০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১,
`

কেরানীগঞ্জে রাসেল মেম্বারের নিয়ন্ত্রণে ডকইয়ার্ড ইটভাটা ও হাউজিং

নীরবে চলে চাঁদাবাজি
-


সন্ত্রাসের জনপদ নামে খ্যাত ঢাকার কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের ডন রাসেল মেম্বারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা চালাচ্ছে বসুন্ধরা রিভারভিউসহ অর্ধশত হাউজিং কোম্পানি, ডকইয়ার্ড, ইটের ভাটা, মাদকদ্রব্য বেচাকেনা। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন কোন্ডা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা রাসেল মেম্বার। সাবেক প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী বেষ্টিত এলাকা কোন্ডা ইউনিয়নের একচ্ছত্র দখলের রাজত্ব কায়েম করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে তার হুকুমে চলে কোন্ডা ইউনিয়নের ১৫০টি ইটের ভাটা। রয়েছে হিন্দু সম্পত্তি দখল করে বিক্রি ও সরকারি খাসজমি দখলের অভিযোগ। ইটের ভাটায় মাটি বিক্রি, কাঠ পোড়ানো বৈদ্যুতিক তারের প্লাস্টিকের খোলস পোড়ানো ও সরবরাহসহ নানা অভিযোগ। পট পরিবর্তনের পরও তার একটুও দাপট কমেনি কোন্ডা ইউনিয়নবাসীর কাছে।
জানা যায়, ৫ আগস্ট পরিবর্তনের পর কোন্ডা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর একটি রাজনৈতিক দলের ঢাকা জেলা শাখার সম্পাদককে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যানের পদটি ভাগিয়ে নেন রাসেল মেম্বার। শত অপকর্মের হোতা রাসেল মেম্বারকে প্যানেল চেয়ারম্যানের পদ দেয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গত বুধবার কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে রাখে ছাত্র ও স্থানীয় জনতা। পরে ঢাকা জেলা প্রশাসক রাসেল মেম্বারকে প্যানেল চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রীণাত ফৌজিয়াকে কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করেন।

এলাকাবাসী জানান, এমন কোনো অপরাধ নাই, যা রাসেল মেম্বার দ্বারা সংঘটিত হয়নি। দেশের একটি বড় শিল্পগোষ্ঠীর আবাসন প্রকল্পসহ কোন্ডা ইউনিয়নে প্রায় ৫০টি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি রয়েছে। উক্ত শিল্পগোষ্ঠীর তেল, আটা, সুজি ময়দাসহ বিভিন্ন পণ্যের ফ্যাক্টরি রয়েছে বসুন্ধরা আবাসন প্রকল্প এলাকায়। এসব ফ্যাক্টরির যত কেনাকাটা গার্মেন্ট শিল্পের ঝুট বিক্রি, ইটের ভাটায় মাটি থেকে শুরু করে যত ধরনের টেন্ডার সবই রাসেল মেম্বার নিয়ন্ত্রণ করছেন। রাসেল মেম্বার তার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে কোন্ডা ইউনিয়নের জাজিরা, পানগাঁও ও বক্তাবলি চরসহ বিভিন্ন ইটের ভাটায় নীরব চাঁদাবাজি করে একজন রাজনৈতিক নেতার অনুকূল্য পেয়েছেন। প্রতিটি ইটভাটা থেকে এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়েছে।
কোন্ডা ইউনিয়নের ব্রিক ফিল্ড মালিকদের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক, এস এম নজরুল ইসলাম, হাজী আব্দুল কাদের, মোক্তারুজ্জামান, কামরুল হাসান, আব্দুস সালাম, নিজাম উদ্দিন, শাহ আলম, আব্দুল লতিফ, তৌহিদুল ইসলাম, মো: মোক্তার হোসেন, হারুন অর রশিদ ও নীল রতন জানায় এরা সবাই ইটের ভাটা টিকিয়ে রাখতে রাসেল মেম্বারসহ কয়েকজনকে ১ লাখ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত চাঁদা দিয়েছে।

কোন্ডা ইউনিয়নের মুরব্বি কামলেক মাদবর জানায়, রাসেল মেম্বারের বৈধ তেমন কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও চাঁদাবাজি করে গত ১২ বছরে বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার ভাই হাবিবুর রহমান রানা ও মোস্তাক আহম্মদ রাজুকে সাথে নিয়ে ভাই ভাই ব্রিকস নামে নিজ এলাকায় ৬টি ইটভাটা দিয়েছেন। আছে ভাই ভাই ডকইয়ার্ড ও রাসেল ট্রেডার্স নামে দু’টি ডকইয়ার্ড। এর বাইরে প্রায় ৫০টি দলিলে অন্তত ১ হাজার শতাংশ জমি নিজ নামে রেজিস্ট্রেশন করানোর তথ্য রয়েছে কেরানী দনি ও মডেল কেরানীগঞ্জের দুটি সাবরেজিস্ট্রার অফিসে। এসব জমির রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ খরচ করেছেন অন্তত ১০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন দুটি সাবরেজিস্ট্রার অফিসের নির্ভরযোগ্য সূত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী পূবালী ব্যাংকের ধর্মগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ শাখাসহ বিভিন্ন ব্যাংকের ১৮টি হিসাবে রাসেলের নিজ নামে গচ্ছিত রয়েছে ১০ কোটি টাকা। এর বাইরে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার করেছেন মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে। সেখানে সেকেন্ড হোম রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।

ঢাকা জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গত ২০ জুন ২০২০ তারিখে নির্বাচনী হলফনামায় দেখা যায়, সর্বমোট ৪৪ লাখ ৮ হাজার ৪৮১ টাকার তিনি সম্পদ দেখিয়েছেন। এর মধ্যে গাড়ি ক্রয় বাবদ লোন দেখিয়েছেন ১১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬৬ টাকা। অথচ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় রাসেল মেম্বারের ১৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০ কোটি টাকা জমা রয়েছে। তার আছে কোন্ডা ইউনিয়নে দু’টি ডকইয়ার্ড, ৬টি ব্রিক ফিল্ড। অথচ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) খোঁজ নিলে জানা যায়, রাসেল মিয়া মেন্বর ঢাকার কর অঞ্চল-৪-এর ৮৪ নম্বর সার্কেলে ২১০৯৬২৩৪২৫৭৮ টিআইএন নম্বরে ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা আয়কর রিটার্ন দাখিলের তথ্য রয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকার কর অঞ্চল-৪-এর ৮৪ নম্বর সার্কেলে সহকারী কমিশনার এই প্রতিবেদককে বলেছেন, কোন্ডা ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে রাসেল মেম্বারের ব্যাপক সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার আমরা তদন্ত শুরু করব।
বাংলাদেশ ব্রিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম খান রাজা রাসেল মেম্বারের ইট ভাটায় চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করে নয়া দিগন্ত প্রতিনিধিকে জানান ব্রিক ফিল্ড চালু রাখার প্রয়োজনে তাদেরকে চাঁদা দিতে হয়। তিনি বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের পাতি নেতা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতা পর্যন্ত ব্রিকফিল্ডের মালিকদের চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে হয় থানা পুলিশকে। পুলিশের ক্যাশিয়ার থানার ওসি তদন্ত অফিসার, দারোগা থেকে শুরু করে পুলিশ সুপারের নামে ব্রিক ফিল্ড থেকে চাঁদা আদায় করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement