সাগর-রুনি হত্যার বিচার করে এখন দায়মুক্তির সময় : দুদু

সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনির হত্যার বিচার করে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের দায়মুক্তির এখনই সময় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উদ্যোগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল, সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার ও সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সাগর-রুনিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। যে সরকারের সময় হত্যা করা হয়েছিল, সেই সরকারের অনেক প্রিয়ভাজন ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিল বলে অনেক মানুষ মনে করে। এ কারণে দীর্ঘ সময় এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হয়েছে, কিন্তু চার্জশিট দেয়া হয়নি। এখন এই সরকারের (অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার) দায় মুক্তির সময়। যদি তারা এই দায় কাঁধ থেকে নামাতে চায়, তাহলে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার।
তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। সেই বিবেককে যদি মুক্ত না করা হয়, কালা কানুন যদি বাতিল করা না হয়, তাহলে দেশের কি পরিস্থিতি এটি তুলে ধরা সাংবাদিকদের জন্য খুব কঠিন।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এ দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। এটাকে আমরা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে জরুরি কাজ বলে মনে করি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, এখনো অনেক কালাকানুন আছে। এগুলো বাতিল করতে হবে। একটি গ্রহণযোগ্য আইন করতে হবে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে সব আইন করা হয়েছে, সেসব আইন বন্ধ করতে হবে।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা আইন করতে হবে। মুক্তভাবে সাংবাদিকতা করার সুযোগ করে দিতে হবে। যেসব সাংবাদিকরা হাসিনার কুকর্মে সমর্থন দিয়েছে আমরা তাদেরও বিচার চাই।
কবি হাসান হাফিজ বলেন, এখনো কালাকানুনগুলো দূর হয়নি। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এখনো নিরঙ্কুশ হয়নি, নিশ্চিত হয়নি। অনেক সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি। সেগুলোর বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি। সাগর-রুনির প্রকৃত খুনিদের যেন চিহ্নিত করা হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই সংস্কার শুরু হয়েছে এবং পরবর্তীতে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের হাতে সেই সংস্কার চলবে। গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি এখনো অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এগুলোর ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। আমরা তিনটা দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছি। প্রথম দাবি ছিল এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ এবং একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। দ্বিতীয় দাবি ছিল সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার। তৃতীয় দাবি ছিল সব বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিতে হবে। দীর্ঘ আন্দোলন এবং সংগ্রামের পরে সর্বশেষ জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে, ছাত্র জনতার রক্তের ওপর দিয়ে আজকে এই ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও এখনো দু’টি দাবি আদায় হয়নি।