বিদেশে কর্মী যাওয়া বেড়েছে : বহির্গমন ছাড়পত্রে অনিয়ম আগের মতোই

বিদেশে জনশক্তি রফতানি গত আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার সৌদি আরবে কর্মী গিয়েছে আগস্ট মাসের তুলনায় দ্বিগুণ।
অভিবাসন ব্যবসায়ের সাথে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা কর্মী যাওয়ার হার বাড়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে আসন্ন বায়রা নির্বাচনকে সামনে রেখে সদস্যদের মধ্য যে বিভেদ সৃষ্টি দেখা দিয়েছে, তাতে সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়ের পরিবেশ খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈধভাবে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে সৌদি আরব, কাতার, জর্দান, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, ইতালি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, কিরগিস্তানসহ মোট ছয় লাখ ৯৮ হাজার ৫৫৮ জন কর্মী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে গিয়েছে ৪৪ হাজার ২৪৯ জন। অথচ এক মাস আগেই দেশটিতে কর্মী গিয়েছিল ২৮ হাজার ২৫১ জন। এক মাসের ব্যবধানে ১৫ হাজার ৯৯৮ জন কর্মী বেশি গিয়েছে দেশটিতে।

একইভাবে কাতারে সেপ্টেম্বর মাসে কর্মী যায় ছয় হাজার ৩৯৫ জন; যা আগস্টে গিয়েছিল পাঁচ হাজার ৯৭৪ জন। এখানেও প্রায় এক হাজার ২০০ কর্মী বেশি গিয়েছে। সৌদি আরব ও কাতারের নন এটাসটেট ভিসায় বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার কারণে এই দেশ দু’টিতে কর্মী যাওয়ার হার কিছুটা বেড়েছে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশ্লেষকরা।
গতকাল আল রাবেতা ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো: আবুল বাশার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা ব্যবসায়ী। আমরা বিদেশে বেশি বেশি কর্মী যাক দেশে রেমিট্যান্স বেশি বেশি আসুক, সেটিই চাই। কিন্তু সামনে বায়রা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলাদলি চলছে। যদিও আমাদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং নেই। আমরা সবাই একই পরিবার। দু-একজন খারাপ থাকবেই।
ইদানীং লাইসেন্স মালিকদের এ, বি, সি, ডি গ্রুপে ফেলার চেষ্টা চলছে। আমরা মালিকদের মধ্য লাইসেন্স শ্রেণিবিন্যাস চাই না। আমরা সবাই সমান, সমান থাকতে চাই। সরকারকে বিষয় বিবেচনার জম্য অনুরোধ থাকল।

শুধু আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে কোনো কোনো দেশে কর্মী যাওয়ার হার বাড়লেও কয়েকটি দেশে একই সময়ে আবার কর্মী কমও গেছে।
সংযুক্ত আরর আমিরাতে আগস্ট মাসে পাঁচ হাজার ৯৯৯ জন কর্মী গেলেও সেপ্টেম্বর মাসে সেটি অনেক কমেছে। এই মাসে গেছে মাত্র ৬৭৬ জন অর্থাৎ পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক কম গেছে। একইভাবে কুয়েত, লেবানন, সাউথ কোরিয়া ও ইতালিসহ অনন্যা দেশেও সেপ্টেম্বর মাসে কর্মী যাওয়া কমেছে।
গতকাল সোনার বাংলা কৃষিখামারের মালিক মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবমর্যাদা ও সঠিক দিকনির্দেশনার কারণে ঝিমিয়ে পড়া শ্রমবাজার আবার কিন্তু চাঙ্গা হচ্ছে। তবে লিবিয়া, ইরাকসহ ইউরোপের দেশগুলোতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ালে শ্রমবাজারের সুদিন ফিরে আসবে বলে আমি আশাবাদী।
এ দিকে কাকরাইলের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখাকে আরো গতিশীল করতে কতিপয় পুরনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরিয়ে নতুনদের সেখানে সুযোগ দেয়ার দাবি উঠেছে খোদ বিএমইটি থেকেই।
অভিযোগ রয়েছে, এখনো বহির্গমন শাখা থেকে বিদেশগামীদের ছাড়পত্র দেয়া নিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যদের অনিয়ম চলছে আগের মতোই। একই সাথে টেন্ডার ছাড়া শুরু হওয়া আমি প্রবাসী এ্যাবস নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এসব বিষয়টিকে কঠোরভাবে মনিটরিং করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।