আজ চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে শপথ নিচ্ছেন ডা: শাহাদাত
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০১
চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনের নির্বাচন বাতিলের মামলায় বিজয়ী প্রার্থী রেজাউল করিমের পরিবর্তে নির্বাচনে দ্বিতীয় হওয়া বিএনপির ডা: শাহাদাতকে জেলা জজ আদালত বিজয়ী ঘোষণা করার পরিপ্রেক্ষিতে এলজিইডি মন্ত্রণালয় ডা: শাহাদাতকে রোববার সকাল ১১টায় মেয়র হিসেবে শপথ দিতে যাচ্ছে। অন্য দিকে এর বিরুদ্ধে রিট করেছেন সংক্ষুব্ধ একজন। রিটের শুনানি আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। রিট শুনানির জন্য শপথ স্থগিত করা হবে কি না জানা যায়নি।
এ দিকে জেলা জজের রায়ের বিরুদ্ধে একজন প্রার্থী আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে উকিল নোটিশ দিয়েছেন। আইনগত প্রক্রিয়া শেষ না করে সরকার শপথ দিতে পারে না বলে যুক্তি দেখিয়েছেন তিনি। তার যুক্তি অনুসারে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি-জামায়াত গত ১৫ বছরের কোনো নির্বাচনকে বৈধ বলে মানে না। এমন অবস্থায় আদালতের নির্দেশে মেয়রকে শপথ দিলে গত ১৫ বছরের অবৈধ নির্বাচনগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলার নৈতিক ভিত্তি নষ্ট হয়ে যাবে।
কেউ কেউ মনে করছেন, নির্বাচনে পরাজিত ঘোষণার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছে আদালত। একই সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। এই অবস্থায় তার দায়িত্ব পালনের পথে কোনো বাধা তৈরি করা উচিত হবে না। অন্য একটি পক্ষ বলছেন, সরকার যেসব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করেছে সেগুলোতে মামলা করে দায়িত্ব পাওয়ার হিড়িক পড়ে যাবে। এতে সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে। তাই এ শপথ বন্ধ করে সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা দরকার।
এর আগে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ডা: শাহাদাত ৯ জনকে বিবাদি করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। এজাহারে তিনি নির্বাচন-পরবর্তী ফলাফল সংক্রান্ত প্রকাশিত গেজেট (রেজাউল করিমকে মেয়র ঘোষণা করে) বেআইনি, অবৈধ ও ন্যায়নীতির পরিপন্থী বলে দাবি করেন। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চসিকের ষষ্ঠ পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
শপথ গ্রহণসংক্রান্ত পত্রে বলা হয়, ৩ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে চসিকের নির্বাচিত মেয়রের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ নির্বাচিত মেয়রকে শপথবাক্য পাঠ করাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। একইপত্রে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এ ক্ষেত্রে আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ বা আইনগত কোনো জটিলতা আছে কি না, তা জরুরি ভিত্তিতে জানানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।
দায়িত্ব নিয়েই নেমে পড়বেন পরিচ্ছন্নতা অভিযানে
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে, প্রায় সোয়া ৪০০ কোটি টাকা দেনার ভারে জর্জরিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে আজ রোববার শপথ নিতে যাচ্ছেন বিএনপির সাবেক চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক সভাপতি ডা: শাহাদাত হোসেন। শপথ নিয়েই নগরজুড়ে মশার উৎপাত থামাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযানে নেমে পড়ার কথা জানিয়েছেন এই চিকিৎসক। একই সাথে করপোরেশনকে যাতে কারো কাছে হাত পাততে না হয় সেজন্য স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেবেন বলেও নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে ৪১১ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা দেনা রয়েছে চসিকের। যার বেশির ভাগই উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের বকেয়া। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার পাওনা, বিদ্যুৎ বিল এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ড ফান্ড খাতে রয়েছে বাকি দেনা।
ডা: শাহাদাতের একান্ত সচিব মারুফুল হক চৌধুরী বলেন, শপথ গ্রহণ শেষে চসিক মেয়র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে যাবেন। সেখানে মাজার জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তিনি। ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম ফিরে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন চসিকের নতুন মেয়র।
ডা: শাহাদাত হোসেন গতকাল সকালে নয়া দিগন্তকে বলেন, শপথ গ্রহণ শেষে দায়িত্ব নিয়েই পরিচ্ছন্ন অভিযান শুরু করা হবে। নগরীতে যেভাবে মশার উৎপাত বেড়েছে, লোকজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে সেজন্য এই অভিযান জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে জনসাধারণকেও যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলার এবং সচেতনতার অনুরোধ জানান তিনি। সিটি করপোরেশন পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকেও নতুন করে সাজানোর কথা বলেন তিনি।
করপোরেশনেরর বিশাল অঙ্কের দেনা থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ফান্ডে টাকা থাকলে কাজ করা সহজ। এখন কিছুটা চ্যালেঞ্জ হবে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করেই কাজ করতে হবে আমাকে। তা ছাড়া সময়ও কম। ২০০১ সালে আমি রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিই। তখন প্রতিষ্ঠানটির ৪-৫ কোটি টাকা দেনা ছিল। ২০০৮ সালে আমি বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাড়ে তিন কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রেখে এসেছি। কাজেই করপোরেশনেরও যেসব দেনা আছে তা যাতে শোধ করা যায় এবং করপোরেশনের নিয়মিত একটিভিটি সচল থাকে সেজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাবলম্বী করার প্রচেষ্টা ্আমার থাকবে। দায়িত্ব পালনের জন্য খুব কম সময় থাকলেও সিটি করপোরেশনকে যাতে কারো কাছে হাত পাততে না হয় সেজন্য একটি স্বাবলম্বী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য।
নগরীর বেহাল সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের রিপেয়ারিং কাজও দ্রুত শুরুর প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা