০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১,
`

অভিযানেও তৎপর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ত্রাস আরসা

-

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ত্রাস আরসা সন্ত্রাসী গ্রুপ। এ গ্রুপের কমান্ডার, বিভিন্ন শাখার প্রধানসহ শীর্ষ নেতারা এরই মধ্যে আটক হয়েছেন। এর পরও থেমে নেই তাদের কার্যক্রম। সংগঠন পরিচালনায় আর্থিক সহযোগিতা আদায়ের জন্য বিশেষ সেলও গঠন করেছে দলটি। সেলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও প্রভাবশালী দেশগুলোর সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরের বছর হারাকাহ আল-ইয়াকিন (বিশ্বাসের আন্দোলন) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামে। পাকিস্তানে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিকে এই সংগঠনটির মূল উদ্যোক্তা বলা হয়। আরসার সহ-উদ্যোক্তা হিসেবে আলোচিত ছিলেন মোহাম্মদ হাশিম ও মৌলভী খালেদ। এর মধ্যে হাশিম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হাতে নিহত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বুঝানোর চেষ্টা করে তারা রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতার জন্য লড়বে। ফলে দলে দলে সাধারণ রোহিঙ্গা যুবক ও বিভিন্ন বয়সীরা যোগ দেয় দলটিতে। পরে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর এবং ২০১৭ সালের আগস্টে কয়েক দফায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশের সাথে আরসা নানাভাবে সংঘর্ষে জড়ালে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালায় জান্তা সরকার; যার ফলে রোহিঙ্গার ঢল নামে বাংলাদেশে।
২০১৭ সালে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয় ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার প্রথম দিকেও আরসার প্রতি দুর্বলতা ছিল সাধারণ রোহিঙ্গাদের। কিন্তু নিজ গোষ্ঠীর লোকদের হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো অপরাধ চালানোর ফলে ধীরে ধীরে আরসার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সাধারণ রোহিঙ্গারা। কারণ শুধু অপরাধ কর্মকাণ্ড নয়, প্রত্যাবাসনের পক্ষে জনমত তৈরি করা রোহিঙ্গা নেতাদেরও টার্গেট করে হত্যা করার অভিযোগ আছে দলটির বিরুদ্ধে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করা আরিফ উল্লাহ, রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিব উল্লাহসহ শীর্ষ নেতাদের আরসাই হত্যা করেছে বলে প্রচার রয়েছে।

সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর তুমব্রুর শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ এক কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে আরসা। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শূন্যরেখায় আরসা এবং আরএসওর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। উভয়পক্ষের সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুরো ক্যাম্প পুড়িয়ে দেয়া হয়।
ক্যাম্প পুড়িয়ে দেয়ার পর সেখানে কয়েকটি সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া যায়, যা অস্ত্র ও বোমা তৈরি, প্রশিক্ষণসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হতো বলে আরসার দলত্যাগী সদস্যরা জানিয়েছেন। ক্যাম্পটি পুড়িয়ে দেয়ার পর আরসার সদস্যরা পালিয়ে কেউ মিয়ানমারে চলে যায়, আবার কেউ কেউ ছদ্মবেশে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে অনুপ্রবেশ করে। মূলত সীমান্তে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হত্যার পর থেকে আরসার ওপর দুর্দশা নেমে এসেছে বলে মনে করেন সচেতন রোহিঙ্গারা। আরসার সাথে ক্যাম্পে প্রতিনিয়ত আরএসওর সংঘর্ষ হচ্ছে বলে দাবি তাদের। তবে সশস্ত্র আরএসওকেও নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি তাদের।
র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা কাউকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে দেবো না। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ আমাদের আওতাধীন এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র‌্যাবের আভিযানিক দল সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement