০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

লেবাননের ১৫০ নিশানায় হামলা ইসরাইলের

-

- খোঁজ মিলছে না ইরানের কুদস ফোর্স প্রধানের
- ইসরাইলের তৃতীয় বড় শহর হাইফায় হিজবুল্লাহর রকেট হামলা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার পর এবার লেবাননে অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল। দেশটিতে একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইলি বাহিনী। গত রোববার থেকে ২৪ ঘণ্টায় লেবাননে ১৫০টির বেশি নিশানায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। আইডিএফ জানিয়েছে, স্থল অভিযান চলাকালে রোববার তারা লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ১৫০টির বেশি নিশানায় হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া তারা হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি দাহিয়েহের বেশ কয়েকটি ভবনের কাছাকাছি বেসামরিক লোকদের জন্য নতুন উচ্ছেদ আদেশ জারি করেছে। এই এলাকাটি লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। টাইমস অব ইসরাইল। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৯৮ এবং ৩৬ ডিভিশনের সাথে সেনারা অভিযান চালিয়ে অস্ত্রাগার টানেল ও হিজবুল্লাহর অন্যান্য স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে এ হামলা চালানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ দিন হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সাথে ইসরাইলি বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। এ ছাড়া তাদের স্থাপনাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

খোঁজ মিলছে না ইরানের কুদস ফোর্স প্রধানের
রয়টার্স জানায়, গত মাসে ইসরাইলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর লেবাননে গিয়েছিলেন ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার ইসমাইল কানি। গত সপ্তাহের শেষ দিকে লেবাননের বৈরুতে ইসরাইলের হামলার পর থেকে ইসমাইল কানির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ইরানের দু’জন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ইরানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, লেবাননের রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর কর্মকর্তা হাশেম সাফিউদ্দিনকে নিশানা করে ইসরাইলের চালানো হামলার সময় ইসমাইল কানি বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলি দাহিয়েতে ছিলেন।
তবে এই ইরানি কর্মকর্তা দাবি করেন, হামলার সময় সাফিউদ্দিনের সাথে ইসমাইল কানি বৈঠক করছিলেন না। হিজবুল্লাহর এক কর্মকর্তা বলেন, গত বৃহস্পতিবার বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলি দাহিয়েতে বোমা হামলা চালায় ইসরাইল। এ হামলার পর তারা সাফিউদ্দিনের খোঁজে যে এলাকাটিতে তল্লাশি চালাবেন, তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, ইসরাইল সেই সুযোগ তাদের দিচ্ছে না। হিজবুল্লাহর কর্মকর্তারা বলছেন, তল্লাশি চালানো গেলে বা তল্লাশি সম্পন্ন হলে তবেই তারা সাফিউদ্দিনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারবেন। তিনি বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন, তা এখন বলা যাচ্ছে না। সাফিউদ্দিনকে হিজবুল্লাহর সাবেক প্রধান নাসরুল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি বিবেচনা করা হচ্ছিল। নাসরুল্লাহ গত ২৭ সেপ্টেম্বর দাহিয়েতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন। ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, ইরান ও হিজবুল্লাহ কোনো পক্ষই ইসমাইল কানির সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। ২০২০ সালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় কুদস ফোর্সের তৎকালীন প্রধান কাসেম সোলাইমানি নিহত হন। তিনি নিহত হওয়ার পর ইসমাইল কানিকে ইরানের রেভুল্যুশনারি গাডর্স কোরের বৈদেশিক সামরিক গোয়েন্দা শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান করে তেহরান।

ইসরাইলের তৃতীয় বড় শহর হাইফায় হিজবুল্লাহর রকেট হামলা
রয়টার্স জানায়, লেবানন ও ফিলিস্তিনের গাজায় গত রোববারও নির্বিচার হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। এর মধ্যেই ইসরাইলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হাইফায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ। ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উপেক্ষা করে হাইফা ও তিবেরিয়াস শহরে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহর রকেট। আহত হয়েছে ১০ জন। ইসরাইলে হামাসের হামলার এক বছর পূর্ণ হলো গতকাল সোমবার। এর পরপরই গাজায় পাল্টা হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী।
শুরু হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। গাজায় এখনো ইসরাইলের চাপিয়ে দেয়া সেই যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ এখন আর শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ নেই, বরং লেবানন-সিরিয়ায় একের পর এক হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে লেবানন ও গাজায় হামলা এবং হাইফায় পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটল। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, রোববার হিজবুল্লাহর রকেটের আঘাতে হাইফায় বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমের খবর, হাইফা ছাড়াও দেশটির তিবেরিয়াস শহরে রকেট হামলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০ জন আহত হয়েছেন। তবে হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, তারা হাইফার দক্ষিণাঞ্চলের একটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ‘ফাদি ১’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

এ দিকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে রোববার জোরালো বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা সদর দফতর আর অস্ত্রের মজুতাগারে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। এ ছাড়া লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও বেকা অঞ্চলেও হামলা হয়েছে। গাজার হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরান। হামাস-হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জবাবে গত সপ্তাহে ইসরাইলি ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। এর মধ্য দিয়ে পুরো অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট রোববার বলেন, দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় করে কাজ করলেও ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে তার দেশ। আগামী বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সাথে ইয়োভ গ্যালান্টের বৈঠক করার কথা রয়েছে। এর আগে সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, সম্ভাব্য সবকিছু নিয়েই আলোচনা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement