১৬ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩০, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ছাত্র আন্দোলনে শহীদ শাহরিয়ার পেলেন জিপিএ ৪.৮৩

-

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহ বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়েছেন। গতকাল তার পিতা মোহাম্মদ আবদুল মতিন ফেসবুকে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শাহাদতবরণকারী আমার একমাত্র ছেলে কলিজার টুকরা শহীদ শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
গত ১৮ জুলাই বিকেলে ঢাকার মিরপুরে ১০ নম্বরের গোলচত্বরের কাছে গুলিবিদ্ধ হন শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন। ডান চোখের পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে মস্তিষ্ক ছেদ হয়ে যায়। শাহরিয়ারের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কুমড়াশাসন উত্তরপাড়া গ্রামে।
শাহরিয়ারের পরিবার সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষার মধ্যে বন্ধ পেয়ে ঢাকায় মায়ের কাছে যায় শাহরিয়ার। পরে মিরপুর ২ নম্বর সেকশনে খালার বাসায় বেড়াতে যায়। সেখানে খালাতো ভাইয়ের সাথে আন্দোলনে অংশ নেয়। পরে মিরপুর ১০ নম্বরের গোলচত্বরের কাছে গুলিবিদ্ধ হয় শাহরিয়ার। তার খালাতো ভাইও গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। সেদিন একপাশে আন্দোলনকারী অন্য পাশে পুলিশ ও ছাত্রলীগ ছিল।
শাহরিয়ারের ফলাফল শেয়ার করে ফেসবুকে রিফাত উল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ২০ জুলাই সন্ত্রাসী লীগ বাহিনী এবং আওয়ামী পুলিশের গুলিতে শহীদ শাহরিয়ার এইচএসসি রেজাল্ট বেরিয়েছে। শহীদ শাহরিয়ার আমার বন্ধু শেখ আব্দুল মতিনের ছেলে। সান্ত্বনা দেয়ার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই। আল্লাহ শাহরিয়াকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন।
শহীদ নাফিসা পেলেন ৪.২৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া নাফিসা হোসেন মারওয়া ৪.২৫ পেয়ে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। নাফিসার এ অর্জন তার মা-বাবার মনকে নতুন করে কাঁদিয়েছে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে সহপাঠীরা যখন উল্লাস করছেন, তখন চিরনিদ্রায় শায়িত নাফিসা।
জানা যায়, বাসায় না জানিয়ে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিতেন কলেজ শিক্ষার্থী নাফিসা। ১৭ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী আন্দোলনে সবসময় ছিলেন সম্মুখ সারিতে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট দুপুরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন থানা রোডে পুলিশের গুলিতে মারা যান তিনি।

নাফিসার বাবা আবুল হোসেন বলেন, মেয়ের যাতে লেখাপড়া নষ্ট না হয়, সেজন্য রান্না করতে দিতাম না। চায়ের দোকান দিয়ে যা দুই টাকা উপার্জন করেছি, মারওয়ার লেখাপড়ায় দিয়েছি। মেয়ে আমাকে না জানিয়ে গত ১৮ জুলাই থেকে উত্তরায় যেত আন্দোলনে। সারাদিন দোকানে থাকায় খোঁজ পেতাম না। প্রতিবেশীর কাছে জেনে মেয়েকে ঘরে আটকাই।
আবুল হোসেন আরো বলেন, সাভারের বক্তারপুরে মামার বাসায় গিয়ে পুরনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে আবার আন্দোলনে যায়। ৪ আগস্ট দুপুরে মেয়েকে ফোন করলে গোলাগুলির শব্দ শুনি। মেয়ে তখন বলে, আন্দোলনে আছি। আর পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট থানা রোডে যায় নাফিসা। তারপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ফোনে বলল, শেখ হাসিনা পলাইছে। আব্বু, আমি গণভবন যামু। আজ আমারে বাধা দিও না। আমি বললাম, শেখ হাসিনা পলাইছে, তাতে তর বাপের কী! তর বাপে করে চায়ের দোকানদারি।
আবুল হোসেন বলেন, রাগ করে ফোন রেখে দিই। দুপুর ২টার দিকে মেয়ের ফোন থেকে এক ছেলে জানায়, আমার মেয়ের বুকে গুলি লাগছে। মেয়েটা সোয়া ২টার দিকে আমারে ফোন করে বলে, ‘আব্বু আমি মরে যামু। লাশটা নিও।’ এটাই মেয়ের শেষ কথা ছিল।
শহীদ আফনানও পেয়েছে জিপিএ ৪.১৭
লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন সাদ আল আফনান পাটোয়ারি। বাবা সালেহ আহমেদ বেঁচে নেই। মা নাসিমা আক্তার স্বপ্ন দেখতেন ছেলেকে নিয়ে। কিন্তু সে স্বপ্ন ধূলিস্মাৎ হয়ে যায় ৪ আগস্ট। লক্ষ্মীপুরের মাদাম ব্রিজ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ মা নাছিমার কষ্টকে যেন আরো বাড়িয়ে দিলো। ছেলে তার জিপিএ ৪.১৭ পেয়ে পস করেছেন। বেঁচে থাকলে সতীর্থদের সাথে উল্লাসে মেতে থাকত তার ছেলেও। কিন্তু সে আজ চিরনিদ্রায় শায়িত। নাছিমা বলেন, আফনানের রেজাল্ট আমার কাছে খুশির কবর। কিন্তু যাকে নিয়ে এ খুশি উদযাপন করব সেই তো নাই। গুলি করে আমার ছেলের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আমার কোল আজ শূন্য।


আরো সংবাদ



premium cement