৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

আলীকদমের মেঘে ঢাকা ‘ডিম পাহাড়’

বান্দরবানের আলীকদমে ডিম পাহাড় : নয়া দিগন্ত -


বান্দরবানের অপরূপ প্রকৃতির মাঝে নির্মিত দেশের সবচেয়ে উঁচু ‘আলীকদম-থানচি সড়ক’-এর সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। নয়নাভিরাম সবুজ প্রকৃতির মাঝে আরেক বিস্ময় সড়কটির ২২ কিলোমিটার পয়েন্টে অবস্থিত ‘ডিম পাহাড়’। ৩৩ কিলোমিটার সবুজাভ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা সর্পিল পথ। ঘনসবুজ পাহাড়ের পাথুরে ঢালে বয়ে চলেছে ঝর্ণাধারা। কল্কল্ শব্দে অবিরাম ঝরছে এসব ঝর্ণার শীতল জল। অন্য দিকে ডিম পাহাড় এলাকায় দাঁড়িয়ে ছোঁয়া যায় আকাশের সাদা মেঘ!
দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষদের কাছে বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আলীকদম-থানচি সড়কের ‘ডিম পাহাড়’। অনাবিল সৌর্ন্দয আর বৈচিত্র্যময় পরিবেশে প্রকৃতির অসাধারণ এক উপহার! পাহাড়ের বুকে ৩৩ কিলোমিটার এ সড়কপথে ভ্রমণ দারুণ রোমাঞ্চকর। ডিম পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তাটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক। আলীকদম থেকে এই রাস্তা ওপরের দিকে উঠেছে এবং ডিম পাহাড়ের কাছাকাছি রাস্তার উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ২৫০০ ফুট।
আষাঢ়-শ্রাবণের ঘন বর্ষায় ডিম পাহাড় এলাকাটি আচ্ছন্ন থাকে সাদা মেঘে। দেখে মনে হয় এ যেন মেঘের ওপরে এক সড়ক! সেখানে গেলে পর্যটকরা পান আকাশের মেঘ ছোঁয়ার অভিজ্ঞতা। বর্ষা মওসুমে ভ্রমণে রাস্তার অর্ধেকটাজুড়ে সাদা মেঘ আপনার সঙ্গী হবে বারবার। কাছে এসে আবার দূরে চলে যায় মেঘদল। আবার মেঘদল যেন বলে দেয় এখানে পথ হারালে ফিরে যাওয়া হবে কঠিন!

ডিম পাহাড় এলাকাটি সবুজের চেয়েও সবুজ। পাহাড়ি রাস্তার ধারে ধারে ফুটে আছে নানা রঙের পাহাড়ি ফুল। পর্যটকদের যেন মনে করিয়ে দেয় জাতীয় কবির ‘ছন্দে ছন্দে দুলে আনন্দে আমি বন ফুল গো’ গানের কলি। মেঘের ফাঁকে রোদের ঝিলিক বৃষ্টিভেজা ফুলগুলো উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে!
১৯৯৯ সালে এ সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথম দুই বছরে মাত্র ছয় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। এরপর সংস্থাটি জানিয়ে দেয়, পাহাড়ের চূড়ায় সড়ক বানানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ২০০১ সালে সেনাবাহিনী এ সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পায়। হেলিকপ্টারে চড়ে সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্য পথ নির্ধারণ করা হয়। পাহাড়ের পর পাহাড়ের গা কেটে তৈরি হয় পথ। এ সড়ক ঘিরে একে একে সন্ধান মিলছে অসংখ্য ঝিরিনির্ঝর, ঝরনা, জলপ্রপাত ও আর সুউচ্চ পাহাড়।
আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণের আগে কক্সবাজার, আলীকদম, লামা ও রুমা থেকে থানচি যেতে হতো বান্দরবান ঘুরে। থানচি থেকে যেতেও একই পথ ব্যবহার করতে হতো। প্রতিবেশী আলীকদম-থানচির দূরত্ব ছিল ১৯০ কিলোমিটার। সড়ক নির্মাণের পর দুই উপজেলার দূরত্ব এখন ৩৩ কিলোমিটার। সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে পর্যটকবান্ধব এ সড়কটির একাধিক পয়েন্টে রাস্তা ধসে গেছে। তবে মোটরবাইক নিয়ে এখনো চলাচল করা যাচ্ছে।

কিভাবে যাবেন : বর্তমানে ঢাকা থেকে আলীকদম সরাসরি হানিফ পরিবহন ও এস আলম পরিবহনের বাস চালু আছে। অথবা কক্সবাজার-চকরিয়া থেকে বাসে করে আলীকদম বাসস্টেশন নামবেন। সেখান থেকে জিপ গাড়ি ভাড়া নেয়া যায়। অথবা বাস স্টেশন থেকে অটো রিকশায় পানবাজার এসে ভাড়ায় চালিত মোটরবাইক নিয়ে ডিম পাহাড় যাওয়া যায়। ডিম পাহাড় ঘুরে ১০-১২ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছা যায় থানচি। বান্দরবান থেকে যেতে চাইলে আগে লোকাল বাসে কিংবা চান্দের গাড়িতে করে থানচি বাজার চলে যান। এরপর থানচি বাজার থেকে চান্দের গাড়ি কিংবা মোটরবাইকে করে ডিম পাহাড়। অতপর গিরিনন্দিনী আলীকদম...।
যা মনে রাখতে হবে : আলীকদম-থানচি সড়কটি নিরাপত্তার স্বার্থে এখনো সেনা নিয়ন্ত্রিত। পর্যটকরা আলীকদম থেকে ডিম পাহাড় থানচি যেতে চাইলে আলীকদম ট্যুর গাইড অ্যাসোশিয়নের সাথে যোগাযোগ করে তথ্যফরম পূরণ করতে হয়। অন্যথা সড়কের ১০ কিলোমিটারে অবস্থিত থিংকু পাড়া সেনা চেক পোস্টের সেনারা আপনাকে যেতে দিবে না!

 


আরো সংবাদ



premium cement