২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সরকারের বেঁধে দেয়া দাম মানছে না কেউ

প্রতি ডজন ডিম ১৭০ টাকা
-


সরকারের বেঁধে দেয়া ডিমের দাম মানছেন না ব্যবসায়ীরা। বরং আরো বেড়েছে ডিমের দাম। সরকার গত ১৫ সেপ্টেম্বর খুচরা বাজারে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী ডিম বিক্রি হওয়ার কথা প্রতিটি ১১ টাকা ৮৭ পয়সায়। অথচ বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা করে। এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা করে। দাম নিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ-অসন্তোষ থাকলেও বিক্রেতারা নির্বিকার। উল্টো দাম নিয়ে প্রশ্ন তুললে ক্রেতাকে পড়তে হচ্ছে নানা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা অফিসে বসে একটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যেখানে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাদের দাবি, দেশের বাজারে মুরগির খাদ্যের দাম এখন অনেক চড়া। তাছাড়া অতিরিক্ত গরমের জন্য খামারে ডিমের উৎপাদনও কমে গেছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কমায় ডিমের দাম বাড়ছে।

গতকাল রাজধানীর মিরপুর, কাজিপাড়া এবং কাওরানবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব জায়গায় ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই ডিমের দাম ছিল ১৬০ টাকা। অন্যদিকে ফার্মের মুরগির সাদা ডিম প্রতি ডজন কোথাও কোথাও ৫ টাকা কমে পাওয়া গেলেও অধিকাংশ বাজারে প্রতি ডজন ১৭০ টাকায়ই বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে সাদা ডিমের ডজন ছিল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে উভয় ধরনের ডিমের দামই ডজনপ্রতি ১০ টাকা করে বেড়েছে।
ডিমের দাম নিয়ে ভোক্তা মহলে তীব্র ক্ষোভ দেখা যায়। মাছ-মুরগির দামও বাড়তি থাকায় অনেকেই ডিমের ওপর নির্ভরতা খুঁজছিলেন। তাই ভোক্তাদের অনেকে প্রকাশ্যেই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘ব্যর্থ’ বলেও সমালোচনা করছেন। তাদের দাবি, ডিমের বাজারে এখনো শক্ত একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। আওয়ামী লীগের পতন হলেও বর্তমান সরকার সেই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। তা না হলে সরকার দাম নির্ধারণের ১৫ দিন পার হলেও দাম কমা দূরের কথা উল্টো বেড়ে চলেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপও দেখা যায় না।
রাজধানীর মিরপুর, রূপনগরের ডিম বিক্রেতা আবু সাঈদ বলেন, পাইকারি বাজারে ডিমের সরবরাহ কম। এ কারণে বাড়তি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা পর্যায়েও ডিমের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন গতকাল তিনি পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে প্রতি পিস ডিম ১৩ টাকায় কিনেছেন। পরিবহন ও অবচয় খরচ যোগ করে প্রতিটি ১৪ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে প্রতি ডজনের দাম দাঁড়ায় ১৬৮ টাকা। তবে ভোক্তাদের অনেক ক্ষেত্রেই ১৭০ টাকা পর্যন্ত দামে কিনতে হচ্ছে।
বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম বলেন, সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে অনেক আগেই। যেখানে সরকার নির্ধারিত দাম হওয়ার কথা প্রতি পিস ১০-১১ টাকা, সেখানে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা করে। এক হালি ডিম নিয়েছি ৬০ টাকায়। আমরা তো চেয়েছিলাম একটা নতুন সরকার এলে বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সবকিছুর একটা যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেবে। এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রতিফলন নেই।

আব্দুল হালিম নামে আরেক ক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের মতো যারা নিয়মিত মাছ মাংস খেতে পারে না, তাদের জন্য ডিমই ছিল ভরসা। এখন দেখি দিন দিন এর দামও বাড়তে শুরু করেছে। যে ডিমের দাম এগুলো দেখার কি কেউ নাই।
এদিকে খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, আমরা সাধারণ বিক্রেতা। দাম নিয়ে আমাদের কিছু বলে লাভ নেই। আমরা ডিম কিনে আনি, এরপর বিক্রি করি। আমরা যদি কমে কিনে আনতে পারি, তাহলে কমে বিক্রি করতে আপত্তি নেই। কাওরানবাজারে আহসান নামে এক বিক্রেতা বলেন, শুনেছিলাম কিছুদিন আগে সরকার ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে কিনতে গিয়ে দেখি উল্টো বেড়ে গেছে। আড়তদাররা বলছে বাজারে ডিমের সঙ্কট। জানি না হঠাৎ করে কেন সঙ্কট তৈরি হলো। তবে আমাদের যদি বেশি দামে কিনে আনতে হয়, তাহলে তো সে অনুযায়ী বাড়িয়েই বিক্রি করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। চিঠিতে মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
ডিমের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ এগ প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, কয়েক দিনের বৃষ্টির পর অতিরিক্ত গরম পড়ায় ডিমের উৎপাদন কমেছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কমে ডিমের দাম বেড়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement