০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

চট্টগ্রাম বন্দরে এবার বাংলার সৌরভে আগুন, নিহত ১

নাশকতার সন্দেহ বিএসসির
-

চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন এমটি বাংলার জ্যোতি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের রেশ না কাটতেই এবার বন্দরের বহির্নোঙ্গরের চার্লি অ্যানকরেজে বিএসসির আরেক তেলবাহী জাহাজ বাংলার সৌরভে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গত শুক্রবার মধ্যরাতে এই অগ্নিকাণ্ডে একজন নিহত হয়েছেন। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৪৭ নাবিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে।
এ দিকে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে বিপিসির আমদানিকৃত অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবাহি দু’টি জাগাজে আগুন লাগার ঘটনা পরিকল্পিত নাশকতা কি না তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে। দেশের জ্বালানি তেলের সাপ্লাই চেন ব্যাহত করতেই এমন রহস্যজনক আগুন লাগছে বলে কেউ কেউ সন্দেহ করছেন। খোদ বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমোডর মাহমুদুল মালেকও শুক্রবার মধ্যরাতের অগ্নিকাণ্ডকে নাশকতা বলে সন্দেহ করছেন।
গতকাল শনিবার সকালে বিএসসির প্রধান কার্যালয়ে ট্যাংকার দুর্ঘটনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই সন্দেহ পোষণ করেন।

কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, দুর্ঘটনার আগে একটি নৌযান বাংলার সৌরভ ট্যাংকারের পাশ দিয়ে ছুটে যায়। এরপরই চারটি জায়গায় স্ফুলিঙ্গ হয়। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত যেভাবে হয়েছে, তাতে নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। ঘটনা তদন্তে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমটি বাংলার সৌরভে দুর্ঘটনায় নিহতের নাম সাদেক মিয়া (৫৯), বাড়ি নোয়াখালীতে। হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ৪৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার বন্দরের ডলফিন অয়েল জেটিতে নোঙ্গররত অবস্থায় বিএসসির আরেক ট্যাংকার এমটি বাংলার জ্যোতিতে বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়েছিলেন। এ নিয়ে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে দু’টি অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যু হলো।
কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, দু’টি ট্যাংকারকেই জ্বালানি তেল পরিবহন থেকে প্রত্যাহারে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এমটি বাংলার সৌরভের এটি ছিল শেষবারের মতো জ্বালানি তেল পরিবহন। দুর্ঘটনার সময় ট্যাংকারটিতে ১১ হাজার ৫৫ টন জ্বালানি তেল ছিল। বন্দরের ডলফিন অয়েল জেটিতে গতকাল শনিবার সকালে এসব তেল খালাসের কথা ছিল। তার আগেই মধ্যরাত সাড়ে ১২টার দিকে ট্যাংকারটির ডেকে চারটি জায়গায় স্ফুলিঙ্গ দেখা যায়। এরপরই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন্দরের টাগবোট দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের কারণে ৪৭ জনকে জীবিত উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। ট্যাংকারের যেখানে জ্বালানি তেল রয়েছে, সেখানে আগুন লাগেনি। এখন ট্যাংকারটি থেকে জ্বালানি তেল স্থানান্তরের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

এ দিকে জালানি সেক্টর সংশ্লিষ্টরাও পরপর দু’টি ট্যাংকারে অগ্নিকাণ্ডকে নাশকতা হিসেবে সন্দেহ করছেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা সক্রিয় রয়েছে। তাদের মতে যেহেতু বহির্নোঙ্গর থেকে ক্রুড অয়েল পরিবহনে এই দু’টি জাহাজের বিকল্প এখন পর্যন্ত নেই, সে জন্য দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ব্যাহত করতে পরিকল্পিত নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে বন্দর চ্যানেল ও বহির্নোঙ্গরে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি পর পর দু’টি অয়েল ট্যাংকারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি না তা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
এ দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদর দফতরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো: সিয়াম-উল-হক জানিয়েছেন, রাত ১২টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রামের বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত বিএসসির অয়েল ট্যাংকার বাংলার সৌরভ জাহাজে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ সময় কোস্ট গার্ডের টাগবোট বিসিজিটি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম আরম্ভ করে। তাৎক্ষণিকভাবে কোস্টগার্ড জাহাজ বিসিজিএস শ্যামল বাংলার চারটি উদ্ধারকারী দল এবং কোস্ট গার্ডেল তিনটি মেটাল শার্ক ঘটনাস্থলে গিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজের সর্বমোট ৪৮ জন ক্রুকে উদ্ধার করতে সম হয়। উদ্ধারকৃত ক্রুদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আনুমানিক রাত ২টা ৩৫ মিনিটে কোস্ট গার্ড টাগ বিসিজিটি প্রমত্ত, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর টাগ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের টাগ এর দুই ঘণ্টার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানায় বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভ নামে তেলবাহী দু’টি ট্যাংকার জাহাজ রয়েছে। এগুলো সাগরে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজ থেকে তেল নিয়ে বন্দরে পৌঁছানোর কাজ করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement