গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন : হেফাজতে ইসলাম
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:১৩
জাতীয় দিবস ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট বাতিলকে স্বাগত জানিয়ে এবং গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ও রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সাবেক অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর কথিত পদত্যাগপত্রের প্রাপ্তি আগে রাষ্ট্রীয় ভাষণে দেশবাসীর সামনে স্বীকার করলেও সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অস্বীকার করে তিনি স্ববিরোধিতা এবং একই সাথে শপথ ভঙ্গ করেছেন। আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিশ্বস্ত এই রাষ্ট্রপতিকে জুলাই বিপ্লবের শত্রু মনে করি এবং তার দ্রুত অপসারণ দাবি করছি। জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে যারাই গাদ্দারি করবে, তারাই গণশত্রু হিসেবে প্রত্যাখ্যাত হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিস্টদের বানানো জাতীয় দিবস ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট বাতিল করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। রক্তাক্ত জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পিতা একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেন। তার বানানো রক্ষীবাহিনী নামক সন্ত্রাসী সংগঠনকে লেলিয়ে দিয়ে হাজার হাজার আলেম-ওলামা ও বিরোধী নেতাকর্মীকে হত্যা করেন এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালান। স্বাধীন বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ভোটডাকাতির নির্বাচনের নজির তৈরি করেন বাকশালী স্বৈরাচারী মুজিব। তার দলীয় লোকজনের সীমাহীন লুটপাটের ফলে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়। সেই দুর্ভিক্ষে অনাহারে মারা যায় দেশের লক্ষাধিক মানুষ। তারা আরো বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জনক মুজিব ভিন্নমত দমনে চারটি পত্রিকা বাদে আর সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করেন। তার ফ্যাসিবাদী রাজত্বকে আরো নিরঙ্কুশ করতে তিনি সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল গঠন করেন। এভাবে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নের ঘাতকে পরিণত হন ফ্যাসিস্ট মুজিব।
নেতৃদ্বয় বলেন, মুজিবের বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের শাসনকাল চেপে রাখা হয়েছিল তারই অনুগামী স্বৈরাচারী কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে। পিতার কুকীর্তি ঢাকতে একদল চাটুকার প্রগতিশীল সম্পাদক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী লালন-পালন করতেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। নিজের পিতাকে জাতির পিতা বলে চাপিয়ে দেন। পিলখানা ও শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে গত জুলাই-আগস্টেও একের পর এক গণহত্যা চালান তারা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে তিনি অবশেষে ভারতে পালিয়ে যান।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বিডিআর হত্যা, ৫ মে শাপলা চত্বর ও ২০২১ সালে আলেমদের হত্যা এবং ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গসঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের এখনো নিষিদ্ধ না করায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ একের পর এক প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাচ্ছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে আরো সংহত করে সফল করতে হলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো বিকল্প নেই।
ওলামা-মাশায়েখ ও সুধী সম্মেলন কাল
সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদ বাংলাদেশের উদ্যোগে আগামীকাল ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার আয়োজিত ওলামা-মাশায়েখ ও সুধী সম্মেলন সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনের আহ্বায়ক আল্লামা আব্দুল হামীদ ও সদস্যসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী। গতকাল এক বার্তায় নেতৃদ্বয় এ আহ্বান জানান। রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে সকাল ৯টায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইডিইবি) মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লøাহ বাবুনগরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেনÑ উম্মুল মাদারিস জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লøামা খলিল আহমাদ কাসেমী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান, বরুনার পীর মাওলানা রশিদুর রহমান ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী আলহাজ নাজিমুদ্দিন আল আজাদ।
বিবৃতিতে আল্লামা আব্দুল হামীদ ও মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, আহূত ওলামা-মাশায়েখ ও সুধী সম্মেলন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে দেশের সর্বস্তরের ওলামা-মাশায়েখ, সুধীসমাজ ও আপামর তৌহিদি জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।