২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
উল্লাপাড়ায় আওয়ামী দুঃশাসন (সমাপ্ত)

বেপরোয়া ছিলেন তানভীর ইমামের সহযোগীরা

বেপরোয়া ছিলেন তানভীর ইমামের সহযোগীরা -

উল্লাপাড়া ছিল শান্তির নগরী। শিক্ষানগরী হিসেবেও পরিচিতি পায় একসময়। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বদলাতে থাকে উল্লাপাড়ার দৃশ্যপট। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা করা হয় সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচটি ইমামকে। শফিকুল ইসলাম শফি তখন স্থানীয় এমপি। ক্ষমতায় আসার পর পুরো উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় লোক দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। এরপর শুরু হয় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ।
অভিযোগ রয়েছে, এই নিয়োগে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেন এমপি শফি ও তার স্ত্রী সিন্ডিকেট। বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি দমনে প্রশাসনকেও দলীয়করণ করা হয়। দিনে রাতে চালানো হয় অভিযান। সরকারি জমি, খাস জায়গা দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় এমপির অনুসারীরা। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাইটগার্ড নিয়োগেও লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠে এমপি শফি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

২০১৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম। এরপর উল্লাপাড়ায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের দমনপীড়ন আরো বেড়ে যায়। সেই সাথে দুর্নীতি-অনিয়মের মাত্রাও বাড়তে থাকে।
স্থানীয়রা বলছেন, এইচটি ইমাম ছিলেন শেখ হাসিনার পর বিগত সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ইচ্ছে করলে শুধু উল্লাপাড়া নয়, গোটা সিরাজগঞ্জকেই উন্নয়নের মাধ্যমে বদলে দিতে পারতেন। করতে পারতেন বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা, শিল্প প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিনি তা না করে পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তন করতে মনোযোগী হন। প্রায় তিন দশক আগে প্রতিষ্ঠিত উল্লাপাড়া আরএস কলেজের নাম পরিবর্তন করে ‘এইচটি ইমাম ডিগ্রি কলেজ’ করা হয়। পাকিস্তান আমলের শুরুতে প্রতিষ্ঠিত হামিদা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নাম পরিবর্তন করে নিজের নামে করেন। নিজে প্রধানমন্ত্রীর প্রতাপশালী উপদেষ্টা, ছেলে তানভীর ইমাম স্থানীয় এমপি হওয়ায় তাদের ইচ্ছেতেই সব কিছু চলতে থাকে।

এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম এমপি হওয়ার পর থেকে উল্লাপাড়া উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব অফিস-আদালত নিয়ন্ত্রণে গড়ে ওঠে সিন্ডিকেট। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদস্য সাবেক পৌর মেয়র এসএম নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান পান্না, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও তানভীর ইমামের সর্বশেষ পিএস মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল, সলপ ইউপি চেয়ারম্যান ও তানভীর ইমামের সাবেক পিএস ইঞ্জিনিয়ার শওকত ওসমান, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কমিশনার আমিরুল ইসলাম আরজু, সলপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী এহসানুল হাসান সন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবুল বাশার প্রমুখ এই সিন্ডিকেটে জড়িত ছিলেন। তাদের কেউ কেউ আবার এমপি শফি সিন্ডিকেটেও ছিলেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক মাদ্রাসাসহ সব জায়গায় নিয়োগ ও কমিটি বাণিজ্য করেছেন তানভীর ইমামের এই সিন্ডিকেট।


আরো সংবাদ



premium cement