২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

টানা বৃষ্টিতে জনজীবনে স্থবিরতা

-


তিন দিনের টানা অঝর বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। শ্রমজীবীরা কর্মহীন হয়ে বসে আছেন। বিরতিহীন বৃষ্টিতে গরিব-অসহায় মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। কোথাও কোথাও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের ঘের। বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, শরৎকাল মানে মেঘে ঢাকা নীলাকাশ। এই বৃষ্টি তো এই রোদ। কিন্তু তিন দিন ধরে বিরতিহীনভাবে পড়ছে বৃষ্টি। বিগত তিন দিনে কোথাও দেখা মিলেনি সূর্য্যরে। বৃষ্টিপাতের কারণে রিক্সা, ভ্যান,পাথর শ্রমিকরা,অসহায় মানুষজন কর্মহীন বসে আছে। তারা মহা কষ্টে দিনাপাত করছে। সাধারণ মানুষ জন, স্কুল, কলেজ মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা চরম সমস্যা মোকাবেলা করছে। গত তিন দিন ধরে পঞ্চগড়ে বিরতিহীনভাবে বৃষ্টি হওয়ায় গরিব অসহায় মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।

পঞ্চগড়ের জগদল, বোর্ড অফিস, দশ মাইল, ভজনপুর, বুড়াবুড়ি, তেতুঁলিয়া, সরদার পাড়া, রনচন্ডি, খয়খট পাড়া, তিরনই, সিপাই পাড়া, বাংলা বান্ধ্যাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার পাথর শ্রমিক পাথর ভাঙ্গা, পাথর বাছাই করা,পাথর তুলার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তিন দিন ধরে বিরতিহীনভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে শ্রমিকদের কোনো আয় হচ্ছে না। যার কারণে তাদের জীবন-জীবিকায় বড়ই কষ্ট হচ্ছে। যেখানে একজন পাথর শ্রমিক প্রতিদিন ৫০০-৭০০ টাকা উপার্জন করে। সেখানে তারা বৃষ্টির কারণে কাজে যেতে পারছে না। এ দিকে পঞ্চগড়ের রিকশাচালক কবির হোসেন বলেন, সারা দিন বৃষ্টি, রাস্তাঘাট ফাঁকা। লোকজন নেই। তবু সংসারের জন্য রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। জগদল বাজারের আইয়ুব আলী বলেন, নদীতে পাথর তুলতে গেছি। কিন্তু বেশি সময় থাকতে পারিনি। ঠাণ্ডা লাগে। তেঁতুলিয়া উপজেলার অনেক পাথর শ্রমিক মহানন্দা, ডাহুক নদীতে, পঞ্চগড় সদর উপজেলার করতোয়া, তালমা, বোদা উপজেলার ঘোড়ামারা ও আউলিয়া ঘাট নদীতে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে পাথর তুলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। জীবন ও সংসার তাদের ঘরে বসে থাকতে দেয় না। অভাবী সংসারের জ্বালায় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বের হতে হয়েছে।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীতে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। নীলফামারীর ছোট-বড় সব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শাকসবজি ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মৎস্যচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে খেটে খাওয়া মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

নীলফামারী সদরের টুপামারী ইউনিয়নের পুরনো স্টেশন গ্রামের দিনমজুর বাচ্চু মিয়া বলেন, মুই তিন দিন থেকে কাজোত বের হওয়ার পারো না। মুই একদিন কাজোত না গেলে মোর বাড়িত হাড়িতে আগুন জ্বলে না। মুই পরিবার নিয়া দিশাহারা হয়ে পড়িছু। ডোমার উপজেলার মাছচাষি আব্দুর রহিম বলেন, টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে তার পুকুরের মাছ বের হয়ে অনেক ক্ষতি হয়েছে।
এ দিকে অব্যাহত ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫১ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। পানির গতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাগাতিপাড়া (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, নাটোরের বাগাতিপাড়ায় টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবারও দিনব্যাপী থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরেছে। কখনো মুষলধারে আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। সড়কে যান চলাচল কমে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম লক্ষ করা গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, গত মঙ্গলবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ বাইরে যাচ্ছেন না বললেই চলে। শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। তারা কাজে বের হতে পারছেন না। তা ছাড়াও অটোচালকরা জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হলেও কাক্সিক্ষত যাত্রী পাচ্ছেন না। স্বাভাবিকের তুলনায় কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের।
এ দিকে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা জানান, টানা বৃষ্টিতে সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল। শিক্ষকরা এলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরাই ঘর থেকে বের হয়নি। কৃষকরা জানান, উপজেলায় টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষেতে পানি জমা হলেও তা হয়তো তেমন ক্ষতি করবে না। তবে কিছু সবজিক্ষেতে জলাবদ্ধতার কারণে কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
কৃষি কর্মকর্তা ড. ভবসিন্ধু রায় বলেন, বৃষ্টির পানিতে এই উপজেলার ফসলের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement