প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষা উপেক্ষিত, আলাদা শিক্ষক নিয়োগের দাবি
১৫ দিনের সময় দিয়ে লিগ্যাল নোটিশ- শাহেদ মতিউর রহমান
- ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৯, আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৭
শিশুকাল থেকে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব থাকলেও স্কুল পর্যায়ে সব সময়ই বিষয়টি রয়েছে উপেক্ষিত। সম্প্রতি প্রথম শ্রেণী থেকে ধর্ম শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে পৃথক ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগেরও দাবি উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার প্রাথমিক স্কুলে আলাদা ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য উকিল নোটিশ দিয়েছেন এক আইনজীবী। দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা নিতে সরকারকে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো: শহিদুল ইসলাম মিলন এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।
এদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও শিশুদের শিক্ষার মূল ভিত্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টি রয়েছে উপেক্ষিত। এখানে শিশুদের ধর্ম শিক্ষার জন্য আলাদা কোনো শিক্ষক নেই। অন্যান্য বিষয়ের মতোই ধর্ম বিষয়টিও শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। কিন্তু বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য পৃথক ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি উঠেছে। সূত্র জানায়, গতকাল দেয়া উকিল নোটিশে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিটি শিশুর অধিকার। জীবন জীবিকার শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিশু পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা লাভ করে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা পড়ানো হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত ধর্ম শিক্ষকের অভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। অনেক স্কুলে হিন্দু শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন ইসলাম ধর্ম শিক্ষা। কারণ ওইসব স্কুলে কোনো মুসলিম শিক্ষক নেই। অন্যদিকে একই কারণ ও পরিস্থিতিতে মুসলিম শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন হিন্দু ধর্ম শিক্ষা। কিছু স্কুলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষকের অভাবে ধর্ম শিক্ষার ক্লাসও নিয়মিত হয় না। বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা গ্রহণের সাথে পবিত্র কুরআন মাজিদ শিখা জড়িত আছে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো ধর্মীয় শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের আরবি পড়া এবং লেখা ভালোভাবে শেখানো সম্ভব হয় না।
অপরদিকে আমাদের দেশের সব মুসলমান মা-বাবারই ইচ্ছা থাকে তার সন্তান পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত শিখবে এবং পড়বে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পবিত্র কুরআন শিক্ষার ভালো শিক্ষক না থাকায় তারা তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে মক্তব-মাদরাসায় পাঠান। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (সরকারি/বেসরকারি) ধর্মীয় শিক্ষকের পদ আছে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ না থাকায় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভালোভাবে আরবি শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তাদের আরবি পড়া এবং লেখা বুঝতে সমস্যা হয়, ফলে তাদের ধর্ম এবং নৈতিক শিক্ষা যথাযথ হয় না। তাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক পদে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে কামিল ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি, ইসলামী স্টাডিজ, দাওয়াহ ও কুরআনিক সায়েন্স ডিসিপ্লিন থেকে মাস্টার্স এবং কওমি মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিধারীদের ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিলে তারা ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি অন্য বিষয়েও পড়াতে সক্ষম হবেন।
অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হলে মাদরাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং শিশুদের কোমল হৃদয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ, ইভটিজিংসহ সামাজিক অপরাধের প্রতি ঘৃণা তৈরি হবে। জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগর শিশুদের নৈতিক, মানবিক ও আদর্শ ভিত্তির ওপর গড়ে তোলাও সম্ভব হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা