০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ

টানা ৩৪ ঘণ্টার সড়ক অবরোধ গাজীপুর ও আশুলিয়ায়

-


শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে গাজীপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। একই অবস্থা টাঙ্গাইল অভিমুখী নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের। বকেয়া বেতন, সার্ভিস বেনিফিট এবং বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত (এ রিপোর্ট লেখার সময়) শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে যায়নি। এতে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী এবং টাঙ্গাইল থেকে নবীনগরগামী মহাসড়কে দুই দিকেই মাইলের পর মাইল যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পথচারী ও সাধারণ মানুষ এতে মহাভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করে টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেলস প্লাস লিমিটেড পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গতকাল ফের বিক্ষোভ করছে। তারা সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ করে রাখে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধের কারণে যানজটের প্রভাব পড়েছে ভোগড়া বাইপাস সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ আশপাশের সড়কগুলোতেও। সন্ধ্যা পর্যন্ত সমাধান না হওয়ায় দিনভর চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই সড়কে চলাচলকারীরা।

পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকার টিএনজেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেলস প্লাস লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত জুলাই মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন। মালিকপক্ষ ১৭ তারিখ বিনা নোটিশে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। পরদিন শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে ২৬ দিনের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ কারাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে শ্রমিকদের জুন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করলেও জুলাই মাসের বেতন পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে কলকারখানা অধিদফতরে মালিক, শ্রমিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ২৫ সেপ্টেম্বর বকেয়া বেতন পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এদিনও কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। গত সোমবার শ্রমিকরা বন্ধ কারখানার গেটে জড়ো হয়ে বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। দিনভর কারখানার সামনে অপেক্ষার পর বকেয়া পাওনাদি না পেয়ে বিকেল ৫টার দিকে তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। শ্রমিকরা রাত দেড়টা পর্যন্ত ওই মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে মধ্যরাতে বৃষ্টির কারণে সড়ক অবরোধ স্থগিত করে চলে যায়। গতকাল সকালে শ্রমিকরা পুনরায় কারখানার গেটে জড়ো হতে থাকে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তারা ফের ওই মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তাদের সাথে আশপাশের আরো কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ দেয়। শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পার্শ্ববর্তী কয়েকটি কারখানা এদিন ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখায় ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ আশপাশের সড়কগুলোতেও দীর্ঘযানজটের সৃষ্টি হয়। শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবরোধকারীদের সড়কের ওপর থেকে দিনভর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, মলিকপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বেতনের জন্য গতকাল সারাদিন অপেক্ষা করেছি। হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা আমাদের সমুদয় বকেয়া পাওনা না পাওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়ব না।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগর সভাপতি শফিউল আলম বলেন, মালিকপক্ষ কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেন এবং যাবতীয় পাওনা পরিশোধে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক গত জুলাই মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের তারিখ ছিল ২৫ সেপ্টেম্বর। ওই দিন বেতন পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছিল। পরে আবার ৩০ সেপ্টেম্বর বেতন পরিশোধের তারিখ দিয়ে পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে, মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকার এম এম নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা টিফিন বিল, নাইট বিল এবং হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে গত দুই দিন যাবৎ বিক্ষোভ করছেন। মালিকপক্ষ তাদের সমাধান না দেয়ায় সোমবারেও কাজ যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
এদিকে, মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ডিলাক্স ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। সকালে আন্দোলনরত শ্রমিকেরা আশপাশের কয়েকটি কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেয়। এ সময় তারা কর্মরত শ্রমিকদেরকে তাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানালে বিশৃঙ্খলা এড়াতে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার কয়েকটি কারখানা সোমবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে ৩৪ ঘণ্টা ধরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে একটি তৈরী পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। দীর্ঘ ৩৪ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আর চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত যানবাহনসহ মানুষজন।

গতকাল সন্ধ্যাও সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। এর আগে গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। যা দীর্ঘ ৩৪ ঘণ্টা পার হলেও অবরোধ তুলে নেয়নি তারা।
মহাসড়ক অবরোধকারী শ্রমিকরা জানান, আগস্ট মাসের ২৮ তারিখ থেকে বার্ডস গ্রুপের সব কারখানা লে-অফ করা হয়। শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখে এবং সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণ গত ৩০ সেপ্টেম্বর দেয়ার কথা ছিল। চুক্তিমত শ্রমিকদের বেতন কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করলেও যে সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ছিল তা পরিশোধ করতে আরো তিন মাসের সময় চেয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। যার কারণে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে।
সরেজমিন নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, আশুলিয়ার জিরানী বাজার, কবিরপুর, বাড়ইপাড়া, চক্রবর্তী, শ্রীপুর সব স্থানেই যানবাহন ঢাকামুখী লেনে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চন্দ্রামুখী লেন বাইপাইল পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। গেল ৩৪ ঘণ্টা ধরেই যানবাহন থেমে রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নবীনগর এলাকায় কথা হয় ট্রাকচালক হাফিজুরের সাথে। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নয়ারহাটের একটা ইট ভাটা থেকে ট্রাকে ইটবোঝাই করে বাইপাইলে যাচ্ছিলেন। পথে নবীনগর এসে জ্যামে আটকা পড়েন। সকাল নয়টা থেকে বসে আছেন তিনি। এখন বাজে চারটা। ২০ মিনিটের দূরত্ব অথচ দীর্ঘ সাত ঘণ্টা ধরে বসে আছি। কখন যেতে পারবো জানি না।
তিনি বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এত ভোগান্তি সহ্য হয় না। কখন এ থেকে রেহায় পাবো জানা নেই।
এদিকে, সকাল থেকেই শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানা খোলা থাকায় শ্রমিকরা ভোগান্তি নিয়েই কর্মস্থলে যোগদান করেছে। গণপরিবহন ও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলেও শুধু রিকশা, অটোরিকশা অপর লাইনে চলতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ইপিজেড থেকে চন্দ্রামুখী লেন ফাঁকা রয়েছে। তবে এ লেনে রিকশা, অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র চলতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এসবের চালকদের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে যাওয়া মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এরকম ভোগান্তিতে কখনো পড়েনি তারা। সময় মত অফিসে পৌঁছাতে পারবে কি না, তাও জানা নেই। অনেক লোকজন পায়ে হেঁটেও গন্তব্যস্থলে গিয়েছে বলে জানান। ৩৪টা ঘণ্টা ধরে রাস্তা বন্ধ, আর কত ভোগান্তি পোহাতে হবে কে জানে?
এদিকে, আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ উসকে দেওয়া, সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ৩৬ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি কারাগারে কেমন আছেন ‘ভিআইপি’ বন্দীরা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান সংস্কারের পরই নির্বাচনী রোডম্যাপ নির্ধারণ হবে এমডির সহযোগিতায় ৭৫ কোটি টাকা লোপাট : পর্ষদ ভেঙে দেয়ার দাবি ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যার পানি কমলেও বাড়ছে ভাঙন রেমিট্যান্সে সেপ্টেম্বরে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি ৮০.২১ শতাংশ ‘ন্যায্যতাই’ কেবল বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক টেকসই করবে বিক্ষোভকারীদের ওপর ক্র্যাকডাউনে জড়িতদের জবাবদিহি করতে হবে : মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর

সকল