ইসরাইলের গোয়েন্দা ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহর হামলা, তেলআবিবে জরুরি অবস্থা
-বৈরুতে হাসপাতালের কাছে ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪ -হিজবুল্লাহর আর্থিক বিভাগের প্রধান নিহতের দাবি -হিজবুল্লাহর হামলার আশঙ্কায় ইসরাইলি বিমানবন্দর বন্ধ- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:১৭
ইসরাইলের মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ভয়াবহ রকেট হামলা চালাচ্ছেন লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তারা গ্লিলট শহরে একটি গোয়েন্দা ঘাঁটিতে পাঁচ দফা হামলা চালান। এ ছাড়া একই সময় বন্দরনগরী হাইফার একটি কৌশলগত সেনাঘাঁটিতে ১৫টি রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহ। এসব হামলায় বরাবরের মতোই কোনো হতাহতের তথ্য জানায়নি ইসরাইল। টাইস অব ইসরাইল, বিবিসি ও রয়টার্স।
এর আগে গত সোমবারও ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিবের উপকণ্ঠে একটি সামরিক গোয়েন্দা ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সোমবার ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা ইউনিট-৮২০০-এর গ্লিলট ঘাঁটিতে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হয়। গাজাবাসী ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং লেবানন ও তার জনগণের প্রতিরক্ষায় এ হামলা চালানো হয় বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলি আগ্রাসন ও গণহত্যার জবাবে হিজবুল্লøাহ গত কয়েকদিন ধরে যে পাল্টা হামলা শুরু করেছে তার অংশ হিসেবে সোমবারের অভিযান চালানো হয়। একই সাথে সোমবার হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ইসরাইলের অবৈধ ইহুদি বসতি কারমিয়েল ও মালোট-তারশিহা এবং ইসরাইলের হাশাহার এলাকায় ইহুদিবাদী বাহিনীর একটি ক্যাম্পে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট নিক্ষেপ করেছে। এসব হামলায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথারীতি গোপন রেখেছে তেলআবিব।
এ দিকে সোমবার ইসরাইলের হাইফা বন্দরে কর্মরত শত শত শ্রমিক আরবি ভাষায় একটি টেক্সট মেসেজ পেয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ওই মেসেজে বলা হয়েছে, তারা এমন একটি শহরে কাজ করছে যেখানে প্রতিরোধ অক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে পারে। গত কয়েকদিনে হাইফার বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তুতে হিজবুল্লøাহর রকেট ও ড্রোন আঘাত হেনেছে। অন্য দিকে দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি বাহিনীর স্থল অভিযান রুখে দিচ্ছেন হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। এ কাজে তারা রকেট, ড্রোন ও কামানের গোলা ব্যবহার করছেন। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, হিজবুল্লাহর বেশির ভাগ রকেটই ভূপাতিত করেছে তারা।
ইসরাইলি বিমানবন্দর বন্ধ : তেলআবিবের কাছে হিজবুল্লাহর ভয়াবহ রকেট ও ড্রোন হামলার আতঙ্কে ইসরাইলের বেনগুরিয়ন বিমানবন্দর সোমবার সন্ধ্যায় বন্ধ রাখা হয়।
ইসরাইল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ জরুরি এক বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় তেলআবিবের ওই বিমানবন্দর কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখে। পরে ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ) বলেছে যে, নিরাপত্তার অভাবে বিমান ওঠা-নামা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখে অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।
একই বিবৃতিতে, আইডিএফ বলেছে যে, তাদের হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমানগুলো ভূমধ্যসাগরের উপর দিয়ে ইসরাইলি আকাশসীমায় প্রবেশের সময় পাঁচটি ড্রোনকে বাধা দিয়েছে। কিছুক্ষণ পরে আইডিএফ বলেছে যে, তেলআবিব এবং শ্যারন অঞ্চলে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছিল। লেবানন থেকে ছোড়া একটি রকেট খোলা জাযগায় আঘাত হানে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি ইসরাইলের।
বৈরুতে হাসপাতালের কাছে হামলা : এ দিকে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈরুতের দক্ষিণাংশে প্রধান সরকারী হাসপাতালের কাছে ইসরাইলের বিমান হামলায় এক শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন।
