২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

শিক্ষা ক্যাডার ছেড়ে ভিন্ন ক্যাডারের জন্য তদবির

অন্যদের তুলনায় শিক্ষা ক্যাডারে নানা বৈষম্য
- ছবি - ইন্টারনেট


দীর্ঘদিন থেকেই অন্য ক্যাডারের তুলনায় শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে বৈষম্যের অবসান চেয়েও প্রতিকার পাননি তারা। ফলে এখন বাধ্য হয়েই ক্লাসরুমের বাইরে আসতে চাইছেন শিক্ষকরা। আবার অনেক কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু করা হলেও সেই অনুপাতে বাড়ানো হয়নি শিক্ষকের পদ। ফলে মাত্র দুই-তিনজন শিক্ষক দিয়েই চালাতে হচ্ছে পুরো কলেজের ক্লাস এবং অন্যান্য দাফতরিক কার্যক্রম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার যেখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সেখানে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি এবং শিক্ষা ক্যাডারের এই বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ক্যাডার পরিবর্তন করে অন্য ক্যাডারে চলে আসতে চাইছেন অনেক শিক্ষক। ইতোমধ্যে শিক্ষা ক্যাডারের অনেকেই চাকুরি ছেড়ে প্রশাসন, নীরিক্ষা ও হিসাব ক্যাডার, বন ক্যাডার এবং কর ও শুল্ক ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন। গত কয়েক দিনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে শিক্ষা ক্যাডারের লোকজনই এখন ক্লাসের বাইরে আসতে নানাভাবে দেনদরবার করছেন। বিশেষ করে অন্য ক্যাডারের তুলনায় শিক্ষা ক্যাডারে বৈষম্য থাকায় এ নিয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সূত্র মতে, সর্বশেষ গতকাল বুধবার শিক্ষা ক্যাডারের ৯ কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে অন্য ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের লোকজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা ক্যাডারের নানা বৈষম্য নিয়ে দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এখন গত ৫ আগস্ট দেশে ছাত্র জনতার বিপ্লবের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই বৈষম্য দূর করতে উদ্যোগী হবেন এমন প্রত্যাশা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের।
সূত্র মতে, গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে শিক্ষা ক্যাডারের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রশাসন ক্যাডার, নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডার, বন ক্যাডার, কর ক্যাডার এবং শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৫৩ ধারা অনুযায়ী অন্য ক্যাডারের চাকরিতে যোগদানের জন্য শিক্ষা ক্যাডারের চাকরি থেকে তাদের ইস্তফা গ্রহণ করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সরকারি কলেজের প্রভাষক মো: আশরাফুল হক, রাজবাড়ী পাংশা সরকারি কলেজের প্রভাষক মো: মোস্তাফিজুর রহমান ও চট্টগ্রামের পটিয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক ফাহামিদা জেরিন ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ঝিনাইদহের মহেশপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক এম এ রহিম ৪১তম বিসিএসে নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারে সহকারী মহাহিসাব রক্ষক পদে যোগ দিয়েছেন। নওগাঁর সরকারি বসির উদ্দিন মেমোরিয়াল কো-অপারেটিভ মহিলা কলেজের প্রভাষক মো: মশিউর রহমান ও পিরোজপুরের সরকারি স্বরূপকাঠি কলেজের প্রিয়াংকা হালদার ৪১তম বিসিএসে বন ক্যাডারে সহকারী বন সংরক্ষক পদে যোগ দিয়েছেন।
এ ছাড়া ৪১তম বিসিএসে কর ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন ঢাকার হাজারীবাগের শহীদ বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক ফার্সিয়া রেজিয়া, পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন শরীয়তপুরের নড়িয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক কাজী হুমায়রা এবং শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন মেহেরপুরের মুজিবনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো: শরিফুল ইসলাম। সূত্র জানায়, এর আগেও চাকরি ছেড়ে প্রশাসন ক্যাডার ও পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন শিক্ষা ক্যাডারের তিন কর্মকর্তা।

শিক্ষা ক্যাডারের নানা বৈষম্যের কথা জানিয়ে কয়েকজন শিক্ষক নয়া দিগন্তকে জানান, অন্য ক্যাডারের মতো শিক্ষা ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি অনুসৃত না হওয়ায় তারা পিছিয়ে আছেন। বেতনস্কেল অনুযায়ী ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ গ্রেড প্রাপ্য কর্মকর্তাদের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু এ বিষয়েও কোনো অগ্রগতি নেই। বর্তমান শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত সরকারি কলেজগুলোতে উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা স্তরে প্রায় ৫০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের পদ সৃজন অপরিহার্য। অথচ বর্তমান সরকারি কলেজসহ শিক্ষা প্রশাসনে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার সংখ্যা মাত্র ১৬ হাজার। শিক্ষার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতে ১২ হাজার ৪৪৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব আটকে আছে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে।

শিক্ষা ক্যাডারের বঞ্চিতরা আরো জানান, প্রশাসনসহ অন্যান্য সেক্টরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অফিস রয়েছে। কিন্তু জেলা ও উপজেলায় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনের জন্য শক্তিশালী শিক্ষা প্রশাসন গড়ে উঠেনি। বর্তমান সরকার প্রতিটি উপজেলায় এক বা একাধিক কলেজ সরকারি করেছে, সেখানে উচ্চশিক্ষা চালু আছে। উপজেলায় ও জেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থাকলেও উচ্চশিক্ষা দেখভালের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের অধীনে শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত জেলা ও উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
শিক্ষা ক্যাডার ছেড়ে শিক্ষকরা কেন অন্য ক্যাডারে চলে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো: মাঈন উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় শিক্ষা ক্যাডারের বঞ্চনা দূর করার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো বাড়িয়েছে শিক্ষা ক্যাডারকে ৩য় গ্রেড থেকে ৪র্থ গ্রেডে অবনমন করেছে, পাঠদানের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক পদ সৃজন ১০ বছর ধরে বন্ধ রেখেছে, শিক্ষা প্রশাসন থেকে শিক্ষা ক্যাডারকে উৎখাত করেছে, সরকারি কলেজের শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়াতে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় অনেকেই অন্য ক্যাডারের চলে যাচ্ছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতা আরো গভীর করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র তুলে নিয়ে বেঁধে মারধর, মৃত ভেবে দুই ছাত্রদল নেতাকে ফেলে গেল দুর্বৃত্তরা সাকিবের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে না বিসিবি সার্চ কমিটি থেকে বুলবুলকে অব্যহতি শান্তির জন্য জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দুই বন্দর দিয়ে ৬১ টন ইলিশ গেল ভারতে রাষ্ট্র সংস্কার করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সময়ের দাবি: সৈয়দ ফয়জুল করীম মোদির সাথে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ কেন হলো না মিত্রদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, লেবাননে সর্বশক্তি দিয়ে হামলার নির্দেশ নেতানিয়াহুর গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ হাবিপ্রবি থেকেই দ্রুত ভিসি নিয়োগের দাবিতে আবারো মানববন্ধন

সকল