২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

জনশক্তি ব্যবসায় গতি ফিরছে না

ভিসা ট্রেডিং বন্ধের দাবি এজেন্সি মালিকদের
-


জনশক্তি প্রেরণ ব্যবসায় এখনো গতি ফিরেনি। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের এই সময়ে বিদেশগামী শ্রমিকের যাওয়ার হার কমেছে। এর অন্যতম কারণ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশের শ্রমবাজার বন্ধ থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরব, ওমান, কাতার, দুবাইয়ে শ্রমিক কম যাওয়াকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
অভিবাসন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত জুলাই-আগস্ট মাসে কর্মী যাওয়ার চাহিদাপত্র আসা কমে গিয়েছিল। এই সময়ে বাংলাদেশে থাকা বিদেশের দূতাবাসগুলোর কার্যক্রমগুলো প্রায় বন্ধ ছিল। এখন দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। তারা আশা করছেন বিদেশে কর্মী যাওয়ার চাহিদাপত্র আসাও দিন দিন বাড়বে।
অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের শ্রমিক রফতানির সাথে জড়িত দেশগুলোর তুলনায় এখনো বাংলাদেশে একজন বিদেশগামী কর্মীর অভিবাসন ব্যয় অনেক বেশী। তবে পেশাদার জনশক্তি ব্যবসার সাথে জড়িতরা বলছেন, সরকার তাদের কর্মী প্রতি যে রেট নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেই হিসাবে কর্মী পাঠাতে হলে বিদেশে যারা ভিসা ট্রেডিংয়ের সাথে জড়িত তাদের আগে থামাতে হবে। তাদের জন্যই চাহিদাপত্র (ভিসা) প্রতিযোগিতা করে কিনতে হচ্ছে। এর ফলে বিদেশগামী কর্মীদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস (গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত) বাংলাদেশ থেকে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ৬ লাখ ৯২ হাজার ৮৬৫ জন (নারী-পুরুষ)। সেই হিসাবে গত বছরের এই সময়ে শ্রমিক গিয়েছিল ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮৫ জন। অর্থাৎ এই সময়ের ব্যবধানে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৭৬৮ জন শ্রমিক বিদেশে কম গিয়েছে বলে পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা গেছে। গত বছর বিদেশে রেকর্ড সংখ্যক ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন শ্রমিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
চলতি বছরের জুলাই মাসে সৌদি আরবে ৪৭ হাজার ৮৬৭ জন কর্মী গেলেও সেটি পরের মাসে কমে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ২৫১ জনে। একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমিক যাওয়া কমলেও বেড়েছে কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর, সাউথ কোরিয়া, জর্ডান ও ইউরোপের দেশসহ অন্যান্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসে বহির্গমন ছাড়পত্র নেয়া দেশগুলোতে।

গতকাল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (বহির্গমন) মামুন সরদার -এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে সেপ্টেম্বর মাসের মোট শ্রমিক যাওয়ার সংখ্যা জানাতে পারেননি। তবে তিনি এক ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে জানান, সেপ্টেম্বর মাসের (গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত) সৌদি আরব, দুবাই, কুয়েত, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে মোট ৫৮ হাজার ৯৮৪ জন শ্রমিক বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। তবে এই সময়ে কোন দেশে কতজন গেছেন সেই পরিসংখ্যান তিনি জানাতে পারেননি।
গতকাল সন্ধ্যার পর কাকরাইলের ফ্লেয়ার ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সীর মালিক মো: আনিসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিদেশে কর্মী পাঠানোর জন্য এখন তুলনামূলক কাজের চাহিদাপত্র কম আসছে। তবে বিএমইটিতে বহির্গমন ছাড়পত্র নরমালভাবেই হচ্ছে। একমাত্র দেশ সৌদি আরবেই শ্রমিক যাচ্ছে। এ ছাড়া দুবাই, কাতার, সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে কিছু কিছু করে। লিবিয়াতেও যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের নন অ্যাটাস্টেড ভিসায় যারা ওয়ান স্টপ সার্ভিসে আবেদন করছেন, তাদের কাজও হয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিকভাবে।

সৌদি আরবে ব্যবসার সাথে জড়িত একটি রিক্রুটিং এজেন্সির পার্টনার মো: বোরহান মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, সৌদি আরবে ভালো কাজে শ্রমিকরা যেতে চাইলে বেতন কম হয়। ৬০০-৭০০ রিয়াল। কিন্তু বেশি বেতনে যেতে চাইলে ওইসব কোম্পানিতে গিয়ে আবার লোকজন সমস্যায় পড়ছে। সাম্প্রতিক সৌদি আরবে শ্রমিক কম যাওয়ার কারণ কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সৌািদ আরবে এমনিতেই শ্রমিক যাওয়ার গতি আগের থেকে কমে গেছে। কারণ ওই দেশে গিয়ে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছে। যে কাজের কথা বলে নেয়া হয়েছিল সেই কাজ তাদের দেয়া হচ্ছে না। কিছু কোম্পানি ঠিক মতো বেতনও দেয় না। এর মধ্যে দেশে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন হওয়ার পর সব কিছু স্থবির হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখন সপ্তাহে একটি এজেন্সি সর্বোচ্চ ২০টি করে বেশি জমা দিতে পারে। এতে অনেকের কাজ কমে গেছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, ওমানসহ কয়েকটি দেশের শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার কারণেও গত বছরের তুলনায় এই বছর শ্রমিক যাওয়ার হার অনেক কমেছে বলে মনে করছেন তিনি।
নয়া পল্টনের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আমাদের দেশ থেকে সৌদি আরবে একজন শ্রমিক যেতে হলে তাকে কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। দালালের মাধ্যমে গেলে এটি আরো বেড়ে যায়। এর মধ্যে বিমান ভাড়া ছাড়া উল্লেখযোগ্য টাকাই বিদেশ থেকে ভিসা কেনা বাবদ খরচ করতে হয়। তিনি বলেন, ভিসা ট্রেডিং বন্ধ করতে না পারলে বিদেশগামী শ্রমিকের অভিবাসন ব্যয় কোনোভাবেই কমানো সম্ভব হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement