চুয়াডাঙ্গা তাল গাছের স্বল্পতা অস্তিত্বের লড়াইয়ে বাবুই পাখি
- চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
- ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩১
কবি রজনীকান্ত সেনের ভাষায়, ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আবহমান গ্রাম বাংলার বাসা তৈরির যে নিখুঁত কারিগর, কবির কালজয়ী ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতার নায়ক সেই বাবুই পাখি শিল্পের বড়াই করতেই পারে। তবে তাল গাছের স্বল্পতা আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বাবুই পাখি নিজেই আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে।
কালের বিবর্তনে নেই শিল্পের বড়াই। তাই আর কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রামবাংলার জনপদ। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগেও গ্রাম্য মেঠো পথ কিংবা প্রতিটি বাড়ির আনাচে-কানাচে তাল গাছের পাতায় পাতায় উুঁকি দিতো মন ভুলানো বাবুই পাখি ও দৃষ্টিনন্দন বাসা। তবে, এখন চিরচেনা সেই ছায়া সুনিবিড় গ্রামাঞ্চলেই বাবুই পাখি চোখে মেলানো ভার। মেঠোপথ বেয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটলেও চোখে পড়ে না ঐতিহ্যের বাহক বাবুই পাখি।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলা চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, জীবননগর উপজেলা থেকেও বাবুই পাখি আজ বিলুপ্ত প্রায়। বহুদিন চোখে পড়ে না তাল গাছের পাতায় পাতায় ঝুলে থাকা নিপুণ কারিগর বাবুই পাখির বাসা। আর তরুণ প্রজন্ম যেন থমকে আছে বইয়ের পাতায়। নাম শুনলেও বেশিরভাগই পাওয়া হয়নি চোখে দেখার সাধ। ১২ থেকে ১৪ বছর আগেও এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠান কিংবা রাস্তার ধারের প্রতিটি তাল গাছ আর খেজুর গাছেও দেখা যেত দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা।
অভিজ্ঞ জনদের ধারণা, বছরের পর বছর নির্বিচারে তালগাছ নিধনে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ সঙ্কট, ফসলি জমিতে অবাধে কীটনাশক প্রয়োগ, পাখি শিকারীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি আর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এ অঞ্চল থেকে বাবুই পাখি বিলুপ্তির কারণ।
সাধারণত বাবুই পাখি অর্ধেক বাসা তৈরির পর স্ত্রী সঙ্গীর সম্মতি নিয়ে চার থেকে পাঁচ দিনে সম্পূর্ণ বাসা প্রস্তুতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দৃষ্টিনন্দন বাসা তৈরি করে থাকে। শুরুতেই তারা বাসার নিচের অংশে দু’টি গর্ত রাখে। আর বাসা প্রস্তুত সম্পূর্ণ হলে এক দিকের গর্ত বন্ধ করে সেখানে ডিম রাখার উপযোগী করে তোলে। আর অন্যদিকের গর্তটি দিয়ে বাসার ভেতরে যাতায়াত করে। তবে স্ত্রী সঙ্গীর বাসা অপছন্দ হলে অর্ধেক কাজ ফেলে রেখে নতুন করে বাসা তৈরি করে।
এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, রাতে ঘর আলোকিত রাখতে জোনাকি ধরে নিয়ে বাসায় রাখে। সকাল হলেই তা আবার ছেড়ে দেয়। একটি পুরুষ বাবুই পাখি মৌসুমে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে। এ কাজে তারা খড়, ঝাউ, তালপাতা, কাশ ও লতাপাতা ব্যবহার করে। ধান ঘরে ওঠার মৌসুম বাবুই পাখির প্রজননের সময়। স্ত্রী বাবুই পাখির তা দেয়ার দু’সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। তবে তিন সপ্তাহের মাথায় বাবুই পাখির বাচ্চা বাসা ছেড়ে উঁড়ে যায়।
বিশ্বে ১১৭ প্রজাতির বাবুই পাখির দেখা মিললেও বাংলাদেশে দেশী, দাগি এবং বাংলাসহ মাত্র তিন প্রজাতির দেখা মেলে। এর মধ্যে আবার দাগি এবং বাংলা এ দুই প্রজাতির বাবুই পাখি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তবে দেশী বা বাংলা বাবুই এখনো দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে চোখে পড়ে।
স্থানীয়রা মনে করেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের বাহক বাবুই পাখির শৈল্পিক নিদর্শনের অস্তিত্ব রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বাবুই পাখির অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি ওই সকল পাখি শিকারিদের আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান তারা।
নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা মমতাজ বলেন, ‘সচেতনতা ছাড়া পাখি তথা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সম্ভব নয়। তাই সম্মিলিতভাবে নিজ নিজ এলাকায় সে ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা