২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজার স্কুলে হামলায় শিশুসহ ২২ ফিলিস্তিনি নিহত

-

-শিশুদের বিরুদ্ধে ‘নির্লজ্জ অপরাধ’ করছে ইসরাইল : খামেনি
-৭২ ঘণ্টায় আরো শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা

গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলে আল-জাইতুন স্কুলে ইসরাইলি হামলায় আশ্রয় নেয়া ২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, ইসরাইল স্কুলটিতে বোমাবর্ষণ করে ‘ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ’ চালিয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৩ শিশু, ছয় নারী ও তিন মাস বয়সী একটি শিশু রয়েছে। ইউএনআরডব্লিইএ পরিচালিত স্কুলগুলোতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে ইসরাইলের সেনারা জানে। তা সত্ত্বেও তাদের ওপর ইসরাইলিরা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযানগুলো নিরাপত্তা বোধকে ভেঙে দেয় এবং মানুষকে আবারো বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য করে।
অন্যদিকে খান ইউনুস এবং রাফাহ-এর মধ্যবর্তী একটি এলাকাকেও লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাঁচজন কর্মচারী যারা গুদাম পরিচালনা কাজে জড়িত ছিলেন তাদের হত্যা করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজা উপত্যকার মুসবাহ এলাকায় মন্ত্রণালয়ের গুদামে ইসরাইলি হামলায় তাদের পাঁচজন কর্মী নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্স ক্রুরা নিহতদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না বা আহতদের চিকিৎসাও দিতে পারছে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টেলিগ্রামের একটি পোস্টে বলা হয়, ঘটনাস্থল থেকে আহতদের রক্ষা ও উদ্ধারের জন্য সমস্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট পক্ষকে হস্তক্ষেপ করার জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে। এর আগেও চিকিৎসা গুদামে হামলা হয়েছে। আল-শিফা হাসপাতাল, আল-আওদা হাসপাতাল, ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল এবং অন্যান্য গুদাম পরিচালনাগুলোতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই কারণেই গাজার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা পণ্য সরবরাহের তীব্র ঘাটতি রয়েছে।
শিশুদের নিদারুণ মৃত্যু : ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় শিশুদের অধিকার রক্ষার বৈশ্বিক চুক্তির মারাত্মক লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে জাতিসঙ্ঘের একটি কমিটি। তারা বলেছে, গাজায় ইসরাইলের সামরিক পদক্ষেপ শিশুদের জীবনে বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলেছে। গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে কমিটির ভাইস চেয়ারপারসন ব্রাগি গুডব্র্যান্ডসন বলেন, গাজায় শিশুদের এমন নিদারুণ মৃত্যু বলতে গেলে ইতিহাসে পাওয়া কঠিন।
গাজায় সাম্প্রতিক ইতিহাসে শিশুদের অধিকার রক্ষার বৈশ্বিক চুক্তির সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন ইসরাইল করেছে। গত অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক হামলা শুরুর পর থেকে ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি শিশু-কিশোর উল্লেখ করে ব্রাগি গুডব্র্যান্ডসন আরো বলেন, এটি আসলেই ইতিহাসের এক অন্ধকার স্থান। তিনি বলেন, ‘শিশুদের অধিকার রক্ষার চুক্তির এত ব্যাপক মাত্রায় লঙ্ঘনের চিত্র গাজার আগে কোথাও দেখেছি বলে মনে করি না।
ব্রিটিশ ত্রাণ সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন গত জুনে এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া হতাহতের তালিকার বাইরেও হাজারো শিশু ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়। গাজাজুড়ে ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা চলছেই। গত শুক্রবার গাজা সিটি, নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন স্থানে হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। গাজায় শুক্রবার ২২২টি ত্রাণের ট্রাক ঢুকেছে বলে ইসরাইল দাবি করেছে।
শিশুদের বিরুদ্ধে ‘নির্লজ্জ অপরাধ’ : এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, শিশুদের বিরুদ্ধে ‘নির্লজ্জ অপরাধ’ করছে ইসরাইল। তিনি ইসরাইলকে ভয়ঙ্কর ব্যাধির সাথে তুলনা করে ফিলিস্তিন থেকে ইসরাইলি শক্তিকে নির্মূল করার জন্য মুসলমানদের থ‘অভ্যন্তরীণ শক্তি’ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় প্রতিদিনই হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা প্রাণ হারাচ্ছে। এমনকি হাজার হাজার শিশুকেও হত্যা করেছে এই বর্বর সেনারা। শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল । ওই হামলায় নিহত ৩৭ জনের মধ্যে তিন শিশুও রয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি হামলায় প্রতিদিনই শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এসব কথা উল্লেখ করে খামেনি এমন মন্তব্য করেছেন।
৭২ ঘণ্টায় শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা : অন্যদিকে গত ৭২ ঘণ্টায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নাগরিককে হত্যা করেছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। গাজাজুড়ে গত তিন দিনে আরো ২০৯ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। অবরুদ্ধ এই উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরাইল । সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাত চলছেই। প্রতিদিনই হামলা চালিয়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে। ইসরাইলের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নারী বা শিশুরাও। প্রায় ১১ মাস ধরে চলা এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪১ হাজার ৩৯১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ৯৫ হাজার ৭৬০ জন।


আরো সংবাদ



premium cement