হাসপাতালটির এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, রফিক হারিরি বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কার পার্কিংয়ে আঘাত হানা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ হামলায় আরো ২৪ জন আহত হয়েছেন, জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিবিসি জানিয়েছে, হাসপাতালের কাছের ওই ঘটনাসহ সোমবার সন্ধ্যার দিকে বৈরুতের দক্ষিণাংশে ১৩ বার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা হিজবুল্লাহর সাথে সম্পর্কিত স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।
এসব হামলার আগে ইসরাইলের এক মুখপাত্র বৈরুতের দক্ষিণাংশের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেন; কিন্তু যেসব এলাকার উল্লেখ তিনি করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে রফিক হারিরি হাসপাতালের নাম ছিল না।
দক্ষিণ বৈরুতের দাহিয়ে এলাকা থেকে আসা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর স্থানীয়রা গাড়িতে করে ও হেঁটে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন। যে সাতটি এলাকাকে লক্ষ্যস্থল ঘোষণা করা হয়েছিল দাহিয়ে তার একটি।
সোমবার রাতের পর মঙ্গলবার সকালেও বৈরুতের দক্ষিণাংশের এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। ইসরাইলি বাহিনী বৈরুত বিমানবন্দরের প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি এলাকায়ও হামলা চালিয়েছে।
এটি লেবাননের একমাত্র সচল বিমানবন্দর। স্থানীয় গণমাধ্যমের শেয়ার করা ছবিতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণে বিমানবন্দর ভবনের জানালাগুলো উড়ে গেছে।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী সোমবার দাবি করেছে, লেবাননে কয়েক বছর ধরে চলা আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে হিজবুল্লাহ লেবাননের অন্যতম বৃহত্তম এক হাসপাতালের নিচে ভূগর্ভের একটি বাংকারে কোটি কোটি ডলার জমা করে রেখেছিল।
তাদের দাবিকৃত এই হাসপাতালটি দক্ষিণ বৈরুতে হলেও সেটি রফিক হারিরি হাসপাতাল না বলে জানিয়েছে বিবিসি। ওই হাসপাতালটিতে এখন আর কেউ নেই। ইসরাইলের নির্দেশে হাসপাতাল ছেড়ে সরে গেছে সবাই।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল দানিয়েল হাগারি কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেছেন, দক্ষিণ বৈরুতের হারেত হরিক এলাকার সাহেল হাসপাতালের নিচে ওই বাংকারটিতে শত শত কোটি নগদ ডলার ও স্বর্ণ ছিল আর হিজবুল্লাহ এগুলো ইসরাইলের ওপর হামলা চালানোর তহবিল হিসেবে ব্যবহার করত। সাহেল হাসপাতালের পরিচালক ইসরাইলে দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, সেখানে ভূগর্ভে কোনো বাংকার নেই। তিনি স্থানটি পরিদর্শন করার জন্য লেবাননের সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
আর্থিক বিভাগের প্রধান নিহত : অন্য দিকে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় হিজবুল্লাহর আর্থিক বিভাগের প্রধান নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর (আইডিএফ) বিবৃতির বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি। সোমবার রাতে সিরিয়ায় ইসরাইলি বিমানবাহিনীর অভিযানে তিনি নিহত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে আইডিএফ। নিহতের নাম প্রকাশ করেনি ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনী।
আইডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ইরান তার তেল বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ নিয়মিত হিজবুল্লাহকে প্রদান করে। তেহরানের কাছ থেকে এই অর্থ সংগ্রহ এবং তা হিজবুল্লাহর তহবিল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন নিহত ওই ব্যক্তি।
এ ছাড়া তিনি গোষ্ঠীটির ৪৪০০ নম্বর ইউনিটের শীর্ষ কমান্ডার ছিলেন তিনি। হিজবুল্লাহর এই ইউনিটটি সিরিয়ায় অবস্থান করে। আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি এক বার্তায় বলেছেন, ‘গত বেশ কয়েক বছর ধরে হিজবুল্লাহর প্রধান তহবিল কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছিলেন ওই কমান্ডার।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা