০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ভাড়ার বিদেশী জাহাজে জ্বালানি তেল পরিবহনের উদ্যোগ

ট্যাংকারে অগ্নিকাণ্ডে তদন্ত কমিটি
-


দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বিদেশী জাহাজ ভাড়া করে বহির্নোঙর থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবহনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে কুতুবদিয়া এ্যাংকরেজে নোঙররত দুই মাদার ট্যাংকার থেকে লাইটারিং শুরু করে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সরবরাহ দেয়া সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। একই সাথে প্রায় ৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের (এসপিএম) মাধ্যমে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন দ্রুত শুরু করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা।
আবুধাবি হতে আমদানিকৃত প্রায় ৯৮ হাজার ৩৮৩ টন মারবান ক্রুড অয়েলবাহী মাদারভ্যাসেল ‘ওমেরা লিগ্যাসি’ গত ১৭ সেপ্টেম্বর বহির্নোঙরের কুতুবদিয়ায় আগমন করে। এ ছাড়া এক লাখ ২১৭ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েলবাহী জাহাজ ‘নরডিক কেষ্টর কুতুবদিয়া এ্যাংকরেজে নোঙর করে ৪ অক্টোবর। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ওমেরা লিগ্যাসি হতে ক্রুড অয়েল লাইটারিংয়ের মাধ্যমে খালাস শুরু হয়। মাদার ট্যাংকার ওমেরা লিগ্যাসি হতে ১২ হাজার টন ক্রুড অয়েল নিয়ে এমটি বাংলার জ্যোতি বন্দরের ডলফিন অয়েল জেটি-৭ এ নোঙররত অবস্থায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে তিনজন নিহত হয়। এর ৫ দিনের মাথায় এমটি বাংলার সৌরভে গত শুক্রবার মধ্যরাতে বহির্নোঙরে অগ্নিদুর্ঘটনায় আরো একজন নিহত হন। এতে দু’টি ট্যাংকারই জ্বালানি তেল পরিবহনের উপযোগিতা হারায়। ফলে পরপর দু’টি ট্যাংকারে অগ্নিকাণ্ডে জনমনে ও খোদ জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনও এর পেছনে নাশকতার সন্দেহ করছেন।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলার জ্যোতি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিপিসি গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বিএসসির লাইটার জাহাজ এমটি বাংলার জ্যোতি ও এমটি বাংলার সৌরভ ব্যবহার করে ক্রুড অয়েল লাইটারিং কার্যক্রম পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে। ফলে আমদানি করা ক্রুড অয়েল খালাসের জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন অবিলম্বে চালু করা প্রয়োজন বলে তারা সুপারিশ করে। এ লক্ষ্যে অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণে (ওএন্ডএম) ঠিকাদার নিয়োগ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা গেলে নিরাপদে ক্রুড অয়েল খালাস করা সম্ভব হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভ নামের তেলবাহী ট্যাংকার দু’টিতে অগ্নিকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের-বিপিসি আমদানিকৃত জ্বালানিতেল সরবরাহ কার্যক্রম ঝুঁকিতে পড়ে। যেহেতু ওই দু’টি ট্যাংকারের বিকল্প কোনো অয়েল লাইটারিং জাহাজ এখন পর্যন্ত নেই। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও বিপিসি কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেন। যেহেতু বিপিসির আমদানিকৃত জ্বালানিতেল পরিবহনে বিএসসির চুক্তি রয়েছে সেজন্য বিএসসি জরুরি ভিত্তিতে বিদেশী জাহাজ চার্টার করে জ্বালানি তেল পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেয়।

বিএসসি ও বিপিসির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার ইন্দোনেশীয় পতাকাবাহী অয়েল ট্যাংকার এমটি সাংগাঁও গত ৪ অক্টোবর ফার্নেস অয়েল নিয়ে চট্টগ্রাম বহির্নোঙরের চার্লি এ্যাংকরেজে নোঙর করে। ফার্নেস অয়েল খালাস শেষে ওই ট্যাংকারটি দিয়েই বহির্নোঙরের কুতুবদিয়া এ্যাংকরেজে নোঙররত দু’টি মাদার ট্যাংকারে আনা প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল খালাস করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জিএম (চার্টারিং) ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, কুতুবদিয়ায় নোঙররত মাদার ভেসেল থেকে জ্বালানি তেল খালাসে বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভের বিকল্প হিসেবে বিদেশী ট্যাংকার চার্টারিং করা হচ্ছে। কালকে থেকে জ্বালানি তেল খালাস শুরু করা যাবে বলে তিনি আশা করেন।
এ দিকে দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শরীফ হাসনাত নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, জ্বালানি তেল পরিবহনে স্বল্প সময়ের জন্য ব্যাহত হওয়ার প্রভাব এই মুহূর্তে রিফাইনারিতে পড়ছে না। পরিশোধনের জন্য অন্তত এক মাসের ক্রুড অয়েল মজুদ থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে পরিবহন ব্যাহত হলেই কেবল রিফাইনারির সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হবে। তিনি এসপিএম দ্রুত চালুর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জ্বালানি সরবরাহ অক্ষত রাখা জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রিফাইনারি ক্রুড গ্রহণ করতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান।

ট্যাংকারে অগ্নিকাণ্ডে তদন্ত কমিটি : এ দিকে পর পর জ্বালানি তেল লাইটারিংয়ে নিয়োজিত দু’টি ট্যাংকারে অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। তিনি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের চট্টগ্রামের প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবং পরিচালকসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি জানান, সিকিউরিটি এক্সপার্ট যারা অয়েল ট্যাংকারে কাজ করেছেন এবং বিএসসির প্রতিনিধিসহ ১০ জনের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বলা যাবে কেন এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উপদেষ্টা বলেন, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় তেলবাহী দ্বিতীয় জাহাজে বিস্ফোরণে একজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর আগের বিস্ফোরণেও প্রাণহানি ঘটেছে যেটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। এরা খুবই দক্ষ ব্যক্তি ছিলেন, তাদের অভাব পূরণ হওয়ার নয়।
উপদেষ্টা বলেন, যেহেতু দুটো জাহাজ বিস্ফোরণের কারণে অকেজো হয়ে গেছে তার বিকল্প হিসেবে অন্যান্য জাহাজের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে যাতে লাইটারিং কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। তিনি কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী এবং পোর্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে গিয়ে আগুন নিভিয়েছে এবং সেখানে আটকে পড়া ৪৮ জনকে উদ্ধার করতে পেরেছে। নেভাল চিফ, বন্দর চেয়ারম্যান, কমান্ডার থেকে শুরু করে সবার সাথে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমি তাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং একজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement