১৬ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩০, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

লেবাননে নতুন হামলা শুরু, ২৫টি গ্রাম খালির নির্দেশ ইসরাইলের

-

- ইসরাইলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হিজবুল্লাহর
- লেবানন থেকে শান্তিরক্ষীদের সরাবে না জাতিসঙ্ঘ
- বাস্তুচ্যুত প্রায় ৪ লাখ লেবানিজ শিশু

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারির পর পূর্ব লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। গতকাল মঙ্গলবার বেকা উপত্যকায় একাধিক হামলা চালায় তারা। এর আগে এক ভাষণে লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহকে রেহাই না দেয়ার প্রতিশ্রুতি জানান নেতানিয়াহু। লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বেকা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর একাধিক আক্রমণে বালবাক শহরের একটি হাসপাতালের পরিষেবা স্থগিত হয়ে যায়। এএফপি, রয়টার্স ও আলজাজিরা।
এই হামলাগুলো এমন সময়ে আসে যখন হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলায় নিহত চার ইসরাইলি সেনার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেন নেতানিয়াহু। গত রোববার কেন্দ্রীয় ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহর হামলায় ওই সেনারা নিহত হয়। ওই সামরিক ঘাঁটিতেই এক বক্তৃতায় নেতানিয়াহু বলেন, লেবাননের সর্বত্র-এমনকি বৈরুতেও হামলা চালিয়ে যাবেন তিনি। ইসরাইলের উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা সাধারণত হিজবুল্লাহর রকেটগুলো সহজেই গুলি করে ভূপাতিত করতে পারে। তবে রোববারের হামলাটি তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও ফাঁকি দিতে পেরেছিল।
ওই হামলার প্রতিশোধ নিতে সোমবার উত্তর লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এতে অন্তত ২১ জন নিহত হয়। এ ছাড়া দক্ষিণ লেবাননের ২৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের ইসরাইলের সীমান্ত থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে আয়ালি নদীর উত্তরে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান বা প্রস্তাব বিবেচনা করবেন, কিন্তু দেশের জাতীয় স্বার্থকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবেন।

ইসরাইলের এমন মন্তব্যে এই অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা আরো বেড়েছে। কারণ গত ১ অক্টোবর ইরানের ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবে নেতানিয়াহুকে তেহরানের পারমাণবিক বা তেল স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা না চালাতে পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হিজবুল্লাহর : এ দিকে গত সোমবার রাতভর ইসরাইলে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে লেবাননের লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের বিভিন্ন সেনাঘাঁটি ও এগুলোর নিকটবর্তী আবাসিক এলাকাগুলো পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। তবে এসব হামলায় হতাহতের তথ্য বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ করেনি ইসরাইল। ইসরাইলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) ১৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত লেবানন থেকে হিজবুল্লাহর ১১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা রেকর্ড করেছে।
আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, হিজবুল্লাহর হামলা ও হুমকি থেকে ইসরাইল ও এর জনগণকে রক্ষা করতে সেনাবাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। এ দিকে হিজবুল্লাহ শুধু ইসরাইলেই নয়, লেবাননে দক্ষিণাঞ্চলে অনুপ্রবেশ করা ইসরাইলি বাহিনীর ওপরও সমান তালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার রাত থেকে হিজবুল্লাহ দক্ষিণ লেবানন ও উত্তর ইসরাইলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে লক্ষ করে তীব্র হামলা শুরু করেছে। হিজবুল্লাহর বহু ক্ষেপণাস্ত্র লেবাননের সীমান্তের কাছে ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটিতে গিয়ে আঘাত হানে।
টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, দখলদারদের বর্বরতার দাঁতভাঙা জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইসরাইল লেবাননে ‘উত্তর তীর’ নামে ভয়াবহ সামরিক অভিযান শুরু করেছে। অভিযানের প্রধান লক্ষ্য হিজবুল্লাহ সামরিক অবকাঠামো হলেও ইসরাইলি বাহিনী আবাসিক এলাকা ও শান্তিরক্ষীদের ক্যাম্পেও হামলা চালায়।

শান্তিরক্ষীদের সরাবে না জাতিসঙ্ঘ : অন্য দিকে ইসরাইলের আহ্বান উপেক্ষা করে জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে তাদের শান্তিরক্ষীরা নিজ নিজ অবস্থানেই থাকবে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রধান জ্য পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিফিল বাহিনীকে লেবাননে রাখার সিদ্ধান্তে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সেনা সহায়তা করা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পূর্ণ সমর্থন আছে। এর আগে গত রোববার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জাতিসঙ্ঘকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন দক্ষিণ লেবাননের ঘাঁটি থেকে শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নিতে।
সেখানকার শান্তিরক্ষীরা হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের মানবঢাল হিসাবে কাজ করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।কিন্তু জাতিসঙ্ঘ নিজ অবস্থানেই অটল রয়েছে। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনের প্রধান বলেছেন, নীল হেলমেটধারীরা যেখানে আছে সেখানে থাকাটা অপরিহার্য। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ তাদেরকে যে ম্যান্ডেট দিয়েছে তা তাদেরকে পালন করতে হবে এবং সাধারণ মানুষকে সহায়তা করতে হবে।

দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের সাথে লড়াই চলাকালে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে দুই শান্তিরক্ষী আহত হওয়ার পর গত সপ্তাহে দক্ষিণ লেবাননে পঞ্চম আরেকজন শান্তিরক্ষী আহত হন। এর পরই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে অবিলম্বে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বাস্তুচ্যুত প্রায় ৪ লাখ শিশু : তিন সপ্তাহ ধরে লেবাননে চলমান ইসরাইলি বাহিনী হামলায় ইতিমধ্যে প্রায় চার লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে একটি প্রজন্ম ঝড়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসঙ্ঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। কারণ এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। গত তিন সপ্তাহে লেবাননে ইসরাইলি হামলার কারণে ১২ লাখ মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই বৈরুত ও লেবাননের উত্তরের বিভিন্ন শহর ছেড়ে পালিয়েছে।
ইউনিসেফের মানবিক কার্যক্রমের উপনির্বাহী পরিচালক টেড চাইবান বেশ কিছু স্কুল পরিদর্শন করেছেন যেগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে বাস্তুহারা লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, এই যুদ্ধের বয়স মাত্র তিন সপ্তাহ এবং অনেক শিশু এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যেই ১২ লাখ শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্কুলগুলো যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে শিশুরা এখন স্কুলেও যেতে পারছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল