সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কারে হাত দিন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:৩৬
বাংলাদেশ সংবিধানসংস্কার বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা সংবিধান সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সংস্কারে হাত দিন। এখনই পুরোটায় হাত দিতে গেলে পারবেন না। সংবিধান সংস্কারের কার্যক্রম চলমান থাকবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নেবে। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃক আয়োজিত সংবিধান সংস্কারবিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিসার্চ সেল ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক প্রফেসর ড. মো: শরিফুল আলমের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেটুকু সংস্কার প্রয়োজন সেখানে হাত দিন। পুরোটায় হাত দিতে গেলে পারবেন না, এটা আপনাদের দায়িত্বও নয়। সুতরাং সংবিধান নিয়ে আলোচনা হওয়া খুবই জরুরি। সাধারণ মানুষেরও জানা দরকার সংবিধানে কি কি নাগরিক অধিকার আছে। কিভাবে দেশটা পরিচালনা করবেন। মানুষকে শিক্ষিত করা দরকার। ছাত্র-জনতার যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরও সংবিধান পড়া দরকার।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ও সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ বলেন, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে সেই সরকার ছিল অবৈধ। এবং সেই সরকার যে নির্বাচন করেছে সেই নির্বাচনও ছিল অবৈধ। এরপর যে তিনটি সরকার এসেছিল সেই তিনটি সরকারও অবৈধ। সংবিধান ও আইনের আলোকে যদি দেখি তাহলেও দেখবেন ওই তিনটি নির্বাচন ছিল অবৈধ। যে সংসদে ১৫৩ বা ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। সেটা বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে বৈধ হয় না। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। বিগত তিনটি নির্বাচনই সংবিধান ও আইনগতভাবে অবৈধ। নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকারকে অপসারণের কোনো বৈধ পথ ছিল না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে জনগণের আকাক্সক্ষায়, বা জনবিপ্লবে এই সরকার এসেছে। এজন্য আপাতত এই সরকারকে বৈধ বলব।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, সংবিধানকে কয়েক দফা সংশোধন করে সংশোধন অযোগ্য করা হয়েছে। আমাদের ঠিক করতে হবে রাষ্ট্রপতিশাসিত নাকি প্রধানমন্ত্রী শাসিত ব্যবস্থা থাকবে। এখন সময় হয়েছে নিজস্ব শাসনব্যবস্থা নির্ধারণের। যেখানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব কমানো সম্ভব। সংবিধানের অসঙ্গতি ও বিচ্যুতি দূর করতে হবে। কমিশনগুলোকে সাংবিধানিক বৈধতা দিতে হবে।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, ৫৩ বছরে সংবিধান দেশের নাগরিকদের আপন করে নিতে পারেনি। এই দেশে মানুষ ভোট দিয়েছে কিন্তু যারা ক্ষমতায় গেছে তারা বিষয়টিকে এমনভাবে কুক্ষিগত করেছে, বাকি যারা সাধারণ মানুষ তারা নিজেদের রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে মনে করতে পারেনি। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, আন্দোলন শেষ হওয়ার দুই মাস পূরণ হওয়ার আগেই বিভক্তি শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনে কার কতজন শহীদ হয়েছে, কে আন্দোলনের প্রবক্তা, কোনো দলের কতটা অবদান সে নিয়ে কথা বলা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আন্দোলনের স্পিরিটে তো এটা ছিল না। এই আন্দোলন ছিল নির্দলীয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সংবিধান সংস্কারে জনগণের অভিপ্রায়কে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, একটা গণতান্ত্রিক রিপাবলিক একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সে ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটার ভিত্তি কি হবে...সংবিধান নতুন চাই অথবা সংস্কার চাই; একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান চাই সে ব্যাপারে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ ক্রোয়াক তাকে এমন আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানোয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি সংবিধান সংশোধনে লিঙ্গবৈষম্যসহ অন্যান্য বৈষম্য দূরীকরণের আহ্বান জানান।
এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, যত দিন মানুষ নিজ ইচ্ছায় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট না দেবে ততদিন গণতন্ত্র পূর্ণ বিকশিত হবে না।
বক্তব্যে রাখেন আইনজীবী ব্যারিষ্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সাংবাদিক মাসুদ কামাল, জানিপপের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড: নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, অধ্যাপক ড: নুরুল আমিন বেপারী, অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, রাজিকুজ্জামান রতন, অধ্যাপক ড: তানভীর রাজিব, সাবের আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহ আলম চৌধুরী, ড. শামীম হামিদি, অধ্যাপক আ: বাসেত, সহযোগী অধ্যাপক তারেক, সহযোগী অধ্যাপক বজলুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানের আয়োজনের সমন্বয়ক ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক মিলি রহমান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা