২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বঞ্চনার ৭ বছর পর অবশেষে সহকারী জজ হলেন ৫ জন

আ’লীগ সরকারের সময় ভেরিফিকেশনের নামে নেগেটিভ রিপোর্টের শিকার
-


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছর সাত মাসের স্বৈরশাসনে ভেরিফিকেশনের নামে নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়ার কারণে বহু মেধাবী তরুণের কপাল পোড়ে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ লাভে বঞ্চিত হন। সহকারী জজ হতে প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও পাঁচজনের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে। ভেরিফিকেশনের নামে নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়ায় আটকে যায় তাদের সব প্রচেষ্টা। বঞ্চনা আর হতাশা নিয়ে কেটে যায় সাত বছর।
তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিচারক পদে আসীন হওয়ার জন্য দরজা খুলে যায়। ২০১৫ সালে জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ১০ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভেরিফিকেশনের নামে বঞ্চিত পাঁচ প্রার্থীর বিষয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। আগামী ১ অক্টোবর তাদের নির্ধারিত কর্মস্থলে সহকারী জজ হিসেবে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে।
এ পাঁচজন হলেন- লক্ষ্মীপুরের আহসান হাবীব; তাকে সহকারী জজ হিসেবে বরিশালে পদায়ন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের এস এম ইয়াসীর আরাফাত ও মো: আমিনুল হক ছিদ্দিকী; তাদের কুষ্টিয়া ও হবিগঞ্জে পদায়ন করা হয়েছে; ঢাকার আবদুল্লাহ আল হাসিবকে যশোর ও চাঁদপুরের আবদুল্লাহ আল নোমানকে সিরাজগঞ্জের সহকারী জজ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

২০১৫ সালে দশম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সে অনুসারে পরীক্ষা শেষে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল তাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তাদের নামে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
পরবর্তীতে এ পাঁচজন উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। ২০১৯ সালে হাইকোর্টে রিট করেন তারা। ওই রিটে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০২২ সালে রায় দেন হাইকোর্ট। কিন্তু সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় রাষ্ট্রপক্ষ।
পাঁচজনের একজন যা বললেন : প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর পাঁচজনের একজন নিজের ফেসবুক আইডিতে নিজের মতামত তুলে ধরেন। তিনি তার লেখনীতে উল্লেখ করেন, ‘২০১৫ সালের বিজ্ঞপ্তি, ২০১৭ সালে সুপারিশ প্রাপ্তি, আর ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন। সংক্ষেপে দশম বিজেএসের ইতিহাস। কিন্তু আমরা কিছু সুপারিশপ্রাপ্তের কপালে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন জোটেনি- কারণ বলতে গেলে অনেক; এলাকার কিছু কুচক্রী লোকের হিংসা, শাসকগোষ্ঠীর নেতিবাচক ভূমিকা, দশম বিজেএসে আমার সাথেই সুপারিশপ্রাপ্ত সারথি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-সিনিয়র-জুনিয়রদের অপ্রত্যাশিত নেতিবাচক হস্তক্ষেপ- সব মিলিয়ে আমার রিপোর্ট নেগেটিভ।

সেই কঠিন সময়ে আমার অনেক শুভাকাক্সক্ষী পাশে ছিলেন, চেষ্টা করেছেন সহযোগিতা করার। আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। আর যারা অপচেষ্টা চালিয়েছেন তারাও প্রায় সাত বছর সফল ছিলেন মাশাআল্লাহ! আপনাদের আল্লাহ হেদায়েত দান করুন। আপনাদের প্রতি এখন আমার আর কোনো ক্ষোভ নাই আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের এরকম আচরণের পেছনে আমার কোনো অপরাধ বা দোষ থাকলে নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন। আমিও আপনাদের ক্ষমা করে দিলাম। আল্লাহ আমার এই পথচলা সহজ করে দিন। এত দিন পর যাদের দোয়ার উসিলায় এমন একটা সুযোগ আল্লাহ করে দিয়েছেন তাদের আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন।’
এ বিষয়ে আইনজীবী ফয়েজউল্লাহ ফয়েজ বলেন, তারা দশম বিজেএস পরীক্ষায় ২০১৭ সালে সুপারিশপ্রাপ্ত। তাদের পক্ষে হাইকোর্টে রিট পিটিশনের আইনজীবী ছিলাম আমি। তাদের মধ্যে একজন আমার বন্ধু, ভর্তি পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছিলেন এবং অনার্স মাস্টার্স দুটোতেই ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন, ব্যাচের সেরা পাঁচজনের একজন অথচ তাকে বঞ্চিত রেখেছে দীর্ঘ দিন।
হাইকোর্টের রায় হয়েছে যে সালে, সেই সালে কিন্তু তার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকার লিভ টু আপিল করে এবং দীর্ঘ দিনের নজির ভেঙে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী লিভ দিয়ে দেন। অথচ তার আগে আপিল বিভাগের এ ধরনের যত লিভ পিটিশন হয়েছে সব খারিজ হয়েছে।
আর ইয়াসির আরাফাত ইতোমধ্যেই অ্যাডমিন ক্যাডারে জয়েন করেছেন। অন্য চারজনের সবাই যোগদান করবেন কি না শিওর না। তাদের সাথে যে অবিচার আওয়ামী লীগ সরকার এবং আপিল বিভাগ করেছে তার বিচার হওয়া দরকার। আর তাদের জ্যেষ্ঠতা দেয়ার কথা প্রজ্ঞাপনে আছে। তবে সে অনুসারে সুযোগ সুবিধা না পেলে তো তারা আবার বৈষম্যের শিকার হবেন।


আরো সংবাদ



premium cement