০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
বিদেশে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়

এক অপরাধীকে আটক করে পুলিশে দেয়ায় নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়েছে

-


বিদেশের মাটিতে অপহরণ। অতঃপর মারধর করে সেই ভিডিও আত্মীয়-স্বজনকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায়। এমন এক চক্রের সদস্যকে আটক করে বিপাকে পড়েছে ভুক্তভোগীদের স্বজনরা। ওই সদস্যকে আটক করায় উল্টো নির্যাতন বেড়েছে বিদেশের মাটিতে অপহৃতদের ওপর।
গত ৫ অক্টোবর বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার রায়েরবাগে ভুক্তভোগী পরিবারের অনুরোধে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মাসুদ মৃধা নামে মানবপাচারকারী দলের এক সদস্যকে আটক করা হয়। পরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে জানানো হলে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর ওই চক্রের সদস্যকে আটক করে এসআই নাহিদ ডেমরা থানায় নিয়ে যান।

জানা গেছে, গত মাসের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে তিনজনকে লিবিয়া পাঠানো হয়। ওখানে নেয়ার পরে মানবপাচারকারীরা তাদেরকে আটকে রেখে মুক্তিপণ বাবদ ৩৬ লাখ টাকা দাবি করে। পরে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা, চলতি মাসের ১ অক্টোবর দুই লাখ, ২ অক্টোবর আট লাখ, ৩ অক্টোবর এক লাখ টাকা নেয়। এ ছাড়া ডলারে নেয় দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া নগদ নেয় তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। মোট ২৫ লাখ টাকা দেয়ার পরেও আরো ৩০ লাখ টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ভুক্তভোগীরা হলেন, মাদারীপুর সদর থানা এলাকার শুভ মোল্লা (২২) পিতা ইসহাক মোল্লা গ্রাম নয়াচর, ইউনুস ফরাজি (৩৮) পিতা ইব্রাহিম ফরাজি গ্রাম নয়াচর এবং রুবেল হোসেন (৩৮) পিতা সালাম ধুমকি, গ্রাম কুমড়াখালী।
ভুক্তভোগী শুভর পিতা ইসহাক মোল্লা জানান, গত মাসের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় উদ্দেশে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রওয়ানা হয়ে যায়। ঠিক সন্ধ্যা ৬টায় ফ্লাইট ছাড়ে। ২৫ সেপ্টেম্বর ছেলেকে মারধর করার একটি ভিডিও আমার মোবাইলে পাঠায়। পরে বিভিন্ন সময়ে জায়গাজমি বিক্রি করে সাত লাখ টাকা দেই। আরো ১০ লাখ না দিলে ছেলেকে মেরে ফেলা হবে বলে লিবিয়া থেকে জসিম ওরফে জুয়েল নামে একজন জানান। তিনি বলেন, ছেলে শুভকে ইতালি পাঠাবো অভাবমোচন হবে। তাই আমার ছোট ভাই ওমর মোল্লার মাধ্যমে দালাল মাসুদের কাছে তুলে দেয়া হয়। আজ সন্তান আমার আটক ও মারধরের শিকার হচ্ছে। ভুক্তভোগী ইউনুস ফরাজির বাবা ইব্রাহিম ফরাজি বলেন, দালাল মাসুদের মাধ্যমে ছেলেকে ইতালি পাঠাবো কত খুশি ছিল মনে। তবে লিবিয়া নিয়ে এখন মুক্তিপণ চায়। দু’বারে আট লাখ টাকা দেই। তারপরও আমার ছেলেকে মারধর করছে বলে হুঁশ হারান তিনি।
ভুক্তভোগী রুবেল হোসেনের পিতা সালাম বলেন, গত মাসের ১৯ তারিখ লিবিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা দেয় ছেলে রুবেল। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর একটা ভিডিও পাঠায় কে বা কারা। পরে দেখি হাত-পা বেঁধে আমার সন্তানকে মারছে। পরে দালাল মাসুদের মাধ্যমে ছয় লাখ টাকা পাঠাই। তারপরেও এখনো আরো ১০ লাখ টাকা চায়। এত টাকা কোথায় পাবো।

এ দিকে শুভ, ইউনুস ও রুবেলকে ওমর মোল্লার মাধ্যমে মাসুদের হাতে ততুলে দেয়া হয়। এ সময়ে এলাকার ছেলে এমদাদুলও ছিল। ওমর মোল্লা নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের দালাল মাসুদের মাধ্যমে মাদারীপুর নয়াচরের দু’জন এবং একই ইউনিয়নের কুমড়াখালী এলাকার একজনকে ইতালি পাঠানোর উদ্দেশ্যে লিবিয়া যায়। হঠাৎ ২৫ সেপ্টেম্বর ৩৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কোনো উপায় না দেখে বিষয়টি দেশের দালাল মাসুদকে জানালে সে লিবিয়ায় যোগাযোগ করেছে বলে জানায়। পরে মুক্তিপণের টাকা দিতে বলে। গত ১৫ দিনে ২৫ লাখ টাকা দালাল মাসুদের মাধ্যমে দেই। পরে আরো ৩০ লাখ টাকা দাবি করলে দালাল মাসুদের সাথে যোগাযোগ করি এবং তাকে চাপ দেই। পরে জানতে পারি লিবিয়ায় যে দালালে মারধর ও মুক্তিপণ চায় সে আর কেউ নয়, সে হলো দালাল মাসুদের আপন বড় ভাই।
তিনি বলেন, এসব জানতে পেরে ৫ অক্টোবর মাসুদকে ফোন দিলে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকার রায়েরবাগ যাত্রী ছাউনির ওখানে যেতে বলে। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে তাকে আটক করি। দুঃখের বিষয় হলো সাড়ে ছয় ঘণ্টা পরে পুলিশ আসে। পরে এসআই নাহিদ ডেমরা থানায় নিয়ে যায় অপরাধীকে। অথচ থানায় গেলে মানবপাচারকারী মাসুদকে অন্য আরেক রুমে নিয়ে যায় ওসি ও দারোগা নাহিদ। পরে বের হয়ে ওসি ফারুক আহমেদ আমাদের জানান, ঘটনা অন্যখানে। তাই এ থানায় মামলা নেয়া যাবে না। আসামি আপনারা নিয়ে যান। তখন রাত ১২টা ৪০ মিনিট। এ সময় মানবপাচারকারী মাসুদ পুলিশের সামনেই হুমকি দিয়ে বলে তার কিছুই করতে পারবো না। থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে অপহরণ ও মুক্তিপণের কোনো মামলা দায়ের না করে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। এ দিকে মাসুদকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ায় উল্টো লিবিয়ায় অপহৃতদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। তারা নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে সেই ভিডিও পাঠিয়ে দিয়েছে স্বজনদের কাছে।


আরো সংবাদ



premium cement