০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

হাসিনার আমলে নিয়োগ দেয়া ৩০ বিচারপতির অপসারণ দাবি

-

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ দেয়া হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত ৩০ জন বিচারপতিকে দুর্নীতিবাজ, দলকানা এবং ফ্যাসিবাদের পক্ষে রায় প্রদানকারী আখ্যা দিয়ে তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ বা অপসারণ চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে ‘চার্টার অব ডিমান্ড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানববন্ধন থেকে তাদের অপসারণের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। আগামী ১৮ অক্টোবরের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের এসব দলবাজ বিচারপতিদের পদত্যাগ বা অপসারণ চেয়ে প্রধান বিচারপতি বরাবরে ‘চার্টার অব ডিমান্ড’ দিয়েছেন আন্দোলনকারী আইনজীবীরা।
মানববন্ধনে সিনিয়র আইনজীবী মহসীন রশিদ বলেন, এখনও ৩০ দলবাজ বিচারপতিদের বিদায় করতে পারেনি, এটা সরকারের ব্যর্থতা। সরকার ইচ্ছে করলে তাদের বিদায় করতে পারে। আমরা কাউকে টেনে হেঁচড়ে নামাতে চাই না, এটা ভালো নজির হবে না। বিচারপতিদের বলবো, আপনারা দয়া করে পদত্যাগ করুন। তা না হলে আমরা আপনাদের নামাতে বাধ্য হবো, সেটা ভালো নজির হোক বা খারাপ হোক।
আইনজীবী মামুন মাহবুব বলেন, ৩০ বিচারপতি নিয়োগ পাওয়ার পর এবং শপথ নেয়ার পর ইন্টেলেকচ্যুয়াল দুর্নীতি করেছে। সরাসরি শেখ হাসিনা, শেখ তাপস এবং ফ্যাসিবাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। ফ্যাসিবাদকে জিইয়ে রেখেছে। তারা দলীয় আনুগত্য প্রকাশ করেছে, সেই তালিকা আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে দিয়ে এসেছি। প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত আন্তরিক।
তিনি বলেন, কিভাবে সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিরা পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন সেটা সবাই জানে। আমরা বার বার এই চত্বরে আমাদের ছাত্র ভাইদের কষ্ট দিতে চাই না। জনগণকে কষ্ট দিতে চাই না। আশা করি ১৮ অক্টোবরের মধ্যে বিচারপতিরা পদত্যাগ করবেন। দুই ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে ২০ জন হোক, ৩০ জন হোক বা ৪০ জন হোক বিচারপতি পদত্যাগ করবেন এবং সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে ৬০ জন যোগ্য বিচারপতি নিয়োগ করা যায়। বারের এবং লোয়ার জুডিশিয়ারি থেকে।

আইনজীবী জুলফিকার আলী জুনু বলেন, বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর বিচারপতিরা বসে আছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন বলে এমন লোককে হাইকোর্টের বিচারপতি বানানো হয়েছে। আরেকজন বিচারপতি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছেন। তাকে পুরস্কারস্বরূপ হাইকোর্টের বিচারপতি বানানো হয়েছে। এভাবে অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, আইনজীবী শাহ আহমেদ বাদল, কাজী জয়নাল আবেদীন, সরোয়ার হোসেন, এম আশরাফুল ইসলাম আশরাফ প্রমুখ।
চার্টার অব ডিমান্ড: মানববন্ধন শেষে সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশিদ ও সৈয়দ মামুন মাহবুবের নেতৃত্বে আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতিদের অপসারণে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধান বিচারপতিকে আইনজীবীদের চার্টার অব ডিমান্ড দেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আমরা আপনাকে জানাতে পেরে গর্বিত যে, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপনার গৌরবময় মিশন এবং দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা হলো ‘জুলাই বিপ্লব, ২৪’ এর ঐতিহাসিক এবং অনন্য বিপ্লবের ফসল। তাজা রক্তের বিনিময়ে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আপনি এখন আমাদের বিচার বিভাগের অভিভাবক। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে হাইকোর্ট বিভাগ ও বিচার বিভাগীয় প্রশাসন এবং অধঃস্তন বিচার বিভাগে (বিচারক হিসেবে বসে থাকা মানুষগুলোকে যারা (কিছু বিচারক) ফ্যাসিবাদী শাসনের সমর্থক ও সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে)। বিচারকের আসনে যখন তাদেরকে আমরা দেখতে পাই তখন আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এসব বিচারক দায়িত্ব পালনে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন। তাই বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে আপনাদের কাছে আমাদের প্রথম ও প্রধান অনুরোধ এবং দাবি জানাচ্ছি, যে রক্তের ঋণ শোধের জন্য ‘জুলাই বিপ্লব, ২৪’ সংঘটিত হয়েছিল তার জন্য রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা ও দুর্নীতির ভিত্তিতে এসব দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতিদের অবিলম্বে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। যাতে করে ‘জুলাই বিপ্লবে’ প্রাণ উৎসর্গ ও রক্তের বলিদানকারীর জীবনকে অর্থবহ করে তোলে।

 


আরো সংবাদ



premium cement