২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঢাকার আশপাশে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ১০টি সরকারি হাইস্কুল ও কলেজ

কারিকুলামে যুক্ত হবে কর্মমুখী ট্রেড কোর্স
-


আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ১০টি সরকারি হাইস্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আর এই স্কুলকলেজগুলো গড়ে উঠছে রাজধানী ঢাকার ঠিক আশপাশেই। যেসব এলাকায় সরকারি স্কুল-কলেজ নেই এমন এলাকাকেই অগ্রাধিকার দিয়ে ইতোমধ্যে স্থান নির্ধারণ ও জমি অধিগ্রহণের কাজও প্রায় শেষ হয়েছে। সরকারিভাবে পরিচালিত এসব স্কুল-কলেজে ২৭ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পাবে। এসব প্রতিষ্ঠানে মূল শিক্ষা কারিকুলামের সাথে যুক্ত করা হবে কর্মমুখী একাধিক ট্রেড কোর্স। যাতে শিক্ষার্থীরা এসএসসি বা এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করার পরেই নিজেদের কর্মসংস্থানও নিজেরাই করে নিতে পারে।

সূত্র বলছে, ঢাকা ও তার সন্নিকটবর্তী এসব এলাকার ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য গুণগত মান নিশ্চিত করে শিক্ষার সম্প্রসারণ করার লক্ষ্য নিয়েই এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। একসাথে ঢাকার নিকটবর্তী স্কুল এবং কলেজের ফলাফলের ক্ষেত্রে সংখ্যাগত এবং গুণগত মান উন্নয়নে ভূমিকাও রাখবে এসব সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। শতভাগ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৭ সালের ৩০ জুন।

এ দিকে ঢাকার আশপাশে সরকারি ১০টি স্কুল-কলেজের জন্য এলাকা ও জমি নির্বাচনও চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার নির্বাচিত এলাকাগুলো হচ্ছে- কেরানীগঞ্জের পশ্চিমদি, ধামরাইয়ের লাকুরিয়াপাড়া, আশুলিয়ার পাথালিয়ায় বাঁশবাড়ি, সাভারের হেমায়েতপুরের বিলামালিয়া, বাড্ডার সাঁতারকুল, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে জালকুড়ি, নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডের খোর্দ্দঘোষপাড়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল, আশুলিয়ার পূর্র্ব নরসিংহপুর এবং খিলক্ষেতের জোয়ারসাহারা। এসব এলাকায় প্রতিটি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য কমবেশি দুই একর করে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে শুধু পূর্বাচল, খিলক্ষেতের জোয়ারসাহারা এবং আশুলিয়ার পূর্ব নরসিংহপুরে জমি অধিগ্রহণের কিছু কাজ এখনো চলমান রয়েছে। বাকি এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করে ভূমির উন্নয়ন তথা মাটি ভরাট, সয়েল টেস্ট-সহ আনুষঙ্গিত কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।

আধুনিক শিক্ষা কাঠামো ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সরকারি এসব স্কুল-কলেজে সংযুক্ত করা হবে বিশ্বের আধুনিক সবধরনের সুযোগ-সুবিধা। শিক্ষার্থীদের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আধুনিক শিক্ষা উপকরণের প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত সুবিধার সুযোগ থাকবে এখানে। নন্দিত ডিজাইন আর দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্যে প্রতিটি ভবন হবে ১০ তলাবিশিষ্ট। প্রতিটি ভবনেই থাকবে দু’টি করে লিফট। অ্যাকাডেমিক ভবনের বাইরে থাকবে শহীদ মিনার, একটি করে জিমনেশিয়াম ও গার্ডিয়ান শেড। প্রতিটি স্কুল ও কলেজের জন্য প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্ট করে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হবে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এ ছাড়া আধুনিক আসবাবপত্র, কম্পিউটার ও কম্পিউটার-সামগ্রী (ইন্টারনেটসহ), অফিস সরঞ্জামাদি, ল্যাব, জিম ও কালচারাল ইকুপমেন্ট, খেলাধুলার সামগ্রী এবং বই-পুস্তক ইত্যাদি ক্রয়পূর্বক সরবরাহের সব সুযোগ-সুবিধাও থাকবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর প্রথমে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন লাভ করে। এর পরে একই বছরের ৬ নভেম্বর এটি পরিকল্পনা কমিশনে অনুমতি পায় এবং ওই মাসেই ২০ তারিখে মাউশি বিভাগ থেকে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন লাভ করে; কিন্তু পরবর্তী সময়ে ভবনের নকশাসংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা দৃষ্টিতে আসার পর পুরো প্রকল্প পুনরায় ২০২৩ সালে একনেক, পরিকল্পনা কমিশন এবং মাউশি থেকেও দ্বিতীয় দফায় অনুমোদন নিতে হয়েছে। যদিও প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা; কিন্তু পরবর্তী সময়ে করোনা এবং জমি অধিগ্রহণ ও মামলা জটিলতা সংক্রান্ত কাজে তিন দফায় সময় বৃদ্ধি করার কারণে দীর্ঘ সাত বছর সময় চলে যায়। প্রকেল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে সব জটিলতা কাটিয়ে এখন প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মীর জাহীদা নাজনীন নয়া দিগন্তকে জানান, ঢাকার আশপাশে যেসব এলাকায় সরকারি স্কুল বা কলেজ নেই সেই এলাকাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েই সরকারি অর্থায়নে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন সব এলাকা বাছাই করা হয়েছে যেখানে ঘনবসতিও বেশি। কিন্তু সরকারি স্কুল-কলেজ না থাকায় এসব এলাকার শিশুরা শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। তিনি জানান, এই ১০টি স্কুল-কলেজে মূল কারিকুলামের সাথে যুক্ত করা হবে একাধিক ট্রেড কোর্স। যাতে করে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ না করেও শুধু এসএসসি কিংবা এইচএসসি পাস করেই তারা নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরাই করে নিতে পারে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিগত সময়ে জমি অধিগ্রহণ এবং জমির মালিকদের মামলা জটিলতার কারণে কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিল বটে, তবে এখন অবশ্য সব জটিলতা কেটে গেছে। কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি, আমাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement