২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

জাবি সাবেক ছাত্রলীগ নেতার রহস্যজনক মৃত্যু

-

গণধোলাইয়ের শিকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত বুধবার রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আটক করে গণস্বাস্থ্য মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে রাত সোয়া ৯টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শামীম বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, জমিদখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। গত ১৫ জুলাই রাতে ভিসির বাসভবনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট-সংলগ্ন একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন শামীম মোল্লা। তার অবস্থানের খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসা হয়। সেখানেও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে পুনরায় গণধোলাই দেয়। এ ঘটনার পর প্রক্টরিয়াল টিমের খবরে আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি দল নিরাপত্তা শাখায় আসে। এ সময় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম শামীমকে ১৫ জুলাই রাতে ভিসির বাসভবনে হামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শামীম মোল্লা হামলার ঘটনায় নিজের অংশগ্রহণ ও ঘটনাস্থলে হামলাকারীদের সাথে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক মেহেদী ইকবাল উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরবর্তী সময়ে রাত ৮টার দিকে প্রক্টরিয়াল টিম তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ৩৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, কেউই হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে মারধর করেনি। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আমিও তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। আর একজন মানুষ যিনি হেঁটে পুলিশের গাড়িতে গেছেন আর কিছুক্ষণের মধ্যে মারা গেছেন এর রহস্য উদঘাটন করা জরুরি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম গণধোলাইয়ে মৃত্যুর বিষয়টিকে অস্বাভাবিক উল্লেøখ করে বলেন, ১৫ জুলাই ভিসির বাসভবনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষার্থীরা আটকের পর মারধর করে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেয়। আমরা আশুলিয়া থানায় অবহিত করলে পুলিশের একটি টিম আসে। এরপর পুলিশে সোপর্দ করলে তিনি নিজে হেঁটে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। তখন তাকে দেখে আশঙ্কাজনক মনে হয়নি। পরবর্তী সময়ে পুলিশের গাড়িতে মৃত্যুর বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। বিষয়টি ভালোভাবে না জেনে মন্তব্য করতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, আমরা এই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, সুষ্ঠু তদন্ত শেষে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ নিয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুল কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমাদের একটি টিম পাঠাতে বলা হয়। পৌনে ৯টার দিকে মারধরের শিকার এক যুবককে উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি। ময়নাতদন্তের জন্য তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement