০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
সংস্কার কমিশন প্রধান

বিচার বিভাগে যেন হস্তক্ষেপ না হয়

-


বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেছেন, কমপ্লিট সেপারেশন বলতে কিছু নেই। রাষ্ট্রের তিন অঙ্গকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। তবে, আমরা চাইব বিচার বিভাগে যেন হস্তক্ষেপ না হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সংস্কার কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের তিন অঙ্গকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। কারণ আদালত রায় দিলে তার বাস্তবায়ন করে থাকে সরকার। আবার বিচার বিভাগ না থাকলে দেশ চলতে পারবে না। তবে, বিচার বিভাগের কথা সবাইকে শুনতে হবে। আমরা চাইব যেন হস্তক্ষেপ না হয়। নির্বাহী বিভাগ যাতে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ না করতে পারে, সে বিষয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হবে। রায় পছন্দ না হলে আপিলের সুযোগ আছে। কারণ রায়ে তো দুই পক্ষকে খুশি করা যাবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারক নিয়োগের একটা নীতিমালা করে দেবো। একজন এসে বলবে যে, অমুক আমার চাচা, তাকে জজ বানাতে হবে- এটা যাতে না হয় সে জন্য নীতিমালাটা করব। তিনি আরো বলেন, অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে সংস্কার কমিশন রিপোর্ট প্রস্তুত করবে। তবে, কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করে মতামত নেয়া হবে না। আমরা সুপারিশ দেবো। সেটি নিয়ে হয়তো রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলবে উপদেষ্টা পরিষদ।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য পৃথক সচিবালয় বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, সেপারেশন বলতে কী বোঝালেন? সাংবাদিক বলেন, পৃথক সচিবালয় বিষয়ে সুপারিশ থাকবে কি না? বিচারক বলেন, আপনি তো বললেন স্বাধীনতা, কী স্বাধীনতা আছে আমাদের? সাংবাদিক বলেন, সেই অর্থে স্বাধীনতা নেই। বিচারক বলেন, আমরা সুপারিশ দেবো। এখন আপনি বিচার করলেন, মামলায় রায় পেলেন। রায়টা কার্যকর করবে কে? সাংবাদিক বলেন, সরকার। বিচারক বলেন, তো আমরা সেপারেশন (পৃথক) কিভাবে হলাম? তো সরকার ছাড়া আমরা চলতে পারছি না। সুতরাং এবসলিউট সেপারেশন- এটা আমাদের একটা ভুল ধারণা। এবসলিউট সেপারেশন হবে না। আমাদেরকে এই লেজিসলেশন বলেন, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেন, জুডিশিয়ারি বলেন, আমাদের মিলেমিশে কাজ করতে হবে। করতে হবে যে অন্য যারা আছেন, ওনারা যাতে জুডিশিয়ারিকে সম্মান করেন। আমরা যে রায়টা দিলাম, এটা যদি কার্যকর না হয় তাহলে আমাদের এই খাটাখাটনির কী লাভ হলো?... সুতরাং সেপারেশন জুডিশিয়ারি যদি বলেন কমপ্লিট সেপারেশন অব জুডিশিয়ারি বলতে কিছু নেই। কোনোটাই নেই। অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও চলতে পারবে না যদি কোর্ট না থাকে। বিচার বিভাগ যদি না থাকে দেশ চলতে পারবে না। দেশ চালাতে হলে আপনাকে একটা এজেন্সি থাকতে হবে জুডিশিয়ার, যার কথা সবাইকে শুনতে হবে।

সচিবালয় ছাড়া এই শৃঙ্খলা পুরোপুরি অর্জন হবে কি না প্রশ্নে প্রধান বলেন, এ নিয়ে আলাপ আলোচনা করব। এখন না। এটা আরো কয়েকদিন পরে করব। সেটি হলো আমরা চাই হস্তক্ষেপ যাতে না হয়। নিচের কোর্ট ভুল করল আপিল আদালতে যান। আপিল আদালত ভুল হলে হাইকোর্টে আসেন; কিন্তু যদি আপনি বিক্ষুব্ধ হতেই থাকেন, আর মামলা চালাতে থাকেন তাহলে মামলা তো শেষ হবে না। কারণ দুই পক্ষ কোনো দিন এক হবে না। বিচার এক জায়গায় শেষ হতে হবে। সবাইকে খুশি করে বিচার করা যাবে না। একটা জায়গায় আছে সালিস। এখানে দুই পক্ষ খুশি না, তবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমিও জিতলাম, তুমিও জিতলে এই হলো আর্র্বিট্রেশন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- কমিশনের সদস্য হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাসদার হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিম হোসেন শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক (সুপন)।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল