ভালো নেই শহীদ সুজনের অসহায় পরিবারের সদস্যরা
- বাসস
- ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২১
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে লালমনিরহাট জেলায় যে পাঁচজন শহীদ হয়েছেন তাদের একজন সুজন হোসেন। গত ৫ আগস্ট দুপুরে ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন তিনি।
সুজনের ফোন বন্ধ পেয়ে তার পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন তাকে খুঁজতে থাকেন। গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজাখুঁজির পর মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার লাশের সন্ধান পান প্রতিবেশী মোস্তফা মিয়া। এরপর ৬ আগস্ট সুজনের আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের লোকজন তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী গ্রামের সহিদুল ইসলাম ও রিজিয়া বেগম দম্পত্তির একমাত্র ছেলে সন্তান ছিলেন সুজন হোসেন (২৪)। সরকার পদত্যাগের পর নতুন করে স্বাধীনতা পাওয়ার উল্লাস যখন দেশের চার দিকে বইছে, ঠিক তখনই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান সুজনকে হারিয়ে প্রতিনিয়ত কেঁদে কেঁদে চোখের জল শুকিয়ে ফেলেছেন তার অসহায় বাবা-মা। ভালো নেই সুজনের পরিবারের সদস্যরা। এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পাননি তারা। যা পেয়েছেন তা যৎসামান্যই বলা চলে। সুজনের বাবার জায়গাজমি বলতেও কিছু নেই, মাত্র চার শতাংশ জমির ওপর বাড়ির ভিটা। সেই জমির পাশেই সুজনকে দাফন করা হয়েছে।
সুজনের চার বোন রয়েছে। বোনদের বিয়ে হলেও সবার ছোট বোনের যৌতুকের টাকা বাকি থাকার কারণে প্রায় তিন মাস আগে স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে ঢাকায় যান সুজন। ইচ্ছে ছিল চাকরি করে ছোট বোনের যৌতুকের টাকা পরিশোধ করার। কিন্তু ইচ্ছে আর পূরণ করতে পারেননি তিনি। বরং ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ঢাকা থেকে লাশ হয়ে ফিরতে হলো সুজনকে। সুজন হোসেনের বাবা একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। বর্তমানে কর্মহীন। একমাত্র উপার্জনক্ষম সুজনের এমন মৃত্যুতে পরিবারটি বড় অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। প্রয়োজন পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর। গত ১৩ আগস্ট কেবল জেলা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে শহীদ সুজনের পরিবারকে এক লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।
বোন পাকিজা খাতুন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই। ভাই ছাড়া আমাদের পরিবার অন্ধকার। আমার বিয়ে হয়েছে। ছয় মাসের একটি শিশু আমার কোলে। স্বামীর বাড়ির লোকজন যৌতুকের টাকার জন্য আমাকে বাবার বাড়িতে রেখে গেছে। ভাইতো মারা গেছে, এখন যৌতুকের টাকা কে পরিশোধ করবে?’
সুজনের বাবা সহিদুল ইসলাম বলেন, আর্থিক সাহায্য পেয়েছি কিছু; কিন্তু সেই সাহায্য দিয়ে কি আর আগের মতো চলতে পারবে আমার পরিবার? সবাই তো আর সবসময় খোঁজখবর নেবে না আমাদের। তিনি আরো বলেন, অভাবী সংসারের হাল ধরেছিল আমার একমাত্র ছেলে, আর সেই কলিজা ছেঁড়া ধনকে নির্মমভাবে গুলি করে মেরে ফেলল। ঠিক তার পর থেকে পুরোপুরি থেমে গেছে আমার সংসারের চাকা।
সুজনের মেজো বোন বলেন, ছয় আগস্ট সুজনের লাশ বাড়িতে আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে আমাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা। আমার ভাই কম বয়সে সংসারের হাল ধরে দুই বোনের বিয়ে দিয়েছিল।
বড়খাতা ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহ মোজাব্বের হোসেন বলেন, পরিবারটি খুবই অসহায় ও গরিব। সুজন হোসেন পরিবারটিকে চালাচ্ছিলেন। তার বাবাও প্রতিবন্ধী।
সুজনের মা রিজিয়া বেগম বলেন, আমার কলিজার টুকরা ছেলে আর ফিরে আসবে না, এই চিন্তায় আমার রাতে ঘুম আসে না। তিনি আরো বলেন, সরকার যদি আমাদের সংসারের খোঁজখবর রাখে এবং সাহায্য করে তাহলে আমাদের অসচ্ছল পরিবারটি হয়তোবা আবারো আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেয়ার সব রকম ব্যবস্থা করব আমরা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা