২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

স্বৈরাচারের পতনেই সব বিপদ কেটে যায়নি : তারেক রহমান

কিশোরগঞ্জে বিএনপির জনসভায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান : নয়া দিগন্ত -


বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। দেশই আমার প্রথম এবং শেষ ঠিকানা। বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে, তবে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে বলেই সব বিপদ কেটে যায়নি। এখনো সামনে বিপদ আছে, আমাদের এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
গতকাল কিশোরগঞ্জের জনসভায় তিনি বলেন, দলমত নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে। বিএনপি বিভক্তি চায় না। আমরা চাই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে। আমরা দলের পক্ষ থেকে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমরা চাই সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করতে। বিগত ১৭ বছরে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় যেসব রাজনৈতিক দল আমাদের সাথে ছিল, যেসব রাজনৈতিক দলের নেতা আমাদের সাথে ছিলেন এবং এখনো আছেন, আমরা চাই, সবাইকে নিয়েই জাতি গঠন করতে, সবাইকে নিয়েই এ দেশকে পুনর্গঠন করতে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহতদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান উপলক্ষে গতকাল বিকেলে কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তৃতায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারের কিছু প্রেতাত্মা এখনো রয়ে গেছে। আজকে লাখো জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এই সরকার জনগণের রাজনৈতিক যে প্রত্যাশা, যে অধিকার, যার জন্যে মানুষ বিগত ১৭ বছর ধরে সংগ্রাম করছে, সেই অধিকার যাতে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তার জন্য তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু আমাদের এটিও সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে, এই সরকার জনগণের রাজনৈতিক যে অধিকার সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব যেন না হয়, যাতে স্বৈরাচার আবার কোনো ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পায়।
তারেক রহমান বলেন, আজ আমরা মুক্ত ও ভয়হীন পরিবেশে কথা বলছি। এই যে শঙ্কামুক্ত পরিবেশে আমরা একত্রিত হয়েছি, এই সময়টার জন্য বিগত ১৭ বছর এ দেশের মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলাতে আমরা ১৭ জন মানুষকে হারিয়েছি, যারা আত্মত্যাগ করেছেন এই দেশের মানুষের অধিকারের জন্য। ১৬ জন মানুষ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যারা ভয় পাননি, পিছিয়ে যাননি দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলার ক্ষেত্রে। সারা বাংলাদেশে এ রকম হাজারো মানুষ আছেন, হাজারো শহীদ পরিবার আছে, যারা আত্মত্যাগ করেছেন।

বিএনপিরই শুধু ৫০ থেকে ৬০ লাখের মতো নেতাকর্মী বিগত স্বৈরাচারের সময় বিভিন্নভাবে নির্যাতিত ও অত্যাচারিত হয়েছেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির বাইরেও বহু রাজনৈতিক দল আছে, যারা একইভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের মতো অত্যাচারিত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। এই যে এত মানুষ শহীদ হয়েছেন, এত মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন, এত মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন, কেন এই মানুষগুলো অত্যাচারিত হলেন, আত্মত্যাগ করলেন। কারণ একটাই, এই মানুষগুলো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। এ রকম একটি মুক্ত পরিবেশের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি স্বৈরাচার দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল বাংলাদেশের মানুষকে। এই বাংলাদেশের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে গুলির সামনে বুক পেতে দিতে রাজি, তার পরও স্বৈরাচারকে মেনে নিতে রাজি না। সেজন্য হাজারো মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই বাংলাদেশকে পেয়েছি। একাত্তর সালে যেমন লক্ষ ত্যাগের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল আবারো ২০২৪ সালের আগষ্ট মাসে আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও মানুষের অধিকারকে নিশ্চিত করে স্বৈরাচারকে বিদায় করতে সক্ষম হয়েছি। এই বিজয় এবং আত্মত্যাগ আমাদের ধরে রাখতে হবে, এর মূল্য আমাদের দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি মো: শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এতে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু, অ্যাডভোকেট মো: জালাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন মধু ও রুহুল আমিন আকিল, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া ও আমিনুল ইসলাম আশফাক প্রমুখসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement