০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

বৈষম্যের বিরুদ্ধে নামছেন প্রশাসন ছাড়া সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা

-

দেশজুড়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সবাই যেখানে একজোট সেখানে খোদ সরকারি বিভিন্ন ক্যাডারভিত্তিক কর্মকর্তাদের মধ্যেই বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। তবে এমন অভিযোগ এবারই নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈষম্যের বীজ জিইয়ে রাখা হয়েছে। শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরই সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। ফলে মোট ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে প্রশাসন ছাড়া বাকি সব ক্যাডারের কর্মকর্তারাই এখন একজোট হয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বৈষম্যের শিকার বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা জানান, জনবান্ধব রাষ্ট্র গঠন এবং বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর গত ৩১ আগস্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের কাছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করে কেমন জনপ্রশাসন হওয়া উচিত সে বিষয়ে বক্তব্য দীর্ঘদিন বিভিন্ন সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতায় আমরা উপদেষ্টামণ্ডলীর সামনে উপস্থাপন করেছি এবং তারা আমাদের দাবিকে যৌক্তিক বলে মতামতও দিয়েছেন।
এর আগেও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেগুলো তাদের দিয়েই করা হয়েছিল, যারা নিজেদের সুবিধার্থে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি করেছেন। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তারা। এ নিয়ে গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা। উপস্থিত ছিলেন বিসিএস তথ্য ক্যাডারের মোহাম্মদ ওমর ফারুক, কৃষি ক্যাডারের মো: আরিফ হোসেন, শিক্ষা ক্যাডারের ড. মুহাম্মদ মফিজুর রহমান, বিসিএস রেলওয়ে ক্যাডারের শহিদুল ইসলাম, গণপূর্ত ক্যাডারের জামিলুর রহমান, পশুসম্পদ ক্যাডারের ডা: মো: আহসান হাবীব, সমবায় ক্যাডারের মোসা: নূর ই জান্নাত প্রমুখ।

সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কারে যে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে সেখানে জনপ্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫টি ক্যাডারের কোনো সদস্য নেই। বরং কমিশন প্রধানসহ ছয়জন সদস্য একটি ক্যাডারের, যারা সিভিল প্রশাসনে বৈষম্য সৃষ্টিকারী। এ ছাড়া ইতঃপূর্বেও বৈষম্য নিরসনে তাদেরকে দিয়েই কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং তারা সেই সুযোগে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি করেছেন।
সূত্রমতে, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ দেশের ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে ২৫টির প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ২৫টি ক্যাডারে প্রায় ৫৩ হাজার কর্মকর্তা চাকরি করেন। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, জনসেবা এ ২৫টি ক্যাডারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাদের বক্তব্য, ২৫টি ক্যাডারকে পাশ কাটিয়ে শুধু একটি ক্যাডারের প্রতিনিধি দিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার সম্ভব নয়। তাই অবিলম্বে বিদ্যমান জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি পুনর্গঠন করে সব ক্যাডারের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার পাশাপশি সিভিল সার্ভিসের বাইরে জনপ্রশাসন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞকে কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতে হবে।
তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান জানান, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আমরা রাজপথে নামতে চাই না। কিন্তু সরকারকে বুঝতে হবে আমরা দেশের মোট ৯০-৯২ ভাগ ক্যাডার কর্মকর্তার প্রতিনিধিত্ব করি। তাই আমাদের উপেক্ষা করা হলে পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হগ্রণ। উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দায়ী থাকবেন, যা সরকারের জন্য স্বস্তিকর হবে না।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের বিষয়ে গতকাল তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওমর ফারুক নয়া দিগন্তকে জানান, বিগত ১৫ বছরে যারা জনপ্রশাসনে থেকে ভোটারবিহীন নির্বাচনে সহযোগিতা করেছেন, যারা এ দেশের জনসেবা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছেন। নিজস্ব স্বার্থে, যারা প্রশাসন ব্যবস্থাকে চরম কেন্দ্রীভূত করে সব ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করেছেন। এখন তাদেরকেই কমিশনের সদস্য করা হয়েছে। তিনি বলেন এই বৈষম্যের কারণেই স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে জনসেবা ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বস্তুত বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় পেশাদারিত্বের কোনো মূল্য দেয়া হয়নি, এখনো হচ্ছে না। একটি ক্যাডার যাদের প্রকৃত কাজ ছিল ভূমি ব্যবস্থাপনা, কালের প্রবাহে চানক্য-নীতি অবলম্বন করে, আজ তারা পুরো প্রশাসন ব্যবস্থা গিলে ফেলেছেন। নিজেদের মূল দায়িত্ব ফেলে আজ তারা সব ক্যাডারের মধ্যে কর্তৃত্ববাদের নীতি গ্রহণ করেছেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement