ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত লেবানন প্রধানমন্ত্রী ও হিজবুল্লাহ প্রধানের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯
সুনির্দিষ্ট শর্ত পূরণের ভিত্তিতে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে পারে লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ। গত বুধবার এ কথা বলেছেন হিজবুল্লাহর নতুন প্রধান নাইম কাশেম। তেমনি লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, আগামী ৫ নভেম্বরের আগেই ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি হতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত আমোস হচস্টেইন টেলিফোনে আলাপকালে তাকে এই ইঙ্গিত দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মিকাতি। এএফপি, আলজাজিরা ও এক্সিওস।
নাইম কাসেম এমন সময়ে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন, যখন সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করতে ইসরাইলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিপরিষদে একটি বৈঠক হয়েছে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করলেও লেবাননে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। লেবাননের পূর্বাঞ্চলীয় বালবেক শহরে হামলা চালিয়েছে দেশটি। ইসরাইলের দাবি, হামলায় হিজবুল্লাহর সিনিয়র এক কমান্ডারও নিহত হয়েছেন।
সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাদিদকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিকাতি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দূত আমোস হচস্টেইন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে হয়তো ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগের দিনগুলোতে আমরা একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে পারব।’ এর আগে গত মঙ্গলবার হিজবুল্লাহর নেতা নির্বাচিত হন নাইম কাসেম। গত মাসে ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। হিজবুল্লাহপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দেয়া প্রথম বক্তব্যে কাসেম বলেন, মাসের পর মাস ধরে ইসরাইলের বিমান ও স্থল হামলা প্রতিরোধ করে যাওয়ার মতো সক্ষমতা হিজবুল্লাহর আছে। তবে ইসরাইল যদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়, তবে দরজা খোলা আছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। হিজবুল্লাহপ্রধান বলেন, ‘ইসরাইলিরা যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা আগ্রাসন বন্ধ করতে চায়, আমরা তা গ্রহণ করব। তবে আমাদের বিবেচনায় যথাযথ ও উপযোগী বলে বিবেচিত শর্তের আওতায় তা গ্রহণ করা হবে।’ অবশ্য কাসেম বলেছেন, হিজবুল্লাহ এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য প্রস্তাব পায়নি। ইসরাইলের জ্বালানিমন্ত্রী এলি কোহেন বলেছেন, যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে কী কী শর্ত দেয়া যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক করেছে দেশটির নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিপরিষদ। ইসরাইলের সরকারি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কোহেন বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে, আমি মনে করি এতে সময় লাগবে।’ ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম চ্যানেল টুয়েলভের তথ্য অনুসারে, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে নিজেদের দাবি পূরণের ব্যাপারে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গত মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেছেন।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী মিকাতি বলেন, হিজবুল্লাহ এখন আর লেবাননে যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়টি সামনে আনছে না। তবে দেরিতে এই মত পরিবর্তনের জন্য দলটির সমালোচনা করেন মিকাতি। এর আগে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল, লেবাননে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সাথে দূরত্ব বজায় রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই লেবাননে যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে।
খবর অনুসারে, লেবাননে হিজবুল্লাহর সাথে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে ইসরাইলি মন্ত্রিসভা, সেনা কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এক্সিওসের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দূত আমোস হচস্টেইনের ইসরাইলে আসন্ন সফর ইঙ্গিত দেয় যে, নেতানিয়াহু চুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সমর্থন করছেন এবং হচস্টেইন ইসরাইলে যাওয়ার আগে ইসরাইলিরা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় তার অপেক্ষায় ছিলেন।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াল্লা’ জানিয়েছে, বাইডেনের দূত আমোস হচস্টেইন ও ব্রেট ম্যাকগার্ক গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরাইল সফর করেছেন, যাতে লেবাননের সাথে যুদ্ধ বন্ধে একটি চুক্তি সম্পন্ন করা যায়। তবে ওয়াল্লার এ তথ্য আলজাজিরাকে হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক পরিষদের উপপ্রধান মাহমুদ কামাতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তার বিরোধী। কামাতি বলেছেন, হিজবুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রকল্প বা রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তার কথায়, হিজবুল্লাহর বর্তমান অগ্রাধিকার যুদ্ধক্ষেত্র। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধের মধ্যে হিজবুল্লাহ কোনো আলোচনা মেনে নেবে না- আগ্রাসন থামুক, তবেই আমরা সব রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।’
ইসরাইলে হামলায় নিহত ৫ : এ দিকে ইসরাইলের মেটুলার কাছে রকেট হামলায় পাঁচজন নিহত ও একজন গুরুতর আহত হয়েছে। টাইমস অব ইসরাইল দেশটির চ্যানেল ১২-এর বরাতে জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে একজন ইসরাইলি নাগরিক এবং বাকি চারজন বিদেশী। ইসরাইলি বাহিনী বলেছে, লেবানন থেকে ছোড়া রকেটটি উত্তর সীমান্ত শহরের নিকটবর্তী একটি কৃষি এলাকায় আঘাত হানে। সেখানে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বুধবার একই অঞ্চলে রকেট হামলায় দু’জন আহত হন। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আরো বলেছে যে, লেবানন থেকে দেশটির উত্তরাঞ্চলে প্রায় ৩০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এর সতর্কতা হিসেবে গালিল অঞ্চলের কার্মিয়েল এবং অন্যান্য শহরে সাইরেন বেজে ওঠে। সামরিক বাহিনীর দাবি, এসব রকেটের কয়েকটি আটকানো সম্ভব হয়েছে এবং অন্যগুলো খোলা জায়গায় আঘাত করেছে। তবে ঠিক কতটি আঘাত হেনেছে তা নিশ্চিত করেনি তারা। ওই রকেট হামলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বালবেকে হামলায় নিহত ১৯ : ইসরাইল লেবাননের ঐতিহাসিক বালবেক অঞ্চলের দু’টি শহরে আরো হামলা চালিয়েছে। এতে আট নারীসহ কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়। এর আগে লেবাননের পূর্বাঞ্চলে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। এতে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন। কর্মকর্তাদের মতে, পূর্ব লেবাননে বুধবার ইসরাইলের তিনটি হামলায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের জেফতা শহরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ইসরাইলি বিমান হামলায় একজন প্যারামেডিক নিহত এবং আরো দু’জন আহত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বালবেক জেলার বেদনায়েলে একটি আবাসিক বাড়িতে বিমান হামলার পর প্রাথমিক মূল্যায়নে আটজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পশ্চিম বেকা জেলার সোহমোর শহরে ধারাবাহিক ইসরাইলি বিমান হামলার ফলে ১১ জন নিহত এবং আরও ১১ জন আহত হয়েছেন। লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি পরে জানিয়েছে, বালবেকের বেইট সালিবি শহরে একটি আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে চালানো বিমান হামলায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা গুরুতর।
হিজবুল্লাহর রকেট হামলা : এ দিকে লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ চারটি ইসরাইলি বসতি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছে। এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, বৃহস্পতিবার ভোররাতে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে কিরিয়াত শমোনা, হাতজোর হাগ্লিলিট, কেদেম তসভি এবং ইয়েসোদ হামাআলা বসতি লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছে। এর আগে হিজবুল্লাহ দখলকৃত অঞ্চল থেকে ২৫টি অবৈধ ইহুদি বসতি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরাইলকে। সতর্ক করার কয়েকদিন পরেই বৃহস্পতিবার ভোরে ওই অভিযান শুরু করে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনের উত্তরে নাহারিয়া, কাফার গিলাদি, আল-মেতুলা, কেফার ইউভাল এবং অন্য ইহুদি বসতিতেও রকেট হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, একটি ড্রোন বৃহস্পতিবার ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে অধিকৃত ফিলিস্তিনের ইহুদি বসতিতে আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে ইসরাইলের দখলকৃত অঞ্চলে হাজার হাজার মোবাইল ফোন অকেজো হয়ে যায়। ইসরাইলের কয়েকটি গণমাধ্যম অধিকৃত নাহারিয়া এলাকায় একটি ড্রোন হামলার ছবি প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, ড্রোনটি একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা করে এটি ধ্বংস করে দিয়েছে। সম্ভবত এটি একটি টেলিযোগাযোগ কেন্দ্র বা মোবাইল ফোনের ট্রান্সমিশন স্টেশন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা