নারায়ণগঞ্জে নিত্য যানজটে জনদুর্ভোগ চরমে : হুমকিতে ব্যবসা-বাণিজ্য
- নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
- ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩
শিল্প ও বাণিজ্যনগরী হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ। এই অঞ্চলের সাথে রয়েছে বহির্বিশ্ব এবং দেশের বিভিন্ন জেলার অর্থনীতির সম্পর্ক। দীর্ঘ দিন থেকে নারায়ণগঞ্জ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও যানজট এখন এর অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যানজট শিল্পাঞ্চলখ্যাত নারায়ণগঞ্জবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী হয়েছে। এখানকার সড়ক, মহাসড়কে যানজট প্রতিদিনকার ঘটনা। কোনো কোনো সময় ছুটির দিনেও সড়কগুলো যানজটে পূর্ণ থাকে। অসহনীয় যানজটে মানুষের ভোগান্তি ও কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। পোশাক শিল্পাঞ্চলে যানজটের কারণে যেতে চাচ্ছেন না বিদেশী বায়াররা। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পাশাপাশি এখন হুমকিতে পড়েছে নারায়ণগঞ্জের রফতানিমুখী তৈরী পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন কারখানা। এভাবে চলতে থাকলে তৈরী পোশাক রফতানিতে ধস নামাসহ অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স।
গত ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর দ্বিগুণ পরিমাণ রুট পারমিট ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলার পাশাপাশি সড়ক মহাসড়কে অবৈধ পার্কিং। বেড়েছে শতগুণ ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা ও ফুটপাথ দখল। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, চাষাড়া থেকে পঞ্চবটি ও আদমজী সড়ক। একই অবস্থা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক।
যানজটের কারণে পাঁচ মিনিটের গন্তব্য পার হতে হচ্ছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায়। এতে বিপাকে পড়েছে সময় মতো স্কুল-কলেজের ও কর্মস্থলে যাওয়া শিক্ষার্থী-শ্রমিক-কর্মচারীরা। নষ্ট হচ্ছে দৈনন্দিন কর্মঘণ্টা।
অন্য দিকে বিসিক শিল্পনগরী ঘেঁষে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ৬ লেন সড়কের নির্মাণ কাজের ধীর গতির কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ এই সড়কে চলাচলকারী মানুষদের। বৃষ্টি হলেই জমে থাকা পানিতে, কখনো-কখনো খানাখন্দ ও কাদামাটিতে পণ্য এবং কাপড় বোঝাই যানবাহন উল্টে পড়ে নষ্ট হচ্ছে মালামাল।
এতে করে ওই সড়কে দীর্ঘতম যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবেই প্রতিদিনই সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত এই যানজটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছোট এই শহরে বিভিন্ন পরিবহনের রেজিস্ট্রিকৃত বাসের সংখ্যা ২৮৩টি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ঢাকা-নারায়ণঞ্জ রুটে নতুন করে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত তিনটি পরিবহনের বাস চালু করা রয়েছে। যাদের বাসের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। যেগুলো নিয়মিত ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে যাতায়াত করে। এর বাইরেও অনেক বাস রয়েছে। যাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
একই সাথে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার। পাশাপাশি মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যান, ট্যাংক লরি, ট্রাক, লেগুনা ও ট্রাক্টর তো রয়েছেই। তাদের ওপরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যার কারণে শহরের রাস্তায় বের হলেই ৫ থেকে ১০ মিনিটের রাস্তায় সময় লাগছে ঘণ্টা সমান।
এ দিকে শহরে রাস্তার পাশে বিশাল মার্কেট নির্মাণ করা হলেও সেগুলোতে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। সেই সাথে রয়েছে ফুটপাথ দখল। ফলে শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়ায় দীর্ঘ সময় ধরে সড়কের ওপরে গাড়িপার্কিং করে রাখে অসংখ্য প্রাইভেটকার, বাইক। নির্দিষ্ট লেনের গাড়িগুলো পর্যাপ্ত জায়গা না পেয়ে আটকে থাকে দীর্ঘসময় ধরে।
এ ছাড়া যত্রতত্র গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বৈধ স্ট্যান্ডের থেকে অবৈধ স্ট্যান্ডের পরিমাণ অনেক বেশি। ওই সব অবৈধ স্ট্যান্ড বছরের পর বছর ধরে বহালই রয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকছে।
বিসিক শিল্পনগরী ঘেঁষে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ৬ লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান জানান, সড়কে আন্ডারগ্রাউন্ড ইফিলিটিজ থাকার কারণে নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। নকশা পরিবর্তনের কারণে নির্মাণকাজে ধীরগতি। শিগগিরই এই কাজ শেষ হলে সুফল ভোগ করবেন এখানকার মানুষ।
বিকেএমইর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গ্যাস সঙ্কটসহ নানা কারণে পুরো ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকির মুখে। এরপর যোগ হয়েছে রাস্তাঘাটের দুরবস্থা ও যানজট। কিছুদিন আগে বিসিকের চেয়ারম্যান নিজে এসে ফতুল্লা বিসিকে রাস্তাঘাটের এ দুরবস্থা দেখে গেছেন। রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে। শ্রমিকরাও যে সহজে চলাচল করবে এ অবস্থাও নেই। এ বিষয়ে আমরা অনেকবার বসেছি। বিসিক বলছে তাদের ফান্ড নেই। অথচ তারা আমাদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ নিয়ে থাকে। অন্যায়ভাবে অনেক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা। আস্তে আস্তে অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, তীব্র যানজটের কারণে এখানকার শিল্পাঞ্চলে বিদেশী বায়াররা আসতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। বায়াররা আসলে তাদের বিসিকনগরী পর্যন্ত পৌঁছতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। এ কারণে তারা আসতে চাচ্ছেন না নারায়ণগঞ্জে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে তৈরী পোশাক রফতানি কার্যক্রমে ধস নামাসহ অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার জানান প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, ৫ আগস্টের পর পুরো পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সেই সুযোগে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারায়ণগঞ্জে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, রুট পারমিটবিহীন বাস চলাচল শুরু হয়েছে। কোনো অবৈধ যানবাহন ধরলে অনেক জায়গা থেকে প্রেসার আসে। অনেকেই ট্রাফিক আইন মানছে না। ইতোমধ্যে রুট পারমিটবিহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। লোকবল কম থাকায় কমিউনিটি পুলিশ এবং স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে যানজট নিরসনের কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি সবার সহযোগিতায় যানজট নিরসন হবে, সড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, স্বস্তি আসবে জনমনে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা