২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

১২ বছর ধরে একই জায়গায় বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা মনির

ঘুষ বাণিজ্যেই কোটিপতি , ঘাট টেন্ডারে তেলেসমাতি
-

বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটে কর্মরত সমন্বয়ক কর্মকর্তা মনির হোসেন চাকরির শুরু থেকে একই জায়গায় ১২ বছর। তিনি ২০১২ সালে সুপারভাইজার হিসেবে সদরঘাটে যোগদান করেন। করোনাকালে পদোন্নতি পান তিনি। সমন্বয়ক কর্মকর্তা হওয়ার পর টেন্ডার ও ঘুষবাণিজ্য ছাড়াও নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মনির।
জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নদীবন্দরে ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের কোটায় সুপারভাইজার হিসেবে রাজস্ব খাতে যোগদান করেন মনির হোসেন। করোনাকালে তার পদোন্নতিও হয়। সুপারভাইজার থাকাকালীনই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মনির। বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নদীবন্দর এরিয়া মূলত পাগলা এলাকা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত। বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে প্রায় এক হাজার টিনশেড ও আধাপাকা দোকান। এ ছাড়া টং দোকানও শতে শতে। এসব দোকানে চা, সিগারেট,পান জর্দা ছাড়াও ভাতের হোটেল এমনকি মুদি দোকান গড়ে ওঠেছে। এ ছাড়া বালু ও সিমেন্ট গদি থেকে রোজ ১০০ টাকা করে এক লাখ ১৯ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয় মনিরের বিকাশে ছাড়াও তার বিশ্বস্ত পোর্টার জাকিরকে দিয়েও এ চাঁদা তোলা হয় কোনো কোনো সপ্তাহে। মূলত খেয়াঘাট ইজারাদারের লোকেরাই এ চাঁদা কালেকশন করেন দেন।
এরপরে সমন্বয়ক কর্মকর্তা মনির হোসেনের মোবাইলে পাঠিয়ে দেন কিংবা পোর্টার মনিরকে দেয়া হয় চাঁদা। প্রতিদিন না দিতে পারলে কেউ পরের দিন কিংবা সাপ্তাহিক হিসেবে দেন এ টাকা। এ ছাড়াও বুড়িগঙ্গার দুই তীরে গড়ে ওঠা বালু, ইট, সিমেন্ট, বাঁশ, স মিলগুলো থেকে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা নেয় মনির।
বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নৌ বন্দর সদরঘাটে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এ প্রতিবেদককে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, মনির হোসেন ২০১২ সালে ঢাকা নৌ বন্দরে সুপারভাইজার থাকাকালে বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরে কিংবা পাড়ে এক হাজারের বেশি টং দোকান থেকে দৈনিক ১০০ টাকা করে এক লাখ টাকা প্রতিদিন বিআইডব্লিউটিএর নামে খাজনার কথা বলে আদায় করেন। করোনাকালে সে পদোন্নতি পায় সমন্বয়ক কর্মকর্তা হয়ে যান। এরপর থেকেই তার বেপরোয়া প্রবৃত্তি বেড়ে যায়। ঢাকা নৌ বন্দরের ৪৭টা খেয়াঘাট ইজারা কার্যক্রম সে-ই নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিটি ঘাট থেকে মাসিক চার্জের নামে ৫০০০ টাকা করে প্রায় আড়াই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছেন মনির।
আগানগর ঘাটের সাবেক ইজারাদার জানান, এই ঘাটের ডান পাশে দুটি বটগাছ ছিল তা কেটে ফেলেছে মনির স্যার। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। সে ২ মাস পরপর আগে নদীর পাশের টং দোকানগুলো উচ্ছেদের নামে হামলা দিতো। দোকান প্রতি এক হাজার দিলে আর কিছু বলত না। এখনো টং দোকানগুলো থেকে নিয়মিত টাকা নিচ্ছেন মনির।
মিটফোর্ড ও আগানগর ঘাটের মাঝিরা জানান, পৃথিবীতে এত নিষ্ঠুর মানুষ কি করে একজন সরকারি কর্মচারী হতে পারে। তারা বলেন, আগানগর ঘাট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ খেয়া পার হয়। শতাধিক মাঝি থাকেন এ ঘাটে। অথচ ঘাটের পাশে দুটি বটগাছ ছিল তা কেটে ফেলেছে বিআইডব্লিউটিএ। এখন রৌদ্র ও গরমে গাছের ছায়ায় কোনো মাঝি বসতে পারে না। এমনকি শতে শতে পাখি এ গাছ দুটিতে রাতে দিনে থাকত। এখন পাখিরও সমস্যা মাঝিদেরও তাই।
সূত্র জানায়, মাসে সব মিলিয়ে অর্ধ্বকোটি টাকা চাঁদা নেয় মনির। এ ছাড়া জিনজিরা এলাকায় বুড়িগঙ্গার পাড়ে কিংবা নদীতে থাকা বাঁশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন মনির ও তার পোর্টার। এমনকি দুই তীরে বিভিন্ন কোম্পানিকে কিংবা ব্যক্তিকে মৌখিক চুক্তিতে স্পট অনুযায়ী মাসে ৩০, ৪০ ও ৫০ হাজার টাকা করে জমি ভাড়া দিয়েছেন মনির।
খোলামোড়া ঘাটের একাধিক টং দোকানি জানান, বিআইডব্লিউটিএর লোকেরা প্রতি মাসে ১২০০ টাকা আর ঘাট ইজারা মালিককে ৩০০০ টাকা দিতে হয়। তা না হলে দোকান ভেঙে ফেলে দেয়। মাঝে মাঝে ভাঙ্গেনও।
অন্যদিকে, ৫ আগষ্টের পর কয়েকটি ঘাট ইজারাদার দলকানা আওয়ামী লীগ হওয়ায় ঘাটের টাকা কালেকশন না করে পালিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ছাত্র কিংবা বিএনপি লোকজনের ভয়ে পালিয়েছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিআইডব্লিউটিএ জমা দেয়া টাকা ছাড়াও প্রতিটি ঘাট থেকে এক থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন পোর্ট অফিসার ও মনির।
অভিযুক্ত মনির এ প্রতিবেদককে বলেন, ১২ বছর যাবত এখানে আছি তা সত্যি। সুপারভাইজার থাকাকালে কিছু টাকা পয়সা অবৈধভাবে কামিয়েছি। তবে আগে পান সিগারেট খেতাম এখন খাই না এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। তা ছাড়া আমার বদলি ফাইল চেয়ারম্যানের দফতরে যে কোনো সময় বদলি হতে পারি।
বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নৌবন্দর যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন বলেন, আমাদের দক্ষ কোনো লোক নেই। তাই মনিরকে প্রমোশন দিয়ে সমন্বয়ক কর্মকর্তা এখানে রাখা হয়েছে। তবে তার ঘুষ বাণিজ্য কিংবা বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ে টং দোকানগুলো থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি জানা নেই।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা নয়া দিগন্তকে বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তার জানা নেই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement
রাজধানীতে সংঘর্ষে ২ যুবক নিহত জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু তোফাজ্জল হত্যা : ঢাবির ৬ শিক্ষার্থীর দায় স্বীকার কুমিল্লা-১০ বিনির্মাণে আমাদেরকে কাজ করতে হবে : ইয়াছিন আরাফাত উন্নয়নের নামে দুর্নীতির মহোৎসবে মেতেছিল আ’লীগ : হামিদ আজাদ ভাইকে হত্যা করাতে ১৪ মাসের ষড়যন্ত্র ভান্ডালজুড়ি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে ঢাবি ও জাবিতে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাংবাদিক রনো ও তার পরিবার চট্টগ্রাম পানগাঁও নৌরুট জনপ্রিয় করার উদ্যোগ

সকল