ভারত পানি না দিয়ে দেশকে মরুভূমি বানায় আর বর্ষায় বন্যা উপহার দেয় : গোলাম পরওয়ার
- খুলনা ব্যুরো
- ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৪০
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ভারত পানি না দিয়ে দেশকে মরুভূমি বানায় আর বর্ষায় বন্যা উপহার দেয়।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) খুলনার ডুমুরিয়ায় জামায়াতের উদ্যোগে জেলেখালী গ্রামে ভদ্রা নদীর ভাঙ্গনে ভিটাবাড়ি হারা পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, একদিকে আমাদের বড় সমস্যা দক্ষিণাঞ্চলের বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন অপরদিকে সীমান্তের ৫৪টি নদীর পানি ছেড়ে দেয়া। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত শুকনো মওসুমে পানি আটকিয়ে রাখে। আর বর্ষার সময় একসাথে সব গেট খুলে দেয়। শুনে আসছি, প্রতিবেশী দেশটি আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কিন্তু তারা গ্রীষ্মে পানি না দিয়ে আমাদের দেশকে বানায় মরুভূমি। আর বর্ষার সময় পানি ছেড়ে দিয়ে বন্যা উপহার দেয়।
ডুমুরিয়া উপজেলার বানিয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপজেলা আমির মাওলানা মোক্তার হোসেনের সভাপতিত্ব করেন। সেক্রেটারি মাওলানা হাবিবুর রহমানের পরিচালনায় আরো বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, আশরাফুল আলম, ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি হাফেজ বেলাল হুসাইন রিয়াদ, ডুমুরিয়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ও ঢাকাস্থ খুলনা ক্লাবের সভাপতি সরদার আবদুল ওয়াদুদ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, সাড়ে ১৫ বছর আমাদের একটা সরকার ছিল। তারা বলত দেশকে সিঙ্গাপুর ও কানাডা বানিয়েছে। তারা বলত আমাদের নাকি উন্নয়নের মহাসড়কে উঠিয়েছে। তাদের সব ছিল মিথ্যা ও বোগাস। তারা জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল।
তিনি বলেন, শহীদেরা আমাদের অনুপ্রেরণা, এক অদম্য চেতনার সাইরেন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শাহাদাৎ বরণকারী ভাইয়েরা ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলেছেন। হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত বাংলার মাটি ও মানুষের হৃদয়ে আশার ঢেউ তুলেছে একবিংশ শতাব্দীর সাহসী যুবক আবু সাঈদ, মুগ্ধ এবং তার সঙ্গীরা।
জামায়াতে ইসলামী সবসময় শহীদ পরিবারের পাশে থাকবে কথা দিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো প্রয়োজনে জামায়াতে ইসলামীকে স্মরণ করবেন, আমরা সর্বদা আমাদের সাধ্যমতো আপনাদের সুখে-দুঃখে সহযোগিতা করব।
অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার বলেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ছাত্রজনতাই বসিয়েছে। তাদের মূল কাজ হচ্ছে, রাষ্ট্রের যে বিশাল ক্ষতিসাধন করা হয়েছে তার সংস্কার করা। রাষ্ট্রের যেসব জায়গায় ক্ষতি করা হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা এগুলোর পুনর্বিন্যাস করবেন। নির্বাচনের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবেন। যখনই অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে, তখন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে তারা আবার নিজ নিজ জায়গায় চলে যাবেন। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি। আমরা তাদেরকে সঙ্গত সময় দেয়ার পক্ষে।
তিনি বলেন, আমাদের আকাশ এখনো কালো মেঘমুক্ত হয়নি। এখনো বাংলাদেশের আকাশে শকুনের নজর রয়েছে। আমাদেরকে এখনো আত্মতৃপ্তিতে ভোগার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষকে হয়তো এখনো অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমরা সবাই প্রস্তুত আছি সেজন্য।
তিনি বলেন, আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের শত শত নেতাকর্মীদের খুন ও গুম করা হয়েছে। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মিথ্যা মামলায় আজীবন কারাদণ্ড দিয়ে রেখে ক্ষ্যান্ত হয়নি। তাকে সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি গত ১৫ বছরের মধ্যে সাত বছরই কারাগারে কাটিয়েছি। যার কারণে আপনাদের খেদমত করতে পারিনি। আমার বাবাসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। আমি তাদের কাছে থাকতে পারিনি। হাজারো ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে ৫ আগস্ট দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতি আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, প্রত্যেক ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করবে। কেউ কাউকে বাঁধা দেবে না। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত সমাজ গঠন করি এবং সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসি।
ডুমুরিয়া এলাকার সাবেক এ এমপি বলেন, ২৯ নম্বর পোল্ডারের ডুমুরিয়ার চাঁদগড়, জালিয়াখালী ও শম্ভুনগর গ্রাম তিনটি ভদ্রা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। সেখানকার কয়েক শ’ পরিবারকে ভিটামাটি ছাড়তে হয়েছে। যারা রয়েছেন, তারাও সব হারিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এক সময়ের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। অভাব এখন যাদের নিত্যসঙ্গী। ইতোমধ্যে ভদ্রা নদীতে বিলীন হয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মসজিদ, দুটি ঈদগাহ, একটি মন্দির, একটি মাদরাসা, পাঁচটি স্লুইস গেট, জমিসহ হাজার হাজার কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি ও অসংখ্য গাছ। জামায়াতে ইসলামী তার দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।
পরে তিনি চাঁদগড়, জালিয়াখালী ও শম্ভুনগর গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ, চাল, ডাল ও আলুসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা