এনসিটিবির তিন কর্মকর্তার কব্জায় টেন্ডারের ২০ কমিটি
এখনো সক্রিয় একাধিক সিন্ডিকেট- শাহেদ মতিউর রহমান
- ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০৭
পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের প্রথম ধাপেই এবার টেন্ডার নিয়ে ঘটছে তুঘলকি কাণ্ড। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) টেন্ডার বা দরপত্র খোলা সংক্রান্ত যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে তিন ব্যক্তির আধিপত্য নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, বিশেষ কোনো মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে কারসাজির মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দিতেই এমন অস্বাভাবিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে টেন্ডার খোলা সংক্রান্ত এখন পর্যন্ত মোট ২০টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটির সদস্য হিসেবে অদৃশ্য শক্তিধর তিন ব্যক্তির নাম এসেছে। তারা হচ্ছেন- সম্প্রতি পদায়ন পাওয়া এনসিটিবি সচিব শাহ মুহম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌস, সদস্য প্রফেসর রিয়াদ চৌধুরী (শিক্ষাক্রম ও অর্থের চলতি দায়িত্ব) এবং মো: হাফিজুর রহমান (বিতরণ নিয়ন্ত্রক) ।
এ নিয়ে এনসিটিবি এবং খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে এনসিটিবিতেই বিভিন্ন শাখা ও বিভাগে দক্ষ অভিজ্ঞ কর্মকর্তা রয়েছেন, সেখানে কি এমন মধু রয়েছে যে ঘুরেফিরে তিন ব্যক্তিকেই কমিটির সদস্য করার দরকার হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে পছন্দের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতেই এমন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ইবতেদায়ি প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী, মাধ্যমিকের বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের ষষ্ঠ শ্রেণী, দাখিলের ষষ্ঠ শ্রেণী এবং কারিগরি বোর্ডের ষষ্ঠ ট্রেডের বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ করতে এনসিটিবির ১৭০৯ নং স্মারকে যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে সেটা খোলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন সচিব শাহ মুহাম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌস। তিনি ৫১-৬০, ৬১-৭০, ৭১-৮০, ৮১-৯৪ ও ৯৫-১০৮ এই পাঁচ লটের টেন্ডার খোলা সংক্রান্ত কমিটি সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
অপর দিকে একই স্মারকের ১-১০, ১১-২০, ২১-৩০, ৩১-৪০ ও ৪১-৫০ এই পাঁচটি লটের টেন্ডার খোলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন এনসিটিবিরি সদস্য প্রফেসর ড. রিয়াদ চৌধুরী (শিক্ষাক্রম ও অর্থের চলতি দায়িত্ব)
সূত্র আরো জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিকের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম, দাখিল সপ্তম এবং কারিগরির সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য ১৮৫৭ নং স্মারকে যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে সেখানেও এনসিটিবির সদস্য প্রফেসর ড. রিয়াদ চৌধুরী এবং বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো: হাফিজুর রহমানকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই টেন্ডারে ১-১০, ১১-২০, ২১-৩০, ৩১-৪০ ও ৪১-৫০ এই পাঁচ লটের টেন্ডার খোলা সংক্রান্ত কমিটিতেও আছেন প্রফেসর ড. রিয়াদ চৌধুরী। আবার এই টেন্ডারের ৫১-৬০, ৬১-৭০, ৭১-৮০, ৮১-৯০ ও ৯১-১০০ নম্বর লটের টেন্ডার খোলার কমিটিতেও সদস্য হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো: হাফিজুর রহমান। অর্থাৎ দুই স্মারকে আহ্বান করা টেন্ডারের মোট ১০টি লটে প্রফেসর ড. রিয়াদ চৌধুরী একাই ১০টি কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন।
এনসিটিবির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেও কিভাবে একাই পাঁচটি কমিটিতে নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন জানতে চাইলে সচিব শাহ মুহম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌস নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি নিজেও জানি না কিভাবে এসব কমিটিতে আমার নাম দেয়া হয়েছে। আমিতো প্রতিদিন অনেক ফাইল প্রসেস করি। কিন্তু টেন্ডার খোলা সংক্রান্ত এই কমিটিতে নাম দেয়া না দেয়া নিয়ে আমার কোনোই আগ্রহ ছিল না। কেন বা কিভাবে আমার নাম দেয়া হয়েছে এখনো বিষয়টি জানি না।
তবে উল্লেখ করেন, কারো মনে যদি অসততা না থাকে তাহলে অবশ্যই তিনি ভালো করতে পারেন। আর টেন্ডার ওপেন করার কমিটিতে কোনো ধরনের কারচুপি বা কারসাজি করার সুযোগ নেই।
অপর দিকে প্রফেসর ড. রিয়াদ চৌধুরী একাই ১০টি কমিটিতে থাকার প্রসঙ্গে বলেন, আমি নিজেও জানি না এই কমিটিগুলোতে আছি কিনা? প্রতিদিন অনেক কাজই আমাদের করতে হয়। হয়তো রুটিন কাজ হিসেবে আমাকেও এই কমিটিতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা