০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সংস্কারের অগ্রগতি আশানুরূপ নয় : কর্নেল অলি

-

লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব:) অলি আহমদ বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় দুই মাস সময় পূর্ণ করেছে। এই সরকারের কাছে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা অনেক। তবে এখনো মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কাজ করছে। কারণ সংস্কার কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়।
তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই দেশের মানুষকে নিরাশ করা যাবে না। সরকারকে সাহায্য করার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে।
প্রয়োজনে দক্ষ, শিক্ষিত ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে উপদেষ্টাদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত রাজনীতিতে অভিজ্ঞজনের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এই সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সংস্কার বাস্তবে রূপ দিতে হবে। এ ছাড়া প্রত্যেকের মানসিক সংস্কারও প্রয়োজন।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাবেক এই মন্ত্রী।

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারী সরকার গণ-আন্দোলনের সময় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বিশেষত গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রকে নিশ্চিহ্ন ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচন পদ্ধতি ধ্বংস করেছে। সর্বস্তরে আত্মীকরণ ও দলীয়করণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম-খুন, জনগণের ওপর নির্যাতন-জুলুম, মেগা প্রকল্পের আড়ালে ব্যাপক দুর্নীতি, বিশাল ঋণ নিয়ে লুটপাট এবং বিদেশে লক্ষ কোটি টাকা পাচার এসব নজিরবিহীন অপরাধ সংঘটিত করেছে। সুতরাং এই দেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে শেখ মুজিবুর রহমান স্বেচ্ছায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশেও তার (শেখ মুজিব) স্বেচ্ছাচারী শাসনে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বারবার নিগৃহীত হয়েছেন। তিনি কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক বা জাতির পিতা হতে পারেন না। তার একনায়কসুলভ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাজারও মানুষ খুন এবং গুম হয়েছেন। তবুও তার প্রতি একটি ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে। এখনো বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের সদস্যদের নাম বিদ্যমান রয়েছে। এই নামগুলো অবিলম্বে পরিবর্তন করা জরুরি এবং ব্যক্তিপূজার অপসংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলতে হবে। পাশাপাশি, আমরা আশা করি, সরকার বিভিন্ন ধরনের টাকার নোট থেকেও যথা শিগগিরই শেখ মুজিবের ছবি অপসারণ করবে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, স্বৈরাচারী ও খুনি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়, যেসব উপদেষ্টা বা কর্মকর্তা গণতন্ত্র হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য দায়ী, তাদের এখন পর্যন্ত কেন গ্রেফতার করা হয়নি? এ সময় ড. মশিউর রহমান, কবির বিন আনোয়ার এবং তথাকথিত মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিক, ‘যিনি সেনাবাহিনীর কলঙ্ক হিসেবে পরিচিত’ তাদের গ্রেফতার না হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ইউনিফর্ম পরা কয়েক শ’ ব্যক্তি দৌড়ে ভারতের বিশেষ বিমানের মাধ্যমে পালিয়ে যায়। এরা কারা, তা জনগণের জানার অধিকার রয়েছে।
দেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৮-১০ জন বড় ক্রিমিনাল রয়েছে। যারা একনায়কত্ব কায়েমের জন্য শেখ হাসিনাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। তাদের বিদেশে পাড়ি দেয়ার পথ বন্ধ করতে হবে এবং যারা বিদেশে অবস্থান করছে তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, পাহাড়ে কিছু মানুষকে সেনাসদস্যদের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করতে দেখা যায়। বিষয়টি হালকাভাবে দেখলে সমস্যা বাড়বে। সমস্যা সৃষ্টিকারীদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। আমাদের সবাইকে এই অনুষ্ঠান সফলভাবে ও নিরাপত্তার সাথে পালন করার জন্য সহযোগিতা করতে হবে। বিশেষভাবে সরকারকে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ আওয়ামীপন্থীরা বিভিন্ন জায়গায় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement