১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রমে হতাশ অর্থ উপদেষ্টা

-

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের কার্যক্রমে হতাশা প্রকাশ করেছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি এই কার্যক্রম রিডিজাইন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় পেনশন স্কিমের প্রথম বোর্ড মিটিংয়ে এই নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে। তবে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি।
অর্থ উপদেষ্টা ছাড়াও এই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্তণালয়ের সচিব এবং জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই বৈঠকে অংশ নেন।
পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো: গোলাম মোস্তফা বলেন, এটি এই পেনশন স্কিমের প্রথম বোর্ড মিটিং। ধারাবাহিকভাবে পেনশন স্কিমের যে কাজ হাতে নেয়া হয়েছে, যে বিধিমালাগুলো প্রণয়ন করেছি এবং এর এনরলমেন্ট (নিবন্ধন) বাড়ানোর জন্য আমরা যে কার্যক্রম নিয়েছিলাম এর সব কিছুই আমরা বোর্ডকে অবহিত করেছি। লোকাল প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে আমরা এর কার্যক্রম শুরু করার সময় এর নিবন্ধনের হার ব্যাপক আকারে বাড়ছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কার্যক্রম অনেকটা থমকে গেছে। এটি এখন আবার সচল করতে হবে। এর জন্য কিছু সময় লাগবে। এ বিষয়টিই আমরা বৈঠকে তুলে ধরেছি। আমরা অর্থ উপদেষ্টাকে বলেছি, আগে এর সাথে পিএম অফিস সংযুক্ত ছিল, লোকাল প্রশাসনের সংযুক্তি ছিল। এখন যদি আবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে কাজে লাগতে পারি তবে এই স্কিমকে ‘গেয়ারআপ’(পুনরায় সচল) করতে পারি। উপদেষ্টা এতে সম্মতি দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। প্রবাসীদের কাছ থেকে এই স্কিমে যোগ দিতে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা সেভাবে তাদের কাছে পৌঁছুতে পারিনি। এটি আমাদের ব্যর্থতা বলা যেতে পারে।

এদিকে, অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’এর কার্যক্রম। বিগত সরকারের নেয়া এই স্কিম এখন গ্রাহকদের অভাবে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। একসময় প্রতিদিন যেখানে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ৪-৫ হাজার মানুষ এনরলমেন্ট বা নিবন্ধন করত, এখন একবছরের ব্যবধানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪-৫ জনে। এমনকি কোনো কোনো দিন একজন গ্রাহকও এই স্কিমের সাথে যুক্ত হোন না। আবার যারা মাসে মাসে কিস্তিু টাকা দিতেন, আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তারাও অধিকাংশই আর চাঁদাও দেন না। এই চাঁদা না দেয়ার হার অনেক বলে জানা গেছে।
গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত পেনশন স্কিমে মোট নিবন্ধনধারী সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৭২ হাজার ৩৭১ জন। এখন পর্যন্ত এদের কাছ থেকে চাঁদা হিসেবে পাওয়া গেছে ১৩০ কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এই অর্থ সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। চারটি স্কিমের মধ্যে দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসরত ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত সমতায় সবচেয়ে বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। এর সংখ্যা দুই লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ জন। এরপর সুরক্ষা স্কিমের নিবন্ধনের সংখ্যা ৬৩ হাজার ১২৫জন, প্রগতিতে ২২ হাজার ৩৩২ জন এবং বিদেশীদের জন্য নির্ধারিত প্রবাসে মাত্র ৮৯৪ জন নিবন্ধন করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৭ আগষ্ট অনেকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার আশায় বিগত হাসিনা সরকার এই স্কিমটি চালু করে। সমতা, সুরক্ষা, প্রগতি ও প্রবাস- এই চারটি স্কিমের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়। পরে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নতুন করে যুক্ত করা হয় ‘প্রত্যয় স্কিম’। এই স্কিমে শুধুমাত্র সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি ২০২৪ সালে ১ জুলাই তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে গত আগষ্টে পুরো প্রত্যয় স্কিম বাতিল করে দেয়া হয়।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement