২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

পোশাক কারখানায় ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য

-


দেশের সব পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এতে পোশাক শিল্পাঞ্চলে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। সব পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার মাধ্যমে এ খাতে চলমান অস্থিরতার অবসান হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন গতকাল সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে দলে দলে কারখানায় যোগ দিয়েছেন পোশাকশ্রমিকেরা। এতে সাভার, গাজীপুরে বেশির ভাগ তৈরী পোশাক কারখানায় চালু রয়েছে উৎপাদনকার্যক্রম। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। এ ছাড়া আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় বিভিন্ন কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, এপিবিএন ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছিল।

কর্মস্থলে যোগ দিয়ে পোশাকশ্রমিকরা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় তারা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। এখন দাবিমানায় খুশি। তারা আশা করছেন, শান্তিপূর্ণভাবে এখন সবাই কাজ করতে পারবেন।
আওয়াজ ফাউন্ডেশনের অর্থ সম্পাদক এবং সম্মেলিত গার্মেন্টশ্রমিক ফেডারেশনের ভাইস চেয়ারম্যান খাদিজা আক্তার বলেন ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার এবং গাজীপুরের সব পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। তবে আশুলিয়ায় তিনটি কারখানা বন্ধ রয়েছে। বন্ধ তিনটি কারখানার মধ্যে দু’টি কারখানা আজ খুলে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন যেসব কারখানা বন্ধ রয়েছে তা আসলে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে নয়। এসব কারখানা আর্থিকভাবে সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এজন্য এসব কারখানা খুলতে সময় নেয়া হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

দেশের পোশাক খাতের চলমান অস্থিরতা নিরসনের জন্য গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকার, বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে এ নিয়ে কথা বলেন নেতারা। শ্রমিক নেতা কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুযোগ পেলেই যেন অস্থিরতা তৈরি না করা হয় এজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। কোনো দাবি থাকলে অস্থিরতা তৈরি না করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য তিনি শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর, আগস্টের শেষ দিকে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়। ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ, শ্রম আইন সংশোধনসহ ১৮ দফা দাবি তাদের। তবে এই বিক্ষোভে বিদেশী ইন্ধনের কথাই বারবার বলে এসেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসও ছিল। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, কষ্ট হলেও সব কিছু বিবেচনা করে দাবি মেনে নিতে সম্মত হয়েছেন মালিকরা। শ্রমিকদের কোনো দাবি থাকলে, রাস্তায় না নেমে মালিকদের সাথে আলোচনার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘কারখানায় স্থিতিশীল পরিবেশ ফেরাতে ১৮ দফা মেনে নিয়েছেন মালিকরা। বিগত সরকারের সময়ে শ্রমিকদের দমিয়ে রাখা হয়েছিল। গতকাল থেকে সব পোশাক কারখানা খুলছে। দৈনিক হাজিরা বিলের সাথে আরো ২২৫ টাকা করে পাবেন শ্রমিকরা। ন্যূনতম মজুরি কার্যকারিতা নিয়ে বিজিএমইএ কাজ করবে। রেশনিং হিসাবে শ্রমঘন এলাকায় ন্যায্য দামে নিত্যপণ্য বিক্রি হবে। স্থায়ী রেশনিংয়ের ব্যবস্থা হবে। নিম্নতম মজুরিকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহার হবে। হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সমস্যা সমাধান হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সমস্যাগুলোও সমাধান করা হবে। মালিক-শ্রমিক কোনো পক্ষ থেকে অসহযোগিতা থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কারখানা খুলে দেয়ার কারণে পোশাকশ্রমিকরা সকাল ৮টা থেকে কর্মস্থলে যোগ দিয়ে উৎপাদন শুরু করেন। অধিকাংশ কারখানায় উৎপাদন চললেও এখনো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কয়েকটি কারখানা। তবে কোথাও কোনো বিক্ষোভ ও অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, কিছুদিন ধরেই পোশাক খাতে বিভিন্ন কারণে শ্রমিক আন্দোলন চলছে। সব দাবি পর্যালোচনা করে দেখা যায় শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে শিল্প মন্ত্রণালয়ে মালিকপক্ষ, শ্রমিক ও সরকারের বৈঠকে সব দাবি মেনে নেয়া হয়। এর একটি যৌথ ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। ফলে শিল্পাঞ্চলে পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। শ্রমিকরাও কাজে যোগ দিয়েছেন। আশা করছি, এখন শিল্পাঞ্চলে সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরে আসবে।

শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো: সারোয়ার আলম বলেন, গতকাল সার্বিক পরিস্থিতি ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে কয়েকটি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ রয়েছে। সেগুলোও খুলে দেয়া হবে। এছাড়া পাঁচটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে চারটি ইপিজেডের। বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই আর্থিক সঙ্কটের কারণে বন্ধ। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর আওতাধীন এলাকায় এক হাজার ৮৬৩টি কলকারখানা রয়েছে। যার বেশির ভাগই পোশাক কারখানা।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ এর টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, গাজীপুরে আজ ১৪টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ছয়দানা এলাকায় ফুল এভার বিডি লিমিটেডও একটি। তাদের শ্রমিকরা এক মাসের বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
তুলে নিয়ে বেঁধে মারধর, মৃত ভেবে দুই ছাত্রদল নেতাকে ফেলে গেল দুর্বৃত্তরা সাকিবের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে না বিসিবি সার্চ কমিটি থেকে বুলবুলকে অব্যহতি শান্তির জন্য জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দুই বন্দর দিয়ে ৬১ টন ইলিশ গেল ভারতে রাষ্ট্র সংস্কার করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সময়ের দাবি: সৈয়দ ফয়জুল করীম মোদির সাথে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ কেন হলো না মিত্রদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, লেবাননে সর্বশক্তি দিয়ে হামলার নির্দেশ নেতানিয়াহুর গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ হাবিপ্রবি থেকেই দ্রুত ভিসি নিয়োগের দাবিতে আবারো মানববন্ধন দুর্বল ব্যাংকে রাখা আমানতকারীদের টাকা কতটা ঝুঁকিতে

সকল