১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তামিম খুন

দায়িত্বে অবহেলায় ওসি প্রত্যাহার, গ্রেফতার ৫ জন রিমান্ডে

-


হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্টের ডি-ব্লকে ২০১৭ সালে প্লিজেন্ট প্রপার্টিজ লিমিটেডের কাছে বাড়ি নির্মাণের চুক্তি করে সাড়ে আট কাঠা জমি দিয়েছিলেন সুলতান আহমেদ, মোজাম্মেল হক কবির ও মজিবুর রহমান। চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেকেরই ফ্ল্যাট পাওয়া কথা ছিল পাঁচটি করে। দু’জন মালিক পাঁচটি করে ফ্ল্যাট ঠিকই বুঝে পান। সুলতান আহমেদকে কাগজে-কলমে সাড়ে চারটি দেয়ার কথা বলেও বুঝিয়ে দিয়েছে মাত্র দু’টি। গত দুই বছরে ১০ তলা ভবনের প্রায় সব ফ্ল্যাটে বাসিন্দারা উঠে গেলেও সুলতান আহমেদকে মাত্র দু’টি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম। দীর্ঘদিন দেনদরবার শেষে ভবনটির আট তলায় সুলতান আহমেদ তার পাওয়া একটি অসমাপ্ত ফ্ল্যাটে তিনি নিজেই কাজ শেষ করে নেয়ার অনুমতি পান। বাকি দেড়টি এখনও বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার তার পাশের ফ্ল্যাট কাজ শুরু করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) সহকারী পরিচালক মো: মামুনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ওই ফ্ল্যাটটি সুলতান আহমেদের পাওয়ার কথা থাকলেও তা ডেভেলপার কোম্পানি গোপনে মামুনের কাছে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ। আর সে জন্য ওই ফ্ল্যাটে কাজ শুরু করলে সেটি বাধা দিতে যায় সুলতান আহমেদের ছেলে তানজিল জাহান তামিম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কোম্পানির ক্যাডার ও ডিএনসি কর্মকর্তা মামুনের লোকজন তামিমের ওপর হামলা করে নির্মমভাবে কিল ঘুষি ও লাথি মারতে তাকে। এক পর্যায়ে গুরুতর অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় আশপাশের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তামিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

তামিমের বাবা সুলতান আহমেদ বলেন, ছাড় দিয়েও ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না। ওরা আমার ছেলেটাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন তামিমের বাবা। গতকাল জুমার পর তামিমের লাশ নেয়া হয় মুগদা কবরস্থানে। সেখানেই তার দাফন শেষে তামিমের বাবা আক্ষেপ করে ছেলের বিচারের দাবি তোলেন। এসময় সুলতানসহ স্বজনরা সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই ঘটনায় নিহতের বাবা সুলতান আহমেদ বাদি হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গতকাল প্লিজেন্ট প্রপার্টিজ লিমিটেডের নির্মাণাধীন ভবনটিতে সরেজমিন কথা হয় বসবাসরত কয়েকজনের সাথে। তারা নিজের পরিচয় গোপন রেখে ডেভেলপার কোম্পানির অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তামিমের বাবাসহ তিনজন জমিটির মালিক। ২০১৭ সালের দিকে ভবন নির্মাণের জন্য চুক্তি হয় প্লিজেন্ট প্রপার্টিজের সাথে। ভবনের নকশা তৈরি করেই ফ্ল্যাট বিক্রি শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘ দ্বন্দ্বের পর আট তলায় যে ফ্ল্যাটের কাজ শুরু করেন তামিমরা তার পাশের ফ্ল্যাটটিও তাদেরই পাওয়ার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেটির কাজ শুরু করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা মো: মামুন। এই নিয়েই মূলত দ্বন্দ্বের শুরু। গত ৩-৪ দিন এই নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে রবিউলের কাছে ফ্ল্যাটের বিষয়ে জানতে চান সুলতান আহমেদ। কিন্তু রবিউল আলম টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে মামুন সুলতান আহমেদকে জানান যে, ফ্ল্যাটটি তিনি কিনেছেন।

এদিকে তামিমকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে চারজন এবং গতকাল ভোরে একজনসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন, রবিউলের ক্যাডার মো: আব্দুল লতিফ (৪৬), মো: কুরবান আলী (২৪), মাহিন (১৮), বাঁধন (২০) ও জমির মালিক মোজাম্মেল হক কবির (৫২)। গতকাল বিকেলে পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তোলা হলে আদালত সবার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গতকাল সকালে এ সম্পর্কিত ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো: রুহুল কবির খান গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে বলেন, মামলা দায়েরের পরপরই অভিযান চালিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মো: রুহুল কবির খান বলেন, আমাদের কাছে রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য বিষয় নয়। আমরা অপরাধ ও অপরাধী হিসেবে দেখছি। সে যে-ই হোক না কেন, দায় থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা চার্জশিট দেবো। আমরা প্রাথমিকভাবে তার সম্পৃক্ততা পাচ্ছি। এই ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল তা তদন্তে উঠে আসবে। এছাড়া মাদকের ওই কর্মকর্তাকে এই মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। আমরা তার সম্পৃক্ততার বিষয় তদন্ত করে দেখব। বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম রবি এই হত্যা মামলায় ৩ নম্বর আসামি।

রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় এই ঘটনায় ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি, এর কারণ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবীর খান বলেন, হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় তাকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর : গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ গোলাম আজম আসামিদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদের আদালত প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
অর্থ পাচারে জড়িত আ’লীগের ৭০ মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না: তথ্য উপদেষ্টা লেবাননে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর ইসরাইলি হামলা : বিশ্বজুড়ে নিন্দা কালেমাখচিত কালো পতাকা মিছিলের নেপথ্যে কারা বিভক্ত জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না : ডা: শফিকুর রহমান ১০০ টাকার নিচে নেই কোনো সবজি, নিম্নমুখী ডিমের দাম গুলিতে নেসারের বাহুর হাড় টুকরা টুকরা হয়ে গেছে লুটপাটই সাধনের সাধনা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অনেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে : রিজভী নোবেল শান্তি পুরস্কার পেল জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন মিয়ানমার নৌবাহিনীর হাতে বাংলাদেশী জেলে হত্যার প্রতিবাদ ঢাকার

সকল