১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

২৫ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত আসামে প্রবেশকারীরা বৈধ : ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়

-

ভারতে নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা বহাল রেখেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের চারজন সদস্য ওই ধারার বৈধতা বজায় রাখার পক্ষে রায় দেন। রায়ে নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারার আওতায় ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্বের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। ওই ধারার আওতায় যারা সেই সুযোগ-সুবিধা পাবেন, তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশে ছিলেন।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বেঞ্চের একমাত্র সদস্য বিচারপতি জেবি পাদ্রিওয়ালাই বলেছেন যে, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারাটি অসাংবিধানিক। আর তার ফলে ৪:১ রায়ে নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা বহাল থেকেছে।
আসামে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ৬এ ধারাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। কিন্তু তাদের ভোটের অধিকার দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ থেকে যারা আসামে গিয়েছিলেন, তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আসাম চুক্তির অংশ হিসেবে ধারাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ওই ধারার আওতায় ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারির আগে ভারতে আসা লোকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়া হয়। আর যারা ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত ভারতে এসেছিলেন, তারা ১০ বছরের ‘ওয়েটিং পিরিয়ড’র পরে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে নথিভুক্ত হতে পারবেন।
সেই ৬এ ধারাটি বাতিলের আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একগুচ্ছ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তাতে দাবি করা হয়েছিল যে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ৬এ ধারাটি সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। কারণ সেই ধারার ফলে আসামের মানুষের সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার খর্ব করা হয়। যদিও সেইসব মামলা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন যে, অনুপ্রবেশের সমস্যা মেটানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমাধানসূত্র হলো আসাম চুক্তি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার রায়ে বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি এম এম সুদ্রেশ এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র জানিয়েছেন যে, সেই ধারা কার্যকর করার জন্য সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আছে। শীর্ষ আদালতের মতে, কোনো রাজ্যে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আছে মানেই যে সংবিধানের ২৯ (১) ধারার লঙ্ঘন করা হয়েছে, এমনটা নয়।
রায়ে ভারতের প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে এই আইনটি অন্যান্য অঞ্চলেও প্রয়োগ করতে পারত। কিন্তু এটি আসামের ক্ষেত্রে ‘অনন্য’ বলে তা করা হয়নি। অভিবাসীদের সংখ্যা এবং সংস্কৃতি ইত্যাদির ওপর তাদের প্রভাব আসামের ক্ষেত্রে বেশি। এ ছাড়া, আসামে আসা ৪০ লাখ অভিবাসীর প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের ৫৭ লাখের প্রভাবের চেয়ে বেশি। কারণ আসামে জমির পরিমাণ পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে কম। সেইসাথে নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারার আওতায় ‘কাট-অফ ডেট’ হিসেবে যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে বেছে নেয়া হয়েছে, তাতেও আপত্তি প্রকাশ করেনি সুপ্রিম কোর্ট। সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে যে, ওই ‘কাট-অফ ডেট’-টা ঠিকঠাকই আছে। ৬এ ধারা অনুযায়ী, যারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে এসেছেন, তাদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে।
রায়ে আরো বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের এই যুক্তি ঠিক আছে যে আসামে অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন অঞ্চলটির সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে এবং অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ করা সরকারের দায়িত্ব। তবে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখকে চূড়ান্ত সীমা ধরে নিয়ে ধারা ৬এ নাগরিকত্ব আইনে অতিরিক্ত সংযোজন নয়। শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে যারা এসেছেন তাদের নাগরিকত্ব দেয়া যেতে পারে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের এর পরে প্রবেশকারী অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়া যাবে না।
এর আগে, আসামে অবৈধ অভিবাসন সংক্রান্ত ওই ধারা ‘অসাংবিধানিক’ দাবি করে আদালতে মোট ১৭টি আবেদন জমা পড়েছিল। সেগুলো একত্র করে প্রধান বিচারপতি ডি. ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সংবিধান বেঞ্চে গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে শুনানি শুরু হয়েছিল। অবশেষে গতকাল এর রায় ঘোষণা করেন আদালত।


আরো সংবাদ



premium cement