির। এ দিন লেনদেন ও টাকার পরিমাণ দুটোই কমেছে। ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ১১ হাজার ৪০৫টি শেঢয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৪২১ কোটি ৩৬ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকা বাজার মূল্যে। যেখানে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় ২৩ কোটি ১৯ লাখের বেশি শেয়ার মোট ৫৫৬ কোটি টাকার বেশিতে। ফলে লেনদেন কমেছে ১২৯ কোটি টাকা। বাজার মূলধন ০.৩৪ শতাংশ কমে এখন ছয় লাখ ৬৩ হাজার ১৯৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় অবস্থান করছে।
দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ কোম্পানি : ডিএসইতে গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সর্বোচ্চ দর বেড়েছে আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেডের। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ২ টাকা ১০ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে ডিএসইর দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থান নিয়েছে বলে ডিএসইর প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে। দর বাড়ার শীর্ষ তালিকায় থাকা ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালান্সড ফান্ডের শেয়ার দর বেড়েছে ৫০ পয়সা বা ১০ শতাংশ। আর ১ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯.৮৩ শতাংশ শেয়ার দর বাড়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেড। অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে বসুন্ধরা পেপারের ৯.৭৮ শতাংশ, এমারেল্ড অয়েলের ৯.৭৭ শতাংশ, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৯.৬৫ শতাংশ, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডের ৯.৬৪ শতাংশ, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের ৯.৬০ শতাংশ, এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ডের ৯.৫২ শতাংশ এবং সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৯.৫২ শতাংশ দর বেড়েছে।
দর পতনের শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে রেনউইক যজ্ঞেস্বর অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের। ব্যাংকটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ৪৫ টাকা ৮০ পয়সা বা ৭.১০ শতাংশ কমেছে। যার ফলে ডিএসইর দর পতনের শীর্ষ তালিকায় প্রথমে স্থান করে নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ার দর কমেছে আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়সা বা ৬.৮১ শতাংশ। আর ১ টাকা ৪০ পয়সা বা ৬.৬৬ শতাংশ দর কমে যাওয়ায় পতনের শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে জায়গা নিয়েছে ব্যাংক এশিয়া পিএলসি। পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ৫.৬৬ শতাংশ, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ৫.২৭ শতাংশ, নর্দান জুটের ৫.১৮ শতাংশ, নিটল ইন্স্যুরেন্সের ৪.৮ শতাংশ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৪.৭২ শতাংশ, কুইন সাউথ টেক্সটাইলের ৪.৬৫ শতাংশ এবং এনসিসি ব্যাংকের শেয়ার দর ৪.২০ শতাংশ কমেছে।
ব্লক মার্কেটে ২৯ কোম্পানি : ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ২৯টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ২৫ লাখ ৭৪ হাজার ১৩৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড মোট ১৮ কোটি ৩৪ লাখ ১২ হাজার টাকায় হাতবদল হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বলে ডিএসইর প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বেক্সিমকো ফার্মা, বেক্সিমকো, রেনাটা লিমিটেড, গ্রামীণফোন ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকারও বেশি। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার। কোম্পানিটির সোয়া ১২ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছে মোট ৯ কোটি পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। বেক্সিমকোর এক কোটি ২৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ৯০ লাখ দুই হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে রেনাটা লিমিটেড। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোনের ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকার এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ৭৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দুই কোম্পানির ৪২.৪১ লাখ শেয়ার হাতবদল : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির ৪২ লাখ ৪১ হাজার ৪১৫টি শেয়ার হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য প্রকাশ করেছে। আর কোম্পানিগুলো হলো মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স। মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক হাসিনা নিজাম আট লাখ ৬৯ হাজার ৩০৭টি শেয়ার ও কোম্পানির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ ১১ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৩টি শেয়ার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী হাসিনা-নিজাম ফাউন্ডেশনে হস্তান্তর সম্পন্ন করেছেন। আর কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক হাসিনা নিজাম ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৫টি শেয়ার ও কোম্পানির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ আট লাখ ৯১ হাজার ২৯০টি শেয়ার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী হাসিনা-নিজাম ফাউন্ডেশনে হস্তান্তর সম্পন্ন করেছেন।
ডিএসইর চিঠির জবাব দেয়নি হামি ইন্ডাস্ট্রিজ : অস্বাভাবিক শেয়ারদর ও লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হামি ইন্ডাস্ট্রিজকে চিঠি দিলেও এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি কোম্পানিটি বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য প্রকাশ করেছে। ডিএসই বলছে, শেয়ার দর অস্বাভাবিক এবং লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে কোম্পানিটিকে ৩১ অক্টোবর চিঠি পাঠিয়েছে ডিএসই। তবে এখনো চিঠির জবাব দেয়নি কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ। এ দিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৭ অক্টোবর কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৫১ টাকা ৭০ পয়সায়। আর গতকাল বাজার শেষে শেয়ারটির দর বেড়ে ৮০ টাকা ৪০ পয়সায় দাড়িয়েছে; অর্থাৎ মাত্র পাঁচ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ২৮ টাকা ৭০ পয়সা।
চট্টগ্রামে দুই সূচকে পয়েন্ট ফিরল : এ দিকে চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটে গতকাল একটি সূচক পয়েন্ট হারালেও দু’টি সূচক আরো পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। সিএসই-৩০ সূচক ১৩.১৭ পয়েন্ট হারালেও সিএএসপিআই ২০.৮৯ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ১৮.০৬ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২০৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১৬টির, কমেছে ৬৬টির এবং দর অপরিবর্তিত ২৩টির। ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৮৫৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ১২ কোটি ৯ লাখ ২৩ হাজার ৪৯৮ টাকা বাজারমূল্যে।
প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক : রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, গত দিনের বিক্রির চাপ উপেক্ষা করলেও আজ সূচকের সামান্য সংশোধন হয়েছে। চার লেনদেন দিবসে সূচক প্রায় ৩৬০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা থাকায় স্বল্পমেয়াদি মুনাফা তুলে নেয়ায় সূচকের ৮ পয়েন্টের সংশোধন হয়েছে। ডিএসইএক্স ৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৯০ পয়েন্টে শেষ হয়। বাজার লেনদেন ১২৯ কোটি টাকা কমে ৪৩১ কোটি টাকা হয়েছে। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) নি¤œমুখী ছিল। মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.৩২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ১৯ শতাংশ এবং টার্নওভার ২২ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে আটটি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১১টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে একটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ১৮.৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যা মোট লেনদেনের ৪.২৫ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ৩.৪১ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭.৭ কোটি টাকা; যা গত দিনের তুলনায় ১১৬ শতাংশ বেশি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা