০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সরকারি খাদ্যগুদামের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

-

দেশের খাদ্যগুদামগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। খাদ্যভবনের একাধিক সূত্র বলেছে, অধিকাংশ গুদামের দায়িত্বে যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন তারা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি খাদ্যগুদাম থেকে খাদ্যশস্য লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারি খাদ্যগুদামের ৪০০ মে.টন চাল গায়েবের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে খাদ্যভবন সূত্র বলেছে, গত ৩ অক্টোবর গ্রেফতারকৃত সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্রের অবৈধ নিয়োগের ওসিএলএসডি খাদ্য পরিদর্শক মো: ফেরদৌস এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ৩ অক্টোবর রাতে ওই খাদ্যগুদাম সিলগালা করেছেন। বিগত আওয়ামী সরকারের সময় এমপি-মন্ত্রীর ডিও লেটারে ও সুপারিশে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে। এদের সাথে মিশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতারা এখনো সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে আওয়ামী সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তাদের বেপরোয়া সিন্ডিকেট বাধাহীনভাবে গুদামের খাদ্যশস্য লুটপাট অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ মিলেছে। বিগত সরকারের সময়কালে সরকারি খাদ্যগুদামে মাগুরা জেলায় ৫৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫২.৭৮ টাকা মূলের খাদ্যশস্য, মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া খাদ্যগুদামের ২৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য; ভোলা সদর খাদ্যগুদামের ৫০ মেট্রিক টন চাল, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ খাদ্যগুদামের ১৫০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ না করেও ভুয়া কাগজ তৈরি করে ৪১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন খাদ্যগুদামের এক হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য; বরিশালের হিজলা খাদ্যগুদামের ১২ মেট্রিক টন চাল; রংপুর সদর খাদ্যগুদামের ১৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য । দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগি গুদাম থেকে ৩১৯ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য, গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি খাদ্যগুদামে ২০০ মেট্রিক টন চাল ও গম, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্যগুদামের ৩২৯ মেট্রিক টন চাল উধাও হয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্যের এরূপ আত্মসাতের বিষয়ে পরস্পর আলোচনা সমালোচনা রয়েছে। প্রতিনিয়ত খাদ্যশস্য ( ধান, চাল, গম, আটা) ভৌতিকভাবে সরকারি খাদ্যগুদাম হতে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। পার পেয়ে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজরা।

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদারের অসংখ্য অবৈধ নিয়োগের ওসিএলএসডি তখনো বহাল তবিয়তে। খন্দকার সেলিম হোসেন নামের একজনকে ঢাকার সাভার এলএসডি হতে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে গাজীপুর জয়দেবপুর এলএসডিতে পদায়ন করা হয়। কিন্তু মন্ত্রীর একান্ত আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত খন্দকার সেলিম হোসেনকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খাদ্য অধিদফতর কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি নীতিমালা, ২০১৯ (সংশোধিত-২০২২) ভঙ্গ করে পূর্ববর্তী কর্মস্থল ঢাকা সাভার খাদ্যগুদামে ওসিএলএসডি পদায়ন করা হয়। খন্দকার সেলিম হোসেন, গুদাম কর্মকর্তা অবৈধভাবে এখনো সাভার খাদ্যগুদামে বহাল তবিয়তে। এরা খাদ্যশস্য- ধান, চাল, গম, আটার সঙ্কট কৃষ্টি ও মূল্য বৃদ্ধি করে খাদ্য বিভাগকে অস্থিতিশীল করার কাজে তৎপর রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের অনেকে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। এমনকি, খাদ্যগুদামের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে নিজেদের দাবি-দাওয়া জানাতে প্রতিদিন খাদ্য ভবনে হাজির হচ্ছেন। মিছিল-মিটিং করছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement