০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
সাবেক সেনাসদস্যদের বিশেষ সেমিনার

সশস্ত্রবাহিনীতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে কমিশন গঠনের দাবি

-

বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে একটি সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন রাজনৈতিক কারণে বরখাস্ত ও নিপীড়িত হওয়া সাবেক সেনা কর্মকর্তারা।
‘বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্রবাহিনী-বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা’ শীর্ষক এক বিশেষ সেমিনারে সশস্ত্রবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা এ দাবি জানান। গতকাল রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন হলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজনৈতিক কারণে বরখাস্ত ও বৈষম্যের মাধ্যমে নিপীড়িত কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল এবং বঞ্চিতদের পুনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তা।
ব্রিগেডিয়ার (অব:) জেনারেল হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ হাসান, লে. কর্নেল হাসিনুর রাহমান, লে. কর্নেল শাহির বীর প্রতীক, কমান্ডার মোহাম্মদ শাহরিয়ার আকন, কমান্ডার নেসার আহমেদ জুলিয়াস, মেজর আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহ খান, ক্যাপ্টেন হেফাজ উদ্দিন, ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
অনুষ্ঠানে কী-নোট প্রতিবেদনে উপস্থাপন করেন কমান্ডার (অব:) নেসার আহমেদ জুলিয়াস। এতে তিনি সংস্কারের রূপরেখা উল্লেখ করে বলেন, সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চর্চা বন্ধ এবং তাদের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা অবিচারের শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি সম্মান ও ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। এ সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রথমে আমাদের অবশ্যই বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের প্রতি সংঘটিত অন্যায়কে স্বীকার করতে হবে। এ অন্যায়ের স্বীকৃতি দেয়াই হবে পুনরুদ্ধারের প্রথম পদক্ষেপ।

সংস্কারের বিষয়ে তিনটি দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথমে- সরকারের উচিত দ্রুত একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা, যার মাধ্যমে নির্যাতিত কর্মকর্তাদের বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করে ন্যায়বিচার দেয়া হবে। পুনর্বাসনের মাধ্যমে তারা যেন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে অবদান রাখতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নির্যাতিত কর্মকর্তাদের জন্য একটি আর্থিক পুনর্বাসন প্যাকেজ তৈরি করা, যার মাধ্যমে তারা তাদের পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। বৈষম্যের শিকার হওয়া কর্মকর্তাদের সব পেনশন ফেরত দেয়া এবং যাদের চাকরির বয়স রয়েছে তাদেরকে চাকরি পুনর্বহাল করা। সবশেষে একটি নিরপেক্ষ সংস্কার কমিশন গঠন করে বিদ্যমান সামরিক আইনে মানবাধিকারসহ অন্যান্য সাংঘর্ষিক আইনের পরিবর্তন করা, যেন আর কোনো সরকার সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে।
তিনি বলেন, আমাদের দাবিগুলোর বিষয় আমলে নেয়ার জন্য গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছিলাম। রাষ্ট্রীয় বাসভবনের সামনে সকালবেলা জনগণ রাস্তায় শুয়ে পড়লে বিকেলবেলায় কমিশন হয়ে যাচ্ছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো অদ্যাবধি আমরা ওনার কাছ থেকে বা বাহিনী প্রধানদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। ৫ আগস্টের পরে যত দুর্নীতিবাজ তারকা চিহ্নিত অফিসারের কীর্তি জাতির সামনে উন্মচিত হয়েছে, এখানে ২০০ জন অফিসারের অপরাধকে একসাথে করলেও তার ১০০ ভাগের ১ ভাগ হবে না।
বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমরা দেশপ্রেমিক সামরিক সদস্য। আমাদের কথাগুলো শুনুন, কিভাবে নির্বিচারে আঙুলের বদলে হাত কাটা হয়েছে, হাত এর বদলে মাথা কাটা হয়েছে। আমরা চাই না, আমাদের মতো আর কোনো সহকর্মীর প্রতি অবিচার হোক, গুম-খুন হয়ে যাক, রাজনীতি-সরকার-বৈষম্যের শিকার হয়ে কোনো পরিবার রাস্তায় নামুক।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement